|
|
|
|
নিমেষে উধাও পিঠে, আবারও মেলার দাবি |
কিংশুক আইচ • মেদিনীপুর |
জমেও জমল না মেদিনীপুরে ডিসেম্বর-সংক্রান্তির পিঠেমেলা।
শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ চত্বরে যে মেলা চলার কথা ছিল বিকেল তিনটে থেকে রাত আটটা পর্যন্ত, তা শেষ হয়ে গেল নিমেষে। মাত্র ২৫ মিনিটেই। উদ্যোক্তাদের হিসেবে এই সময়ের মধ্যেই মেলায় আনা ১৫ রকমের প্রায় ৫০০০ পিঠের সব শেষ।
সাড়ে তিনটের সময়ে যখন জেলা পরিষদের গেটে জনস্রোত, মেলা তখন পিঠে-শূন্য! ব্যাগ, টিফিন কৌটো আর অকৃত্রিম নোলা নিয়ে পিঠে-রসিকরা মেলা-চত্বরে ঢুকেই মাইকে শুনতে পেলেন উদ্যোক্তাদের ক্ষমা-প্রার্থনা: আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত, এত সাড়া পাব ভাবতে পারিনি। আমাদের সব স্টলের সব পিঠেই নিঃশেষিত’। ক্ষুব্ধ পিঠে-রসিকরা দাবি তুললেন--আবার পৌষ-সংক্রান্তির দিনে মেলা করুন। পিঠেমেলা নিয়ে যে এমন সাড়া মিলবে, যাকে উন্মাদনা বলাই ভাল, তা ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেননি উদ্যোক্তারা। ফলে, যা হবার তাই, গুছিয়ে বসতে না বসতেই মেলা শেষ। মিনিট পঁচিশের মেলায় আগেভাগে এসে পড়া লোকজনই ‘সিকন্দর’। জেলা এবং জেলার বাইরের হরেক রকম পিঠের স্বাদ পেলেন তাঁরাই। চাউমিনের মতো দেখতে, মিষ্টি-সাদা রসে জড়ানো বাবুইঝাঁকা পিঠে, আদতে নাকি কেশপুর এলাকার। |
|
ব্যস্ত খুদে। পিঠে-পুলি উৎসবে ছবিটি তুলেছেন কিংশুক আইচ। |
মেলার ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে সহর্ষে মুখে পুড়ছিল ছোট সায়ন্তনী বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবা-মার সঙ্গে খড়্গপুর থেকে আগেভাগেই এসে পড়েছিল মেলায়। কিনেছে সবংয়ের আলুপুরিও। ওর মা, ঈশিতার বাড়িতে পিঠে বানানোর শখ। তবে মেলায় আসার আগে এত রকম পিঠের নাম শোনেননি। ভিড়ের মধ্যেই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন যদি সে-সব পিঠের রেসিপি জানা যায়! হলদিয়ার পোড়াপিঠে থেকে এগরার সাতপুলি। বাঁকুড়ার আসকা বা বর্ধমানের কোটপুলির নামই বা ক’জন শুনেছেন! মুগপুলি যে এই মেদিনীপুর শহরেরই নিজস্ব ঘরানা--তা-ও জানতেন না অনেকেই। এ সবের পাশে পরিচিত দুধপুলি, পাঠিসাপটা, সরুচাকলি তো ছিলই। শিক্ষিকা মালা দাস অনেক কষ্টে গোকুল-পিঠে কিনতে পেরেছেন। পিঠে তৈরির শখ থাকলেও হাতে সময় কম। মেলায় এসেই তাই রসনা-তৃপ্তির চেষ্টা। হারিয়ে যেতে বসা বাঙালির রসনা-ঐতিহ্যকে ফিরে পেতেই আয়োজন হয়েছিল পিঠেমেলার। রাঙামাটি থেকে এসেছিলেন পড়িয়া পরিবার। মলয়, কৃষ্ণা আর ছোট মেয়ে রাজনন্দিনী। অনেক লড়াই করে এক প্লেট সরুচাকলি কিনতে পেরেছিলেন। কী আর করা যাবে! সঙ্গী রামকৃষ্ণ ঘোষের সঙ্গে তাই ভাগ করে খেলেন তিন জনে।
সবার সেটুকু সুযোগও হয়নি। যেমন মেদিনীপুরেরই মধুসূদন দে। বেশ বড়ো একটা ব্যাগ নিয়ে বিস্তর ঘোরাঘুরি করেছেন। কিন্তু আত্মীয়-বন্ধুদের জন্য কিনে নিয়ে যেতে পারেননি কিছুই। পেশায় শিক্ষক অমিতাভ দণ্ডপাট দুই মেয়ে, স্ত্রী আর মাকে নিয়ে বছরের শেষ দিনে পিঠে চেখে দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছিল। অতৃপ্তি নিয়েই ফিরতে হয়েছে।
অনুতপ্ত উদ্যোক্তারাও। তাঁদের অন্যতম কমলেশ নন্দ-র স্বীকারোক্তি, “প্রায় পাঁচ হাজার পিঠে আধ ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, তা আন্দাজ করতেই পারিনি।” এর মধ্যেই অবশ্য একটা অন্য রকম তৃপ্তিও খুঁজে পেয়েছেন কমলেশরা। তাঁর কথায়, “২৫ মিনিটেই সব পিঠে উধাও হওয়া থেকেই বোঝা যায়, চিরকালীন পিঠে-পুলির টান সহজে হারানোর নয়।” একই বক্তব্য লোকসংস্কৃতির গবেষক চিন্ময় দাসেরও। পিঠে কেনাবেচা ছাড়াও আয়োজন ছিল পিঠে তৈরির প্রতিযোগিতারও। বাহারি পাটিসাপটা বানিয়ে প্রথম হলেন সুনীতা ঘোষ। দ্বিতীয় নিশা কুণ্ডু, আর তৃতীয় ছবি দাস দু’জনেই বানিয়েছিলেন দুধপুলি। এমন স্বাদ-রসের মেলা ফুরোল আচম্বিতেই। দাবি রয়ে গেল আর একটা মেলা আয়োজনের। |
|
|
|
|
|