রাধেশ্যামেরা জেল-হাজতে কর্তারা জানতেন বেসমেন্ট দাহ্য
পদার্থে ঠাসা, গোয়েন্দা দাবি
ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালের দৈনন্দিন কাজকর্মের ব্যাপারে তাঁরা কোনও খবর রাখতেন না বলে দাবি করছেন সেখানকার কর্তারা। কিন্তু গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ডিরেক্টরেরা সব খবরই রাখতেন। এমনকী দৈনন্দিন কাজকর্মের ব্যাপারে সেখানকার কর্মীদের নিয়মিত নির্দেশও দিতেন। এই অবস্থায় আমরি-কাণ্ডে ধৃত সাত ডিরেক্টরকে শুক্রবার জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তাঁদের মধ্যে অসুস্থ আমরি-কর্তা রাধেশ্যাম অগ্রবালও রয়েছেন।
হাসপাতালের রোজকার কাজের ব্যাপারে কী জানতেন ওই কর্তারা?
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেন শুক্রবার বলেন, “আমরি-কর্তারা সবই জানতেন। এই ব্যাপারে পুলিশের কাছে নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।” ৮ ডিসেম্বর শেষ রাতে আমরির বেসমেন্টে বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থেই আগুন লেগেছিল। অথচ বেসমেন্টে শুধু গাড়ি রাখার কথা। গোয়েন্দারা জানান, হাসপাতালের বেসমেন্টে গাড়ি রাখার বদলে যে বিভিন্ন অফিস রয়েছে এবং সেখানে যে দাহ্য পদার্থ মজুত ছিল, এর কোনওটাই ধৃত ডিরেক্টরদের অজানা ছিল না।
এমনকী হাসপাতালের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কী ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, কোন কোন সংস্থার সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তি রয়েছে, তা-ও জানতেন ধৃতেরা। ডিরেক্টরদের ব্যবহৃত কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক হায়দরাবাদের ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষা করে দেখার জন্য। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট দেড়-দু’সপ্তাহের মধ্যে পাওয়া যাবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিও।
আদালত আমরির অন্য ছয় ডিরেক্টরের সঙ্গে রাধেশ্যামকেও এ দিন জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিলেও ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালেই রাখা হবে। অন্য ছয় ডিরেক্টরকে পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট চৌধুরী হেফাজত করিম। এত দিন লালবাজারের সেন্ট্রাল লক-আপে থাকা আমরির ছয় কর্তাকে আলিপুর আদালত থেকে পাঠানো হয়েছে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। অন্য দুই কর্তা আমরি হাসপাতালের চেয়ারম্যান (সেফটি) সত্যব্রত উপাধ্যায় এবং এজিএম (রক্ষণাবেক্ষণ) সঞ্জীব পালকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফের পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরে সত্যব্রতবাবু ও সঞ্জীববাবুকে লালবাজারের সেন্ট্রাল লক-আপে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ দিন সাত ডিরেক্টরের অন্যতম অসুস্থ রাধেশ্যামকে আদালতে আনা হয়নি। তিনি আছেন এসএসকেএমেই। বিচারক জানান, ২৯ ডিসেম্বর তিনি ফের রাধেশ্যামের মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। বুধবার রাধেশ্যামকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতে আর্জি জানিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। বিচারক সেই আর্জি খারিজ করে দেন। তাঁর জামিনের আবেদনও খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তাঁকে জেল হেফাজতে রাখারও নির্দেশ দেননি বিচারক। তাই রাধেশ্যাম কাদের হেফাজতে রয়েছেন, তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল। তবে বিচারক চৌধুরী হেফাজত করিম এ দিন জানিয়ে দেন, ওই অভিযুক্তকে জেল হেফাজতেই রাখা হয়েছে।
তবে রাধেশ্যামকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য এ দিনও ফের নিতে আর্জি জানিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। সরকারি আইনজীবীরা আদালতে বলেন, রাধেশ্যাম জেল হেফাজতে থাকায় তদন্তকারী অফিসারেরা তাঁকে জেরা করতে পারেননি।
সরকার পক্ষের আইনজীবীদের অভিযোগ, রাধেশ্যাম অসুস্থ হওয়ার ভান করছেন। মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্ট দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে। রাধেশ্যামের আইনজীবী অমিত ভট্টাচার্য তাঁর মক্কেলকে জামিন দেওয়ার জন্য আর্জি জানান। তবে আদালত দু’পক্ষের আর্জিই খারিজ করে দেয়। বিচারক জানিয়ে দেন, মেডিক্যাল বোর্ডের অনুমতি নিয়ে চিকিৎসকের উপস্থিতিতে হাসপাতালের নিয়ম মেনে রাধেশ্যামকে জেরা করতে পারে পুলিশ। নিয়ম মেনে রাধেশ্যামের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী এবং ছেলেকেও দেখা করার অনুমতি দিয়েছে আদালত।
অন্যান্য দিনের মতো এ দিনও দুপুর থেকেই ভিড়ে ঠাসা ছিল মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাস। শুনানির শুরুতেই ধৃত আমরি-কর্তা এস কে তোদি, রবি তোদি এবং ডি এন অগ্রবালের জামিনের আবেদন জানিয়ে তাঁদের আইনজীবী অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ডি এন অগ্রবাল অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজন। তাই তাঁকে জামিন দেওয়া হোক। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ জোর করে তাঁর মক্কেলদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ যে-সব নথি বাজেয়াপ্ত করেছে, তার কোনও তালিকা তাঁদের দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। একই অভিযোগ করেন অভিযুক্ত পক্ষের অশোক মুখোপাধ্যায়, আব্দুস সামাদ এবং উৎপল মজুমদার।
শুনানির পরে ধৃত আমরি-কর্তাদের আইনজীবী সেলিম রহমান বলেন, “তদন্ত যত দূর এগিয়েছে, তাতে এখনও পর্যন্ত জামিন-অযোগ্য ধারায় কাউকেই দোষী সাব্যস্ত করার মতো যথেষ্ট তথ্য মেলেনি। অভিযুক্তদের ইতিমধ্যেই লাগাতার ১৩ দিনের পুলিশি হাজতের সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। আমাদের মক্কেলদের সকলেরই সামাজিক প্রতিষ্ঠা রয়েছে। কেউই পালিয়ে যাবেন না। এই অবস্থায় সকলকেই জামিন দিয়ে দেওয়া উচিত।”
সরকার পক্ষের আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়েরা অবশ্য বিচারকের কাছে পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, “এই মামলার প্রকৃতি ও গুরুত্ব বিচার করে কাউকেই জামিন দেওয়া ঠিক হবে না।” একই সঙ্গে তাঁরা যুক্তি দেন, ধৃতেরা প্রভাবশালী। ছাড়া পেলে সাক্ষ্যপ্রমাণে কারচুপির আশঙ্কা রয়েছে। তাই তাঁদের জামিনের আবেদন নাকচ করে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো উচিত। সত্যব্রত উপাধ্যায় এবং সঞ্জীব পালকে আরও তিন দিন পুলিশি হাজতে রাখা দরকার বলে জানান সরকার পক্ষের আইনজীবীরা। তাঁরা বলেন, “তদন্তের স্বার্থে ওঁদের আরও জেরা করতে চায় পুলিশ।’’
আমরির অগ্নিকাণ্ডের পরে সেখান থেকে স্থানান্তরিত রোগীদের তথ্য আটকে না-রেখে তা ওই হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। তিনি বলেন, “মূল তথ্য দিতে না-পারলেও অন্তত তার প্রতিলিপি তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.