অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে
খুলল না দরজা, পথেই অপেক্ষায় সচিন-ধোনিরা
ডানকান ফ্লেচারের ভারতীয় দলে ঠিক কী ভূমিকা, তা নিয়ে ইঙ্গ-অস্ট্রেলীয় মিডিয়া ভীষণ কৌতূহলী। ডানকান-কে পছন্দ করেন এমন মানুষ মিডিয়াকুলে যদি থেকেও থাকেন, তা হলে এত দুষ্প্রাপ্য যে আজও সামনে আসেননি। বছরের প্রথম দিনেও সিডনি ক্রিকেট মাঠে দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকেরা আলোচনা করছিলেন, সচিনকে থ্রো-ডাউন প্র্যাক্টিস দিতে পারে না। টিম কোন মডেলে খেলবে, ঠিক করার অধিকার নেই। তা হলে ডানকান ফ্লেচারের ভারতীয় দলে ভূমিকাটা কী? আছে কেন?
সিডনির বিখ্যাত কিরিবিলি হাউসের বাইরে রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের যে অতি ক্ষুদ্র অংশটা দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁরা অবশ্য ফ্লেচারকে একটা ব্যাপারে নেতৃত্ব দিতে দেখলেন। উত্তেজিত ভাবে টিমকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন, “বয়েজ সব, বাসে ঢোকো।” ভারতীয় কোচের উষ্মার কারণ, অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তাঁর বাসভবনে দেখা করতে এসেও তাঁরা ঢুকতে পারছেন না। গেটরক্ষী দুঃখপ্রকাশ করে বলছেন, তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ের মিনিটদশেক আগে এসে পড়েছেন। ভেতর থেকে অর্ডার না এলে তাঁরা ঢুকতে দিতে পারবেন না।
বন্ধ দরজার সামনে প্রতীক্ষায় ধোনি। রবিবার গৌতম ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
সাধারণত ক্রিকেটবিশ্বের দস্তুর হল, ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য রাষ্ট্রনায়ক পর্যায়েও লাল কার্পেট অভ্যর্থনার ব্যবস্থা থাকে। টিমে সচিন তেন্ডুলকর থাকলে তো কথাই নেই। নেলসন ম্যান্ডেলা থেকে পারভেজ মুশারফ সবাই প্রথমে সচিনকে খোঁজেন। এখানেই প্রথম ঘটনা, যেখানে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ফুটপাথের ওপর কোট-টোট পরে তেন্ডুলকর-সহ টিম দাঁড়িয়ে রয়েছে। রক্ষীরা দরজা খুলছেন না। অথচ অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের যে ক্যামেরাম্যান ছবি তুলবেন ইভেন্টের, তাঁকে ঢুকিয়ে নেওয়া হয়েছে। রাগ এতে আরও বাড়ে।
পরে উত্তেজনা অনেক প্রশমিত হয়। বিকেলের দিকে ভারতীয় টিম ম্যানেজার শিবলাল যাদব আনন্দবাজারকে বললেন, “এটাকে কোনও বড় ব্যাপার হিসেবে দেখছি না। হতেই পারে।” কিন্তু পরে যখন তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ঢুকলেন, কেউ কি বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য দুঃখপ্রকাশ-টকাশ করেছিল? মহেন্দ্র সিংহ ধোনি বললেন, “না। করেনি।” ধোনির কথা শুনে মনে হল তাঁর জ্বালা তখনও জুড়োয়নি।
ভেতরে প্রধানমন্ত্রীর সামনে তাঁর বক্তৃতায় সবাইকে আশ্চর্য করে ভারত অধিনায়ক বললেন, “আমাদের সাপোর্ট স্টাফরাও এখানে আসতে পারলে ওদের খুব ভাল লাগত।” হাবেভাবে বুঝিয়ে দেন, সাপোর্ট স্টাফদের আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। ভারতীয় ক্রিকেটারদের কারও স্ত্রী, পরিবারকেও অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। অথচ অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারেরা অনেকেই কিন্তু স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন। সাপোর্ট স্টাফ বলতে কি ধোনি প্রকারান্তরে স্ত্রীদেরও বোঝালেন? তাঁর বক্তব্য শুনে কারও কারও মনে হচ্ছে, অপমানিত হওয়ার ঝালটাই তিনি এ ভাবে মেটালেন না তো?
রীতিমতো অভূতপূর্ব! কথা ছিল দুপুর দু’টোর সময় দুই টিম অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ডের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে যাবে। অফিসিয়াল অনুষ্ঠান। আরও কিছু অভ্যাগতও ছিলেন। চ্যানেল নাইন টিভি বিশেষজ্ঞ। নামী ভারতীয় শিল্পপতি। ভারতীয় টিম বাস এসে দাঁড়ায় ১.৫০টা নাগাদ। একে একে নেমে আসেন সবাই। কিন্তু জড়ো হয়ে তাঁদের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ভারতীয় ক্রিকেটাররা অবাক হয়ে আবিষ্কার করেন, তাঁদের কমপক্ষে আরও সাত মিনিট দাঁড়াতে হবে। ঠিক যে সময়টা গেট খোলার কথা, তার আগে খোলা যাবে না। ফ্লেচার নামেন বাস থেকে পরের দিকে। সচিনদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি গেটরক্ষীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। প্রত্যাখ্যাত হয়ে গোটা টিমকে আদেশ করেন বাসে চলে আসতে। প্লেয়াররা হতবুদ্ধি হয়ে যান। বুঝতে পারেন না কী করবেন? মিনিট পাঁচেক অপেক্ষার পর তাঁরা বাসে ঢুকে যান। সচিনও এঁদের পিছন পিছন বাসে ফেরত চলে যান। ফ্লেচার যেমন রেগে গিয়েছিলেন তাতে অ্যাসেজ সিরিজে খেলতে আসা ইংল্যান্ড হলে হয়তো বাস নিয়ে চলে যেত। বাইরে তখন ভারতীয় ‘প্রিন্ট মিডিয়া’ বলতে একমাত্র আনন্দবাজার। ইলেকট্রনিক চ্যানেলও মাত্র দু’টো। পুরো সংবাদমাধ্যম থাকলে বিতর্ক আরও বেড়ে যেত।
অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ডের সঙ্গে দুই অধিনায়ক। ছবি: পিটিআই
ভারতীয় ক্রিকেটাররাও এখানে প্রকাশ্যে কেউ অসন্তুষ্টি দেখাননি। ধোনি তো অন্যরা বাসে উঠে যাওয়ার পরেও একা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরও কিছু ক্ষণ। এটা খুব আশ্চর্যের যে, ধোনি স্বয়ং বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দেখেও রক্ষীরা কোনও তৎপরতা দেখাননি। শেষমেশ দু’টো নাগাদ ভারতীয় দলকে ঢুকিয়ে নেওয়া হয়। অস্ট্রেলিয়া তখনও আসেনি। তারা আসে মিনিট কুড়ি বাদে। এ সময় সংশ্লিষ্ট মহলে গজগজ শোনা যেতে থাকে, ভারতকে যদি আগে আসার জন্য দাঁড়াতে হয়, তা হলে দেরিতে আসার জন্য অস্ট্রেলিয়াই বা কেন বাধাপ্রাপ্ত হবে না? কিন্তু সে আর কে শুনবে!
নদীর ধারে মহিলা অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। কাজের জন্য অবশ্য তাঁকে ক্যানবেরাতে বেশি সময় কাটাতে হয়। আর পাঁচ জন অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীর মতোই ক্রিকেটে প্রচুর উৎসাহ। আনন্দবাজারকে জানালেন, সিরিজে কী হচ্ছে, খেয়াল রাখছেন। আর দুই দলকে উদ্দেশ্য করে নিজের স্বাগত বক্তৃতায় বললেন, “অস্ট্রেলিয়ায় পার্লামেন্ট বা সামরিক বাহিনী গঠনের চেয়েও প্রাচীন হল ক্রিকেট টিমের গোড়াপত্তন। আমি জানি, বেঁটেখাটো একটা লোকের সেঞ্চুরির জন্য গোটা অস্ট্রেলিয়াও অধীর আগ্রহে বসে রয়েছে। সে দিন মানুকা ওভালে ও যে সেঞ্চুরি করতে চায়নি (ক্যানবেরায় প্রধানমন্ত্রী একাদশের বিপক্ষে সচিন অবসর নেন ৯২ নট আউটে) তা এখানে করবে বলেই।” তুমুল হাততালি হল। এর পর মাইকেল ক্লার্ক বললেন, “আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সামান্য সংশোধন চাইছি। সচিন সেঞ্চুরি করবে তো নিশ্চয়ই। করবে এই সিরিজের শেষে।” তুমুল হাততালি আবার। পরে প্রধানমন্ত্রী শততম সেঞ্চুরির জন্য সচিনকে ব্যক্তিগত ভাবে আগাম শুভেচ্ছাও জানালেন। জেমস প্যাটিনসনকে যেমন আলাদা করে উল্লেখ করলেন।
মাইকেল ক্লার্ক তাঁর জার্সিতে কয়েক জন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারকে দিয়ে সই করিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিলেন। বললেন, “আমাদের অনেক ‘প্যাশন’ মিশে রয়েছে এর সঙ্গে।” ভারতের পক্ষ থেকে কোনও উপহার দেওয়া হল না। প্রবেশজনিত বিতর্কের এতে কোনও ভূমিকা নেই। টিট ফর ট্যাট নয়। টিম এমনিতেও সঙ্গে কিছু নিয়ে আসেনি।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.