আগুন সামলে ফের উৎসবে ফিরল পার্ক স্ট্রিট
তুন বছরের প্রথম দিনে রেস্তোরাঁয় মধ্যাহ্নভোজের পালা তখন শুরু হব-হব করছে। রবিবার সকালে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এ নাটক দেখার পরে পার্ক স্ট্রিটে ঢুকেই থমকে দাঁড়াল জনা চারেকের দলটি। পাঁচতারা হোটেলের পাশ দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করছে সুদীর্ঘ মই লাগানো দমকলের গাড়ি। রাজপথের ধারে পুলিশকর্মীদের জটলা।
ঠিক এক দিন আগে বছরের শেষ দিনের দুপুরেও এ ভাবেই রুদ্ধশ্বাস কয়েক ঘণ্টা কাটিয়েছিল পার্ক স্ট্রিট। স্টিফেন কোর্টের নীচে একটি রেস্তোরাঁর অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র ফেটে বিস্ফোরণে ছুটির দিনের আয়েশি লাঞ্চটাই পণ্ড। রান্নাঘরের এক কর্মচারী গুরুতর জখম হওয়ায় রেস্তোরাঁটি আপাতত বন্ধ রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। ‘অঘটন’-এর এই ছায়া থেকে বেরিয়েই রাতের পার্ক স্ট্রিটে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে জড়ো হয়েছিল কলকাতা।
নতুন বছরের সকালেও বিপর্যয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে শহরের উৎসবের মেজাজটাকে অটুট রাখতে এগিয়ে এসেছে রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিবৃতি দিয়ে আমজনতাকে অযথা আতঙ্কিত না-হয়ে উৎসব উপভোগ করতে বলেছেন। পার্ক হোটেলের পিছনে এপিজে হাউস নামের অফিস-বাড়িটায় আগুন লাগলেও হোটেলের কর্মীদের তৎপরতা বছরের প্রথম দিনের উপভোগের মেজাজে জল ঢালতে দেয়নি। হোটেলের ভিতরে সুইমিং পুলের ধারে বসে পান-ভোজনের লাউঞ্জ ‘অ্যাকোয়া’র গা ঘেঁষেই এপিজে হাউজের অগ্নিগ্রস্ত তলটি। ধোঁয়া বাড়ছে দেখে হোটেল কর্মীরা দেরি করেননি। সঙ্গে-সঙ্গে অতিথিদের বিনীত ভাবে সরে আসতে বলা হয়। তাঁদের অন্যত্র বসানোর ব্যবস্থা করা হয়।
উৎসব-মুখর পার্ক স্ট্রিট। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
পার্ক হোটেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিজয় দিওয়ানের কথায়, “অতিথিরা যাতে অনর্থক চিন্তায় না-পড়েন, সে দিকে আমাদের নজর ছিল। নিরাপত্তা নিয়ে কোনও রকম ঝুঁকি নেব না বলেই অ্যাকোয়া বন্ধ রাখা হয়।” কাছেই একটি রেস্তোরাঁয় খেতে আসা যুবক, ব্যারাকপুরের শ্রীকুমার প্রামাণিক বলেন, “পার্ক স্ট্রিটে দমকলের গাড়ি দেখলেই স্টিফেন কোর্টের আতঙ্ক তাড়া করে। তবে কয়েক পা এগিয়ে সিডি-র দোকানের মুখটায় আইসক্রিম খেতে ভিড় দেখেই বুঝে যাই, তত বড় কিছু ঘটেনি। কলকাতার উৎসবের মেজাজটা অত সহজে হার মানবে না।”
হোটেলের পিছনেই আগুনের মোকাবিলায় দমকল ও হোটেলকর্মীরা ‘যুদ্ধ’ চালালেও ভিতরে অতিথিদের আপ্যায়ন তাতে এতটুকু টাল খায়নি। পার্কের ‘স্যাফ্রন’ রেস্তোরাঁয় এ দিন দুপুরেই একটি বিয়ের ‘আশীর্বাদ’ বা ‘এনগেজমেন্ট’ অনুষ্ঠান ছিল। বাইরে আগুনের সঙ্গে লড়াই চললেও সেই অনুষ্ঠানে একটুও ছন্দপতন ঘটেনি। ‘দ্য ব্রিজ’ বা ‘জেন’ রেস্তোরাঁতেও ছুটির দুপুরে ছিল স্বাভাবিক ভিড়।
প্রথমে আগুন-লাগা বহুতলটি পর্যন্ত পৌঁছতে দমকলের মই বসানো গাড়ি পার্ক স্ট্রিটের মাথায় আলোর সাজের তারে আটকে গিয়েছিল। কসরত করে সেটি ভিতরে ঢোকে। আগুন ততটা না-ছড়ালেও ধোঁয়া বাড়ছিল। পার্ক হোটেলের নীচে ‘ট্রিঙ্কাজ’-এর ভিতরে ঝলমলে মেজাজ অবশ্য তাতেও অটুট। উল্টো দিকের ফুটপাথে ‘ফ্লুরিজ’-এ মধ্যাহ্নভোজ সারতে সারতেও লোকে এপিজে হাউজ-এর আগুন নিয়েই আলোচনা করেছে।
শেষটায় বিপদ ততটা না বাড়ায় গোটা কলকাতাই অবশ্য স্বস্তির শ্বাস ফেলেছে। সন্ধ্যা নামতেই আলোর সাজে ফের পার্ক স্ট্রিটের সেই চেনা চেহারা। বিপর্যয়ের কালো ছায়া সরিয়ে বছরের প্রথম দিনে কলকাতা এ বারও পার্ক স্ট্রিটের প্রতি ‘আনুগত্যে’ অটুট থেকেছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.