আকস্মিক দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় কলকাতার ঘিঞ্জি এলাকার বিপর্যয় মোকাবিলায় বিকল্প রাস্তা গড়তে বড় পরিকল্পনা নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে একটি পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি করবে রাজ্যের পুর দফতর।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, কলকাতা শহরের বহু এলাকা পরিকল্পনাবিহীন ভাবে তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ঘিঞ্জি এলাকায় জনবসতির পাশাপাশিই রয়েছে কারখানা, সঙ্গে নানা দাহ্য বস্তুর গুদাম। মাথার উপরে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে থাকে বিদ্যুতের তার। বড় অগ্নিকাণ্ডের মতো কোনও ঘটনা ঘটলে দমকলের পৌঁছনো বা মানুষকে উদ্ধার করা রীতিমতো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। উদাহরণ হিসেবে তিলজলার সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের কথা বলেছেন মমতা। শহরের কিছু কিছু এলাকার ক্ষেত্রে এই ধরনের বিপদের আশঙ্কা যে বেশি, উল্লেখ করেছেন তা-ও। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পুর-সচিবকে ওই ধরনের এলাকার জন্য বিকল্প নিরাপত্তা পরিকাঠামো গড়ার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রূপায়ণের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রবিবার পার্ক স্ট্রিটের এপিজে হাউসে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি সামনে আনেন।
বিশদ ব্যাখ্যা দিয়ে মমতা বলেন, “শহরের যে সব এলাকা পরিকল্পনাহীন ভাবে ঘিঞ্জি বসতিপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তাদের ক্ষেত্রে এই পরিকল্পনা করা হবে। তার মানে এই নয় যে, ওই এলাকা থেকে রাতারাতি কিছু ভেঙে ফেলা, সরিয়ে দেওয়া বা উচ্ছেদ করা হবে। মানুষকে রেখেই কী ভাবে বিকল্প পথ, উড়ালপুল বা ফুটব্রিজ বানানো যায়, তা খুঁজে বার করাই হবে এই পরিকল্পনার লক্ষ্য। এই ব্যবস্থা হলে যে কোনও ঘটনা-দুর্ঘটনায় দমকল পৌঁছতে পারবে। বিপর্যয় মোকাবিলার লোকজনদেরও কোনও অসুবিধা হবে না। বিপর্যস্ত মানুষকেও ওই পথ দিয়ে উদ্ধার করার কাজ সহজ হবে।” তিনি বলেন, “অবিলম্বে বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে এলাকা ধরে ধরে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা করার জন্য পুর-সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” শনিবার মুখ্যমন্ত্রী যখন এ বিষয়ে পুরসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসেন, তখন তাঁর মাথায় ছিল তিলজলা ও আমরি-র ঘটনা। রবিবার পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা শহরবাসীর সুরক্ষার ব্যাপারে তাঁকে আরও চিন্তিত করে।
বহুতলের সুরক্ষা নিয়েও এ দিন প্রোমোটার ও বাড়ির বাসিন্দাদের সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সবটাই তো সরকার করে দিতে পারে না। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বিকল্প রাস্তার বিষয়ে সচেতন ভাবে ভাবতে হবে বাড়ির নির্মাতা এবং বাসিন্দাদের। যাঁরা তিনতলা থেকে উপরের তলগুলিতে থাকেন, বহুতল থেকে বার হওয়ার পথ বানানোর বিষয়ে তাঁদেরকেই উদ্যোগী হতে হবে।” এ বিষয়ে রাজারহাট-সহ বেশ কয়েক জায়গায় ওই সব নিয়মনীতি মানা হয়নি বলে তিনি জানান।
নতুন বহুতলের ক্ষেত্রে মমতা বলেন, “এখন থেকে নকশা অনুমোদন করার সময়ে এই বিষয়গুলি কঠোর ভাবে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
এর পাশাপাশি, হকার সংক্রান্ত পুরনো নীতির উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী ফের জানিয়ে দিয়েছেন: উচ্ছেদ করে নয়, স্বীকৃত হকারদের নির্দিষ্ট বন্দোবস্ত করে নিয়ন্ত্রিত ভাবে বসাতে চায় এই সরকার। |