জনসভায় মানুষের ঢল দেখে ‘আত্মতুষ্টি’তে ভোগায় এ বছর বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে পূর্ব মূল্যায়নে ভুল হয়েছিল বলে স্বীকার করল বীরভূম জেলা সিপিএম। সিউড়িতে দলের ২০তম জেলা সম্মেলনে প্রকাশিত রাজনৈতিক সাংগঠনিক খসড়া প্রতিবেদনেই এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে দলীয় সদস্যপদ দেওয়ার ক্ষেত্রে গরিব, খেতমজুর ও অসংগঠিত শ্রমিকদের বড় অংশ অত্যন্ত পার্টি দরদি হলেও তাঁদের কার্যত উপেক্ষা করা হয়েছে। পরিবর্তে দলের নেতাদের পরিচিত লোকজনদের পার্টি সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। সেই সব লোকজনের বড় অংশ নানা দুর্নীতি ও বেনিয়মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন পার্টিকে ‘ব্যবহার’ করে। পুলিশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, বিদ্যুৎ, শ্রম, যুব-কল্যাণ ও শিল্প দফতরে কাজের ব্যাপক ত্রুটি বিচ্যুতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে এ-ও স্বীকার করা হয়েছে, পার্টি নেতৃত্ব ও কর্মীদের একাংশের আচার-আচরণ, আত্মভরিতা, দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, অনিয়ম ও অনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া পার্টির প্রতি জনগনের আস্থা কমিয়েছে। বামপন্থী তথা সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধে বার বার দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল, কংগ্রেস প্রভৃতি দলগুলি। সিপিএমের প্রতিবেদনেও পঞ্চায়েত পরিচালনায় দুর্নীতি-র প্রসঙ্গ এসেছে। উল্লেখ করা হয়েছে, পঞ্চায়েত পরিচালনায় বেনিয়ম, অনিয়ম, ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রতি নজর দেওয়া হয়নি। আরও বলা হয়েছে, বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য কমিটির নির্দেশিকা সর্বত্র মানা হয়নি। কিছু কিছু জায়গায় ব্যক্তি পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে। কোথাও কোথাও পার্টির ও বামফ্রন্টের অভ্যন্তরে অনৈক্য পার্টি নেতৃত্ব-সহ পার্টি সদস্যদের একাংশের নিষ্ক্রিয়তা এবং দলের মধ্যে উপদলীয় কার্যকলাপ নির্বাচনে যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। জোনাল কমিটিগুলির সম্পাদক-সহ নানা স্তরে সর্বক্ষণের (হোলটাইমার) কর্মী বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে এ বারের জেলা সম্মেলনে। এত দিন পর্যন্ত জোনাল সম্পাদকদের একাংশ সর্বক্ষণের কর্মী ছিলেন এই জেলায়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সমস্ত জোনাল সম্পাদককেই সর্বক্ষণের কর্মী করার কথা বলা হয়েছে ৬২ পাতার এই প্রতিবেদনে। জেলা সিপিএম নেতৃত্বের পর্যালোচনা, সামগ্রিক ভাবে জেলায় লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় বিধানসভা নির্বাচনে ১.৯৯ শতাংশ ভোট কমেছে। কিন্তু ২০০৬ সালের বিধানসভার তুলনায় চলতি বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের ভোট কমেছে ১১.০৪ শতাংশ। শনিবার প্রকাশ্য সমাবেশের মধ্যে এই সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী, মহম্মদ সেলিম, বর্ধমানের জেলা সম্পাদক অমল হালদার প্রমুখ উপস্থিত রয়েছেন। সম্মেলন শেষ হবে আজ, সোমবার। |