দুই-চার নয়, একেবারে চল্লিশটি প্রকল্প। নববর্ষে কল্পতরু হয়ে রাজ্যবাসীর জন্য ৫০০০ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ ও বিস্তর নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। সেই সঙ্গেই বন্ধ ও অবরোধের পথ ছেড়ে জঙ্গি মনোভাবাপন্ন সংগঠনগুলিকে অসমের উন্নয়নে হাত মেলানোর আহ্বানও জানালেন তিনি।
রাজ্যে, বিশেষ করে গুয়াহাটির বহু খাস জমি যে সরকারি কর্মী ও পুলিশের ‘সৌজন্যে’ বেদখল হয়ে গিয়েছে তা মেনে নেন গগৈ। তিনি জানান, বেদখল হওয়া জমি জোর করে, পুলিশ পাঠিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই এ বছর নতুন ‘জমি বেদখল আইনকে (২০১০)’ কার্যকর করে তোলা হরে । সেই সঙ্গে ভূমিহীন কৃষক, দিনমজুর, শ্রমিকদের জন্যও বিশেষ প্রকল্প হাতে নেবে সরকার। ভূমিক্ষয়ে ভিটে ছাড়া পরিবারগুলিকে ৫০০০ টাকা ও দু’ বান্ডিল সিজিআই শিট দেওয়া হবে। ভূমিক্ষয় ও বন্যাপ্রবণ এলাকা, চর এলাকায় হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও খোলা হবে।
শিক্ষাক্ষেত্রে দেবকুমার বরা প্রকল্পের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম তিনের মধ্যে থাকা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হবে ‘নাসা’য়। মাধ্যমিকে ৫০ শতাংশ নম্বর পেলেই মিলবে কম্পিউটর। ষাট শতাংশ পেলে ল্যাপটপ। দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী দশম শ্রেণি অবধি সব ছাত্রীকে সকলকে বিনামূল্য সাইকেল দেওয়া হবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে রাজ্যের সব উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখার পঠনপাঠন শুরু হয়ে যাবে। হাজারটি স্কুলে শুরু হবে বৃত্তিমূলক শিক্ষা।
গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রামায়ণ চর্চার জন্য মামণি রয়সম গোস্বামীর নামে বিশেষ বিভাগ স্থাপিত হবে। রাজ্যের ছবি ও চলচ্চিত্র ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে ভূপেন হাজরিকা আর্কাইভ। সংস্কৃতি দফতর প্রতি জেলায় রবীন্দ্র ভবন ও প্রতি ব্লকে জ্যোতি-বিষ্ণু কলাকেন্দ্র গড়বে। রাজ্যে চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে মিনি সিনেমা হল গড়ার জন্য আগ্রহী ব্যক্তিদের বিশেষ সুবিধা ও ছাড় দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে, শিশুমৃত্যু এবং অপুষ্টি রোধে পৃথক কমিশন গড়া হবে। গুয়াহাটিতে সরকার ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে হবে প্রথম সুুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। সব মেডিক্যাল কলেজে ৫০ শয্যার ক্যান্সার চিকিৎসা বিভাগ খোলা হবে। অনূর্ধ্ব ১৪ শিশুদের চিকিৎসার জন্য ৫০ কোটি টাকার তহবিল গড়া হচ্ছে।
সরকারি বিভাগগুলিকে দুর্নীতিমুক্ত করা ও সরকারি পরিষেবার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলির দ্রুত ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমাধানের জন্য, নতুন ‘জনসেবা ও অভিযোগ দূরীকরণ আইন’ আনা হচ্ছে। পেনশন সংক্রান্ত সমস্যা মেটাতে গড়া হবে বিশেষ ‘পেনশন ট্রাইব্যুনাল’। গগৈ বলেন, “লোকায়ুক্তকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি, সরকারি সব বিভাগের কাজকর্মের বার্ষিক মূল্যায়ন করবে নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষ। বিভাগীয় মূল্যায়ন তো থাকছেই।”
প্রবীণ ও বিধবাদের জন্যও আনা হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প। হাতি-মানুষ সংঘাত কমাত বিশেষ কমিটি গড়বে বন দফতর।“ধান, পাট ও এই ধরনের শস্যের জন্য নূনতম ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা ও আরও বেশি গুদাম, হিমঘর গড়ে তোলার জন্য আমি নির্দেশ দিয়েছেন গগৈ। কৃষকদের ঋণের সুদ কমিয়ে ২ শতাংশ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে, চা, পাট, কলা, কমলা, পান বা বাঁশ চাষ ও কৃষিজাত উদ্যোগে স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রতিষ্ঠান পিছু ২৫ লক্ষ টাকা অবধি বিশেষ সাহায্য দিতে রাজি সরকার। |