মঙ্গলবার থেকে শুরু সিডনি টেস্টকে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে ‘পিঙ্ক টেস্ট’ বলে। গোলাপি স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ম্যাকগ্রা ফাউন্ডেশনের নিজস্ব রং। সিডনি ক্রিকেট মাঠে তাই অনুশীলনের ফাঁকে দু’দলই এ দিন গোলাপি টুপি পরে ফাউন্ডেশনের জন্য পোজ দিল। গোটা মাঠ জুড়ে অবিশ্রান্ত ছোটাছুটির মধ্যেগ্লেন ম্যাকগ্রা কোনও রকমে মিনিট দশেক বার করলেন একান্ত সাক্ষাৎকারের জন্য। সেটাও হল স্টেডিয়ামের এক প্রান্ত থেকে তাঁর সঙ্গে তীব্র গতিতে হাঁটতে হাঁটতে...
প্রশ্ন: লারা নন। সচিন নন। আপনার এখনকার প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। ব্রেস্ট ক্যান্সার।
ম্যাকগ্রা: জানি। লড়ে যাচ্ছি প্রাণপণ।
প্র: ঠিক কী করে আপনার ফাউন্ডেশন?
ম্যাকগ্রা: আমরা ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে সচেতনামূলক কাজকর্ম করে যাচ্ছি। আমাদের অধীনে এখন ৭৩ জন শিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স রয়েছে। এদের আমরা আক্রান্ত রুগিদের কাছে পাঠাই। তাদের ঠিকঠাক ফলো আপের ব্যবস্থা করি। বিশাল কর্মকাণ্ড এইটুকু করতেই।
প্র: কত টাকা তুলেছেন আজ পর্যন্ত?
ম্যাকগ্রা: দশ কোটি টাকার কাছাকাছি। আরও তোলার অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্লেয়াররা খুব সাহায্য করছে।
প্র: আপনার প্রিয় বন্ধুরা! স্টিভ ওয় বা শেন ওয়ার্ন?
ম্যাকগ্রা: ওদের নিজস্ব চ্যারিটি ফাউন্ডেশন আছে। শেন ওয়ার্ন ফাউন্ডেশন। স্টিভ ওয় ফাউন্ডেশন। বেচারিদের তার জন্য টাকা তুলতে হয়। তবু তারই ফাঁকে যখন ডেকেছি, ওরা এসেছে। ক্রিকেটারদের কাছে আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ।
প্র: কলকাতায় এখনও ক্রিকেটভক্তরা আলোচনা করে, স্টিভ ওয়-র বাড়িতে আগুন লাগার পর আপনি মুখোশ পরে সাত ঘণ্টা ধরে সে আগুন নিভিয়েছিলেন। ক্রিকেটসাহিত্যেও মাঠের বন্ধুর জন্য জীবনে এমন ভালবাসার নিদর্শন নেই।
ম্যাকগ্রা: আরে না না। আমি স্রেফ মুখোশ পরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিছুই করিনি তেমন। ধোঁয়াটা প্রচণ্ড প্রবলেম করছিল। ওটা সামলে স্রেফ দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার কন্ট্রিবিউশন বলতে তো এই। |
প্র: ইমরান যেমন ক্যান্সার রুগিদের জন্য হাসপাতাল করেছেন, তেমন কিছু করার ভাবনা নেই?
ম্যাকগ্রা: করা গেলে তো খুবই ভাল। তবে এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছাইনি।
প্র: ইমরান অবসর নিতে নিতেও দেরি করেছিলেন। এই ভেবে যে, লাইম লাইটে থাকলে হাসপাতালের জন্য টাকা তোলাটা সহজতর হয়। আপনি কেন পুরো ক্রিকেট ছেড়ে দিলেন? অস্ট্রেলিয়ায় এখন যে আইপিএলের ঢঙে বিগ ব্যাশ হচ্ছে তাতে তো সহজেই খেলতে পারতেন।
ম্যাকগ্রা: পারতাম। কিন্তু ইচ্ছে করেনি। আমার ভেতর থেকে ক্রিকেট খেলার শখটা আসলে মরে গেছে। অবসর জীবন নিয়ে আমি খুব খুশি।
এখন এত কিছু করি। ফাউন্ডেশনের কাজ আছে। কর্পোরেট বক্তৃতা দিই। মাঝেমধ্যে লেখালিখি করি। প্লেয়িং লাইফেও আমি এত ব্যস্ত ছিলাম না! হাঃ।
প্র: আপনি বারো-তেরো বছরের এত সফল কেরিয়ারে হাঁপিয়ে গেলেন। সচিনকে তা হলে কী বলবেন?
ম্যাকগ্রা: সচিন অবিশ্বাস্য। ওর সেঞ্চুরির কথা সবাই বলছে। অসাধারণ রেকর্ড হবে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে বিস্ময়কর হল বাইশ বছর খেলার পরেও ওর এতটা খিদে থাকা। আর একই ফর্ম রেখে যেতে পারা। ভাবলে অলৌকিক লাগে।
প্র: এ বারের সিরিজে যে নতুন বোলাররা ভারতকে শেষ করে দিল, তাদের মধ্যে কেউ আপনার সাক্ষাৎ শিষ্যটিষ্য আছে?
ম্যাকগ্রা: না না। বরং আমার এখন যাকে সবচেয়ে ভাল লাগছে সেই জেমস প্যাটিনসনকে আমি চিনিই না। কিন্তু দেখা হলে কথা বলার ইচ্ছে রইল।
প্র: মেলবোর্নে ভারতের অবস্থা এ রকম হল কেন?
ম্যাকগ্রা: ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যে ধরনের উইকেটে খেলে অভ্যস্ত সেটা সম্পূর্ণ আলাদা। ওখানে হিটিং থ্রু দ্য লাইন খুব চলে। ব্যাটসম্যান দিব্যি বড় রান করে দেবে। অস্ট্রেলিয়ায় হবে না। এখানে বাউন্স বেশি। সাইড ওয়াইজ মুভমেন্ট বেশি। ওদের মানাতে অসুবিধে হয়।
প্র: সবাই বলছে সিডনিতেই সচিনের সেঞ্চুরি। আপনার ঘরের মাঠেই।
ম্যাকগ্রা: চাইব অন্তত এখানে যেন না হয় (হাসি)।
প্র: সিরিজে কী হবে মনে হচ্ছে?
ম্যাকগ্রা: টেস্ট ম্যাচ জেতায় বোলাররা। চিরকাল তাই হয়ে এসেছে। অস্ট্রেলিয়ার বোলিং যথেষ্ট ভাল। পেস অ্যাটাকটা আমার মনের মতো। তাই আমার বাজি ভারত নয়। |