রুপোলি রেখাও আছে নতুন বছরে
যে-বছরগুলি লগ্নিকারীরা ভুলে যেতে চাইবেন. তার মধ্যে ২০১১ অবশ্যই উপরের দিকে থাকবে।
এই বছর সেনসেক্স ও নিফ্টি দুই সূচকই খুইয়েছে ২৪ শতাংশেরও বেশি পয়েন্ট। ২০১০-এর ৩০ ডিসেম্বর এই দুই সূচকের অবস্থান ছিল যথাক্রমে ২০,৩৮৯ এবং ৬,১০১ অঙ্কে। গত এক বছরে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির নিট লগ্নির পরিমাণ ছিল মাত্র ৪০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের (২৯০০ কোটি ডলার) তুলনায় যৎসামান্য। এই পরিসংখ্যান থেকেই ভারতীয় বাজারের দুর্বলতার মূল কারণ ধরা পড়ে।
এক দিকে মার্কিন এবং ইউরোপীয় আর্থিক সঙ্কট এবং অন্য দিকে, ভারতে জিনিসপত্রের চড়া দাম ও সুদ বৃদ্ধি এবং উৎপাদন বাড়ার গতি শ্লথ হয়ে আসার কারণেই বিদেশি লগ্নি ক্ষীণ হয়ে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০০৮-এর বিশ্ব-মন্দা ভারত যে ভাবে সামাল দিয়েছিল, এ বার কিন্তু ভারতীয় অর্থনীতি সেই শক্তি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একনাগাড়ে সুদ বাড়িয়ে যাওয়ায় কমে এসেছে শিল্পোৎপাদন। বাড়ি এবং গাড়ি ঋ
ণের উপর সুদ বাড়ায় কমেছে চাহিদা। আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে সংশ্লিষ্ট অনেক শিল্প। বাজার একনাগাড়ে খারাপ থাকায় সরকারও বিলগ্নিকরণের পথে এখনও সংগ্রহ করতে পারেনি অভীষ্ট ৪০,০০০ কোটি টাকা। পড়েই চলেছে ডলারের তুলনায় ভারতীয় টাকার দামও।
প্রতিকূল পরিবেশ এখন সর্বত্র। বিরোধী দল এবং সহযোগীদের সমর্থন না-পাওয়ায় থমকে গিয়েছে আর্থিক সংস্কার। সংসদে পেশ করেও সরকার ব্যর্থ হয়েছে বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় সরাসরি বিদেশি লগ্নির প্রস্তাব এবং নতুন কোম্পানি বিল পাশ করাতে। একই দশা বহু বিতর্কিত লোকপালের। এই অবস্থায় সরকারের কাছ থেকে দৃঢ় আর্থিক পদক্ষেপ আশা করা যায় না।
অতি দুর্বল বাজারেও কয়েকটি শেয়ার কিন্তু শক্তি দেখাতে সক্ষম হয়েছে ২০১১ সালে। হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের দাম বেড়েছে ৩২%। আর একটি এফ এম সি জি কোম্পানি আইটিসি-র শেয়ার বেড়েছে প্রায় ১৬%। বেড়েছে কয়েকটি সিমেন্ট শেয়ারও। ৭ থেকে ৯% বেড়েছে অম্বুজা সিমেন্ট, এসিসি এবং গ্রাসিম। মিডক্যাপ শেয়ারের মধ্যে বেড়েছে অ্যামটেক ইন্ডিয়া, ইউ টি ভি, আলফা ল্যাভেল, ভি এস টি ইত্যাদি।
লোকসানের তালিকায় শীর্ষে থাকবে অনিল অম্বানী গোষ্ঠীর একগুচ্ছ শেয়ার। ভাল রকম পতন হয়েছে টাটা স্টিল, সেল, স্টেট ব্যাঙ্ক, রিল্যায়ান্স, এল অ্যান্ড টি-সহ বহু নামী শেয়ারের।
এ বার তাকানো যাক নতুন বছরের দিকে। ২০১২-তে বাজার নিয়ে বড় আশা খুব একটা কেউ করছেন না। মার্কিন অর্থনীতি খানিকটা ঘুরে দাঁড়ালেও ইউরোপ শোধরাতে কিন্তু সময় নেবে। ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রাণ না-ফিরলে বিদেশি লগ্নি ভারতমুখী হবে না। ডলার প্রবাহ না-থাকলে বাজারের পক্ষে চাঙ্গা থাকা শক্ত। আশার কথা একটাই। মূল্যবৃদ্ধি অবশেষে কমতে শুরু করেছে। অর্থাৎ সুদও কমবে আশা করা যায়। সুদ কমতে শুরু করলে তা উজ্জীবিত করবে শিল্পকে এবং উদ্দীপনা প্রবাহিত হবে শেয়ার বাজারে।
২০১১-’১২ বছরটি কিন্তু বেশ ভাল করদাতাদের কাছে। পি পি এফ অ্যাকাউন্টে জমার ঊর্ধ্বসীমা ৩০ হাজার টাকা বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ টাকা। সুদও বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮.৬ শতাংশ। অন্য দিকে, বাজারে এসে গিয়েছে করমুক্ত বন্ড। ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি এবং পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশন ১০ এবং ১৫ বছর মেয়াদি বন্ডে করমুক্ত সুদ দিচ্ছে যথাক্রমে ৮.২ এবং ৮.৩ শতাংশ হারে। ৩০ এবং ২০ শতাংশ করের আওতায় পড়েন এমন মানুষের কাছে এই সুদ যথেষ্ট আকর্ষণীয়। এই বন্ড নথিবদ্ধ হবে মুম্বই শেয়ার বাজারে। অর্থাৎ প্রয়োজনে এগুলি বিক্রিও করা যাবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমালে সম্ভাবনা থাকবে এই বন্ডের বাজার দর বেড়ে ওঠার। অর্থাৎ কপালে জুটতে পারে মূলধনী লাভও। সুতরাং নতুন বছরে করদাতারা এই বন্ডকে বেছে নিতে পারেন অন্যতম লগ্নির জায়গা হিসাবে।
ব্যাঙ্ক আমানতে সুদ এখন সর্বোচ্চ। সুদ কমার প্রবণতা হয়তো দেখা দেবে শীঘ্রই। অর্থাৎ যদি ব্যাঙ্কে টাকা রাখতেই হয়, তবে দেরি না-করাই ভাল।
সুদ কমতে শুরু করলে শেয়ার বাজার মন্দা কাটিয়ে উঠবে বলে আশা। এ কথা মাথায় রেখে এস আই পি পদ্ধতিতে এখন থেকেই লার্জ ক্যাপ শেয়ারে লগ্নি শুরু করা যেতে পারে। বিনিয়োগ করা যেতে পারে বন্ড ফান্ডেও। বাজারে সুদের হার কমতে শুরু করলে ঊর্ধ্বমুখী হবে সরকারি ও বেসরকারি বন্ডের দাম।
বিরাট আশার আলো দেখা না-গেলেও ২০১২ সালটা ২০১১-র মতো এতটা খারাপ হবে না-বলেই মনে করছেন বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ। নতুন বছরে আমরাও তাই আশা করব, একটি অতিরিক্ত দিনের মতো লিপ-ইয়ারে আমরা অতিরিক্ত কিছু চাই। শুভেচ্ছা রইল সবার জন্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.