প্রকল্প শেষ হওয়ার মেয়াদ ফুরিয়েছে বছর তিনেক আগে। কিন্তু আসানসোলের জলপ্রকল্প এখনও বিশ বাঁও জলে। প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। চাপানউতোর শুরু হয়েছে পুরসভার মেয়র এবং মেয়র পারিষদের মধ্যেও। কবে সেটি চালু হবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি পুর কর্তৃপক্ষ।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল আসানসোলের এই জলপ্রকল্পের কাজ। কিন্তু তা হয়নি। ২০০৯ সালের জুনে সিপিএমকে সরিয়ে পুরসভায় ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। আড়াই বছর কেটে যাওয়ার পরেও প্রকল্পের অগ্রগতি আশানুরূপ নয় বলে অভিযোগ পুরসভার জল দফতরের মেয়র পারিষদ কংগ্রেসের রবিউল ইসলামের। তিনি জানান, পুরসভার এই প্রকল্পের কাজকর্ম দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এডিডিএ)। পুরসভার তৃণমূল মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ই এডিডিএ-র চেয়ারম্যান। কংগ্রেসের জেলা কমিটির সম্পাদক রবিউল ইসলামের অভিযোগ, “তাপসবাবুর উদ্যোগের অভাবেই জলপ্রকল্পের কাজ থমকে আছে। বস্তুত, সিপিএম পুরবোর্ডের কাজকর্মের সঙ্গে তাপসবাবুর কাজকর্মের কোনও ফারাক নেই।” তাঁর দাবি, সামনের গ্রীষ্মেও আসানসোলের জল সমস্যা মিটবে না। নাগরিকেরা আবার জল সঙ্কটে ভুগবেন। |
কী কারণে প্রকল্পটির অগ্রগতি আশানুরূপ নয়, সে প্রশ্নে মেয়র তাপসবাবু জানান, প্রকল্পটির আটকে আছে মূলত তিনটি কারণের জন্য। প্রথমত, দামোদর নদ সংলগ্ন এলাকায় কুয়ো খুঁড়ে সাবমার্সিবল পাম্প লাগিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তোলা হবে। যে জমিতে কুয়ো খোঁড়া হচ্ছে সেটি ব্যক্তিগত সম্পত্তি হওয়ায় জমির মালিক মামলা করেছেন। তাই সেই কাজ থমকে আছে। মেয়রের অভিযোগ, এই সমস্যাটি সিপিএম পুরবোর্ডের আমলে। তা সমাধানের চেষ্টা চলছে। দ্বিতীয়ত, প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার ইস্কো স্টিল প্ল্যান্টের জমির উপর দিয়ে জলের পাইপলাইন আনতে হবে। তাপসবাবুর দাবি, জমি খুঁড়ে পাইপ বসানোর কাজে বাধা দিচ্ছে ওই সংস্থা। ইস্কোকে জল দেওয়ার বিনিময়ে এই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। তৃতীয়ত, হারানডিহির কাছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের একটি সেতু ডিঙিয়ে পাইপ আনতে হবে। সেতুর পাশ দিয়ে পাইপলাইন নিয়ে যাওয়ার কাজে বাধা দিচ্ছে রেল। সমস্যা মেটাতে রেলের সঙ্গে কথা চলছে বলেও জানান মেয়র। মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলামের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাপসবাবু বলেন, “সব উদ্যোগ তো আমিই করেছি। ওদের তো কোনও দায় দেখছি না।”
কিন্তু আড়াই বছরেও তিনটি সমস্যা মেটানো সম্ভব হল না কেন? তাপসবাবুর দাবি, “প্রকল্পটি সিপিএম পুরবোর্ড অত্যন্ত জটিল অবস্থায় রেখে গিয়েছে। আমরা স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করতেই সময় নিয়েছি। দ্রুত তা শেষ করার ব্যবস্থা হচ্ছে।” পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ৮টি জলাধার গড়া হয়ে গিয়েছে। এখন কুয়ো বানিয়ে পাইপলাইন জুড়ে দিতে পারলেই প্রকল্প শুরু হয়ে যাবে। প্রাক্তন মেয়র তথা বিরোধী নেতা সিপিএমের তাপস রায়ের অবশ্য দাবি, “প্রকল্পের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ আমাদের আমলে করে ফেলেছিলাম। ক্ষমতায় থাকলে অনেক আগেই সব সমস্যা মিটিয়ে ফেলতাম। বর্তমান বোর্ডের উদ্যোগের যথেষ্ট অভাব আছে। তাই প্রকল্পটি ক্রমশ অনিশ্চিত হচ্ছে।” |