রাত জেগে মাতলামি ও হুল্লোড় নয়, ইংরেজি নববর্ষ পালন মানেই। বাংলা সংস্কৃতির ধারা অব্যাহত রেখেও যে অন্য ভাবে এই উৎসব পালন করা যায়, তা প্রমাণ করে দিল শিলচরের দুই সংস্থা। ‘সমকাল’ ও ‘স্বরলিপি’ নামে দুই সাংস্কৃতিক সংগঠন যৌথ ভাবে আয়োজন করেছে ‘গানের মেলা’র। বর্ষশেষের দিনে কাল সকাল দশটায় অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। চলে রাত দশটা পর্যন্ত। আজ নববর্ষের প্রথম দিনেও টানা ১২ ঘণ্টা ধরে চলল এই মেলা। এমন রম্য অনুষ্ঠান এক ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা উপহার দিল শিলচরবাসীকে।
গানের মেলার যুগ্ম আহ্বায়ক গৌরা চক্রবর্তী ও অরুন্ধতী দত্তরায় জানান, সুস্থ সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতার জন্যই শুধু বাংলা গানে দু’দিনের এই অনুষ্ঠান। রাগশ্রী, নিধুবাবুর টপ্পা, মালশ্রী থেকে শুরু করে লোকসঙ্গীতের বিভিন্ন আঙ্গিক, রবীন্দ্র-নজরুল-দ্বিজেন্দ্র-অতুলপ্রসাদ, শ্যামাসংগীত, আধুনিক সব ধরনের গানই পরিবেশিত হল গানের মেলায়। রাঢ় বঙ্গ থেকে আমন্ত্রণ করে আনা হয় বাউলদেরও। সব মিলিয়ে শ’ দুয়েক শিল্পী বিভিন্ন ধরনের গান পরিবেশন করেন এই আসরে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য এই মেলার উদ্বোধন করেন। তাঁর অভিমত, ৩১ ডিসেম্বর রাতে উৎসব পালনের নামে ইদানীং কালে যে সব জগঝম্প ও নাচগান হয়, তা আর সহ্য করা যায় না। ‘গানের মেলা’ এমন অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সুস্থ সংস্কৃতি তুলে ধরার সংগ্রামস্বরূপ। গুরুচরণ কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অমলেন্দু ভট্টাচার্য জানান, সভ্যতার আলো ছড়ানোর আগেই ভারতে সামগান হত। পৌরাণিক গানের কথাও সবাই জানেন। এমনকী আর্যদের কাছ থেকেও অনার্যরা সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করে। চর্যাপদও একেকটি গান। মনসামঙ্গলেরও একটি সাঙ্গীতিক ঐতিহ্য রয়েছে। বরাক উপত্যকায় রাজার আমল থেকে সংগীত রচনা হয়। সুরদর্পনারায়ণ থেকে গোবিন্দচন্দ্র পর্যন্ত সবাই গান লিখেছেন। বরাক সেই ঐতিহ্য ধরে রাখুক, এটাই কাম্য। গানের মেলা উপলক্ষে প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রেরও প্রদর্শনীর আয়োজন হয়। পুরাতন এই বাদ্যযন্ত্রগুলি আগ্রহভরে দেখেন মানুষ। করিমগঞ্জের অসিতবরণ দেব নিয়ে এসেছিলেন দেশ-বিদেশের মুদ্রা ও ডাকটিকিটের সম্ভার। সঙ্গে পার্থ শীলের আলোকচিত্র ও রথীন্দ্র চক্রবর্তীর শিল্পসামগ্রী প্রদর্শনী। |