প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় ইংরাজি বর্ষবরণের সুর-তাল কেটে গেল ঝাড়খণ্ডে। নতুন বছরের ভোর থেকেই ঘন-মেঘে ঢাকা পড়েছে সূর্য। সঙ্গে চলেছে অবিরাম ঝিরঝিরে বৃষ্টি। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ‘যোগ্য’ সঙ্গত করায় নতুন বছরের প্রথম দিনেই ভুগতে
হল রাজ্যবাসীকে।
দিনভর রাজধানী শহর রাঁচির পথঘাট ছিল ফাঁকা। উৎসবের আমেজ উধাও। শহরের বিভিন্ন ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে নিশ্চিন্তে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে ট্রাফিক পুলিশকে। স্মরণকালের মধ্যে পয়লা জানুয়ারির এমন আবহ দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না স্থানীয় প্রবীণ নাগরিকেরা। একই বক্তব্য রাঁচির আবহ দফতরের কর্তাদেরও। আবহাওয়া দফতরের হিসেবে আজ সকাল থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত রাঁচি শহরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ৬ মিলিমিটার। বেলা আড়াইটে পর্যন্ত ডালটনগঞ্জে ১৮.৮ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টি না-হলেও ভোর থেকে আকাশের মুখ ভার ইস্পাতনগরী জামশেদপুরের। |
আকাশের মুখ ভার। তারই মধ্যে বছরের প্রথম দিন জামশেদপুর জুবিলি পার্কে মানুষের ঢল। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী |
বরাবরই রাঁচিতে নববর্ষের অন্যতম আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্যস্থানের তালিকার শীর্ষে থাকে বিরসা মুন্ডা চিড়িয়াখানা। এই দিনটিতে মূলত স্থানীয় মানুষেরাই উৎসবের মেজাজে ভিড় জমান সেখানে। এ বার কিন্তু প্রকৃতিই বাধা হয়ে ওঠে তাঁদের কাছে। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা প্রিয়েশকুমার বর্মা বলেন, “গত বছর পয়লা জানুয়ারিতে এখানে আসা দর্শকের সংখ্যা ছিল ১০ হাজারেরও উপরে। এ বার দশর্কের সংখ্যা টেনেটুনে কিছু কম হাজার পাঁচেক।”
রাঁচি শহর ও তার সংলগ্ন এলাকায় বরাবরই নববর্ষের উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে সর্বস্তরের মানুষ ভিড় জমান কাঁকে জলাধার, রক গার্ডেন, রুক্কা এবং হাটিয়া জলাধারের আশপাশে। সেখানে পিকনিক করতে দলবেঁধে মানুষ আসেন দূরবর্তী এলাকা থেকেও। এ বার সেখানে পিকনিক পার্টির তেমন ভিড় হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। একই ভাবে রাঁচির দশম, হুড্রু ও জোনহা জলপ্রপাতের ধারেকাছেও এ বার জনস্রোতে ভাঁটার টান। রাঁচির আবহ দফতর থেকে জানানো হয়েছে, এই অবস্থা আরও প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে চলবে। মেঘ না-কাটতে ঠান্ডা বাড়ারও কোনও সম্ভাবনা নেই।
প্রকৃতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ দিন সকাল থেকেই রাজ্য জুড়ে চলেছে তীব্র বিদ্যুৎ বিভ্রাট। সন্ধ্যা অবধি চলেছে বিদ্যুতের মুহূর্মুহূ আসা-যাওয়া।
বিদ্যুৎ সরবরাহ না-থাকায় এ দিন রাঁচি শহরের বহু আবাসনে জলের পাম্প প্রায় চালানোই যায়নি। এর ফলে, জলকষ্টে ভুগতে হয়েছে বহু পরিবারকে। সরকারি সূত্রের জানানো হয়েছে, তেনুঘাট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় কোনও গোলমাল হয়নি। সরবরাহ লাইনে গোলযোগের কারণেই এই ভোগান্তি। বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করলেই লাইনে ‘ট্রিপ’ করছে। এ দিন ছুটির দিন থাকায় কর্মী সংখ্যা কম। তাই সরবরাহ লাইনের গোলমাল সারাতেও সমস্যা হচ্ছে। |