|
|
|
|
|
ন্যানোর রাজ্যে শিল্পায়ন
বুঝতে বিধায়কদের কমিটি
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
শিল্পায়নের হাল-হকিকত বুঝতে গুজরাত পাড়ি দিচ্ছে রাজ্য বিধানসভার শিল্প ও বাণিজ্য সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি। জমিরক্ষার আন্দোলনের জেরে যে রাজ্যের সানন্দে পাড়ি দিয়েছে সিঙ্গুরের ন্যানো কারখানা!
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, গুজরাতে গিয়ে যে সব শিল্প-প্রকল্প ওই স্থায়ী কমিটি সরেজমিনে দেখতে চায়, তার তালিকায় সানন্দে টাটার ন্যানো কারখানাও আছে। তবে শেষ পর্যন্ত স্থায়ী কমিটির প্রতিনিধিরা ন্যানো কারখানা দেখতে যাবেন কি না, তা চূড়ান্ত হবে সে রাজ্যে পৌঁছেই। কমিটির চেয়ারম্যান বামফ্রন্টের। কিন্তু অধিকাংশ সদস্য শাসক জোট তৃণমূল-কংগ্রেসের। সিঙ্গুরে কৃষিজমির আন্দোলন হয়েছিল তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই। তার জেরে তৃণমূল নেত্রীকে দোষারোপ করেই সিঙ্গুর ছেড়েছিলেন রতন টাটা। কারখানা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সানন্দে। নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে সেই কারখানা থেকে ন্যানোর উৎপাদনও শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন ‘টাটা-পরিত্যক্ত’ রাজ্য থেকে সেই সানন্দে গিয়ে ন্যানোর কারখানা ঘুরে দেখার পরিকল্পনা নিয়ে স্বভাবতই স্থায়ী কমিটির মধ্যে বিরোধী বাম ও শাসক জোটের বিধায়কদের মধ্যে টানাপোড়েন আছে।
শিল্প ও বাণিজ্যের স্থায়ী কমিটির জনা ছয়েকের প্রতিনিধিদলের আজ, সোমবারই গুজরাত রওনা হওয়ার কথা। সফরসূচি রয়েছে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। কমিটির চেয়ারম্যান ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কথায়, “শুধু কারখানায় ঘুরে বেড়ানো তো নয়! শিল্পায়ন ওই রাজ্যে কী ভাবে হয়েছে, তা দেখাই আমাদের উদ্দেশ্য। ন্যানো কারখানা দেখতে পারলে ভালই হবে। তবে কোথায় কোথায় আমরা শেষ পর্যন্ত যাব, নিয়মমাফিক ওই রাজ্যের বিধানসভা তথা সরকারি কর্তৃপক্ষই তা ঠিক করবেন।” আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী এবং অধুনা সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমানও ওই কমিটির সদস্য। সিপিএমের বিধায়ক বাদল জমাদারও আছেন কমিটিতে। গুজরাতে শিল্পের অগ্রগতি দেখার জন্য আমুল এবং রিলায়্যান্সের কারখানা ঘুরে দেখার পরিকল্পনা সূচিতে রয়েছে বলে স্থায়ী কমিটি সূত্রের খবর।
শুধু ন্যানোর অধুনা ঠাঁই হিসাবেই নয়, গুজরাত উল্লেখযোগ্য রাজ্য শিল্প ও উন্নয়নের প্রশ্নে সহমতের ভিত্তিতে এগোনোর জন্যও। সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামে জমি-আন্দোলনের জেরে বামফ্রন্ট জমানার শেষ দিকে শাসক ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে যে কোনও প্রশ্নেই আদানপ্রদান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গুজরাতে কিন্তু শিল্পায়ন বা উন্নয়নের বিষয়ে বিজেপি-র মোদীর সঙ্গে কংগ্রেসের আহমদ পটেলদের আলোচনায় রাজনৈতিক অবস্থান কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে শাসক-বিরোধী আদানপ্রদানের পথ অবশ্য এখন আবার খুলেছে। ‘বিশেষ’ দু-একটি পরিস্থিতি বাদ দিলে সরকারের আলোচনার আহ্বানে সাড়া দিয়েছে বিরোধীরা। গুজরাতের সরেজমিন অভিজ্ঞতা থেকে এ রাজ্যের বিধায়কেরা উন্নয়নের প্রশ্নে রাজনীতি সরিয়ে রাখার ‘বার্তা’ নিয়ে ফেরেন কি না, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে।
তবে একই সঙ্গে শিল্প সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “শিল্পায়ন অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত জমির সঙ্গে। গুজরাতের মতো রাজ্যে জমির মালিকানা পশ্চিমবঙ্গের মতো খণ্ডিত নয়। যে কোনও জায়গায় জমির উপরে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যাও এত বেশি নয়। সুতরাং, গুজরাতে যা সম্ভব, এ রাজ্যে তার সবই একই ভাবে সম্ভব না-ও হতে পারে। নতুন সরকারের জমি-নীতির প্রসঙ্গ বাদ রেখেও এই বাস্তব মাথায় রাখতে হবে এ রাজ্যে।” প্রসঙ্গত, সিঙ্গুরে জমি-আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে পুণেতে টাটার গাড়ি কারখানা দেখতে গিয়েছিল বিধানসভার তৎকালীন শিল্প ও বাণিজ্যের স্থায়ী কমিটি। তদানীন্তন কংগ্রেস বিধায়ক (এখন তৃণমূলের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী) সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে যা রিপোর্ট দিয়েছিলেন, তাকে রাজনৈতিক ভাবে ‘হাতিয়ার’ করার চেষ্টা করেছিল বাম সরকার। যা নিয়ে বিতর্কের জল গড়িয়েছিল বহু দূর। ‘পরিবর্তনে’র জমানায় গুজরাত-সফর কত দূর ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ হবে, সেই দ্বিধা সঙ্গে নিয়েই রওনা হচ্ছেন পরেশবাবুরা! |
|
|
|
|
|