প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা
অণ্ণাদের বিঁধেও কংগ্রেসের নিশানা বিজেপিই
প্রত্যাশিত ভাবেই লোকপাল বিল পাশ না হওয়ায় কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানো শুরু করল অণ্ণা শিবির। শুরুটা হল একেবারে প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখানোর মধ্য দিয়ে। যদিও অণ্ণা শিবিরের একাংশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের কেউ এ কাজে জড়িত ছিল না। এই ঘটনার জন্য অণ্ণা শিবিরের সমালোচনা করলেও বিজেপি-ই ছিল আজ কংগ্রেসের আক্রমণের মূল নিশানা। ঘটনাচক্রে কালো পতাকা দেখানো নিয়ে বিতর্কের দিনেই শারীরিক অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে অণ্ণা হজারেকে।
আজ, বছরের প্রথম দিনে স্ত্রী গুরশরণ কৌরকে নিয়ে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে প্রার্থনা করতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তাঁরা মন্দিরে পৌঁছন সকাল সাড়ে ছ’টায়। গোটা মন্দির প্রাঙ্গণ পরিক্রমা করে মূল
হাসপাতালে অণ্ণা। নিজে
বলছেন, ‘সুস্থ আছি’।
মন্দিরে যান প্রার্থনা করার জন্য। সেখানে মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রীকে ‘শিরোপা’ উপহার দেওয়া হয়। মন্দিরে মিনিট ৪৫ কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রী যখন বেরিয়ে আসছেন, তখনই কালো পতাকা হাতে জনা ত্রিশেক ব্যক্তি তাঁর রাস্তা আটকানোর চেষ্টা করে। কঠোর লোকপাল বিলের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগানও দেওয়া হয় ভিড়ের মধ্যে থেকে। নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতায় অবশ্য বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঘেঁষতে পারেননি। পুলিশ তাদের হটিয়ে দেয়। এই ঘটনার কথা সংবাদমাধ্যমে প্রচার হতেই শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক চাপানউতোর। ঘোলা জলে ফায়দা নিতে নেমে পড়ে কংগ্রেস ও বিজেপি। অন্য দিকে কালো পতাকা দেখানো নিয়ে তরজা শুরু হয় খোদ অণ্ণা শিবিরেই। লোকপাল বিলের প্রশ্নে অণ্ণা শিবির যে তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রচারে যাবে, এটা প্রত্যাশিতই ছিল কংগ্রেসের কাছে। তাদের পাল্টা সমালোচনা করলেও কংগ্রেস আজ বেশি মুখর হয় বিজেপি-র বিরুদ্ধে। দিগ্বিজয় সিংহের মতো কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা প্রথম থেকেই অণ্ণার আন্দোলনের পিছনে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছেন। আজকের ঘটনার পর দলের মুখপাত্র রশিদ আলভি বলেন, “সংখ্যা থাকায় লোকসভায় সম্ভব হলেও, কেবল বিজেপি-র জন্যই লোকপাল বিল রাজ্যসভায় পাশ করা সম্ভব হয়নি। তাই অণ্ণা শিবিরের এখন বিজেপি নেতাদের কালো পতাকা দেখানো উচিত।”
স্বর্ণমন্দিরের ভিতরে। প্রার্থনা সস্ত্রীক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের। রবিবার।
আসন্ন বাজেট অধিবেশনে ওই বিলটি পাশ করানোর কথা বলছে কংগ্রেস। সেই অধিবেশন শুরুর আগেই পঞ্জাব ও উত্তরাখণ্ডে তো বটেই, উত্তপ্রদেশের সাত দফার মধ্যে অন্তত পাঁচটি পর্বের নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস এখন রাজ্যসভায় লোকপাল বিল পাশ না হওয়ার যাবতীয় দায় বিজেপি-র উপর চাপিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামতে চাইছে। আলভির বক্তব্যে আজ সেই ইঙ্গিতই মিলেছে।
পিছিয়ে নেই বিজেপি-ও। লোকপাল বিল নিয়ে কংগ্রেসের আক্রমণের অভিমুখ যে তাদের দিকেই থাকবে, সেটা মাথায় রেখেই একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছে বিজেপি। আজ দলের মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন বলেন, “৩ থেকে ১০ জানুয়ারি প্রত্যেক রাজ্যে জেলা স্তরে আন্দোলন চলবে।” রাজ্যসভায় লোকপাল বিল ‘পাশ না-করানোর লক্ষ্যে’ কংগ্রেস ও শরিক দলগুলি কী ভূমিকা নিয়েছিল, তা জনমানসে তুলে ধরাই লক্ষ্য বিজেপি নেতৃত্বের। তবে দলের পক্ষ থেকে সব রাজ্যে প্রচারের কথা বলা হলেও, যে পাঁচ রাজ্যে ভোট আসন্ন, মূলত সেগুলিতেই বিক্ষোভ কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে বিজেপি। মুম্বইয়ের অনশন মঞ্চ থেকেই অণ্ণা ঘোষণা করেছিলেন, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তাঁরা প্রচারে নামবেন। সেটা যে আজ প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখানোর মাধ্যমেই শুরু হয়ে যাবে, সে বিষয়ে অণ্ণা শিবিরের শীর্ষ নেতাদেরই স্পষ্ট কোনও ধারণা ছিল না। ফলে স্বর্ণমন্দিরের ঘটনার পরে অভিযোগের আঙুল উঠতে থাকলে শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়হীনতার ছবিটা আজ ফের প্রকট হয়ে পড়ে। এক দিকে ‘টিম অণ্ণা’-র সদস্য সাজিয়া ইলমি দাবি করেন, এর পিছনে অণ্ণা শিবিরের কোনও ভূমিকা নেই। তাঁর বক্তব্য, “এটি আসলে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ। সাধারণ মানুষ কড়া লোকপাল আইনের দাবি জানিয়ে আসছিল তা না পাওয়ায় বিক্ষোভের রূপ নিয়েছে।” কিরণ বেদী কিন্তু স্বীকার করে নেন, “বিক্ষোভের পিছনে ইন্ডিয়া এগেনস্ট কোরাপশন (আইএসি)-এর সদস্যরাই ছিলেন।” একদা অণ্ণা-ঘনিষ্ঠ সন্তোষ হেগড়ে আবার আন্দোলনের নামে প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখানোর বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, “এ ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখানো মোটেই শোভন নয়।”
স্বর্ণমন্দিরের বাইরে। প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখাচ্ছেন অণ্ণা-সমর্থকেরা।
শিবিরে এই তরজার মধ্যেই আজ শারীরিক অবস্থার বেশি অবনতি হওয়ায় পুণের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অণ্ণাকে। জ্বরের মধ্যে অনশন তুলে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কাল থেকে ফের শরীর খারাপ হতে শুরু করে তাঁর। অণ্ণার চিকিৎসক কে এইচ সনচেঠি আজ বলেন, “বুকে সংক্রমণ রয়েছে। ব্রঙ্কিয়াল সমস্যাও রয়েছে।” সাত দিন বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি অন্তত এক মাস অনশন-জাতীয় কোনও কর্মসূচি হাতে না নিতে অণ্ণাকে অনুরোধ করেছেন চিকিৎসকরা। এ দিন রাতে অণ্ণা নিজে অবশ্য এক বার্তায় জানান, “আমি সুস্থ আছি। আমার স্বাস্থ্য নিয়ে অহেতুক চিন্তা করার কারণ নেই।”
মুম্বই-পর্ব ব্যর্থ হওয়ার পরে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতে কাল ও পরশু অণ্ণার গ্রাম রালেগণ সিদ্ধিতে বৈঠকে বসার কথা ছিল অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কিরণ বেদীদের। অণ্ণা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় আপাতত অনিশ্চিত সেই বৈঠক।

ছবি: পি টি আই


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.