দলের ব্লক সভাপতি রবিউল হোসেনকে বহিষ্কারের ঘটনায় ইন্দাসে তৃণমূল দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ তৃণমূল কর্মীরা। বৃহস্পতিবার রাতেই বিষ্ণুপুরে দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে বহিষ্কারের প্রতিবাদ জানান তাঁরা। শুক্রবার সকালে ইন্দাসের পীরতলায় দলের ব্লক কার্যালয়ে জড়ো হয়ে হাজারখানেক কর্মী বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা স্লোগান তোলেন, ‘ধান্দাবাজ’, ‘সুদখোর’, ‘সিপিএমের দালাল’ নেতাদের দল থেকে অবিলম্বে বহিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি দলের দুঃসময়ে পাশে থাকা প্রকৃত কর্মীদের মর্যাদা দেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত ইন্দাসের তৃণমূল বিধায়ক গুরুপদ মেটের বাড়ি থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিধায়ক কোটার জন্য বরাদ্দ ৬০০টি কম্বল রবিউল হোসেন দলবল নিয়ে গিয়ে ‘লুঠ’ করেছেন বলে অভিযোগ। যদিও এই ঘটনাকে পুরোপুরি মিথ্যা বলে দাবি করেছেন রবিউল হোসেন। আর ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টি জানান গুরুপদবাবু। এর পরেই তিনি রবিউলকে দল থেকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন বলে দাবি করেছেন গুরুপদবাবু। এদিনও তিনি একই দাবি করেছেন। রবিউল হোসেন অবশ্য শুক্রবারও বহিস্কার করার কথা জানেন না বলে দাবি করেছেন। তিনি এদিন বলেন,‘‘দলের জেলা সভাপতি থেকে রাজ্য সভাপতি কেউই লিখিতভাবে আমাকে এখনও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানাননি।” তাঁর দাবি, “সিপিএমের দালাল গৌতম বেরা নানা প্রলোভন দেখিয়ে গুরুপদকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে দলনেত্রীর কাছে মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছেন। কম্বল যে লুঠ হয়নি তা এলাকার মানুষ ভালোভাবেই জানেন।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘দলে আমি থাকায় কিছু ধান্দাবাজ, সুদখোর নেতার অসুবিধা হচ্ছে । ওরাই এখন চক্রান্ত করে আমাকে সরিয়ে দলটা সিপিএমের কাছে বিকিয়ে দিতে চাইছে।” তৃণমূলের ইন্দাস ব্লকের সাধারণ সম্পাদক গৌতম বেরা অবশ্য দাবি করেন, “রবিউল আমাকে দল থেকে বের করার জন্য তিনদিন আগে নেতৃত্বের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এখন তিনি নিজেই বহিষ্কৃত। তাই উল্টোপাল্টা বকছেন।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি শ্যাম মুখোপাধ্যায় এদিনও বলেছেন, “রবিউল হোসেনকে বহিষ্কারের নির্দেশ আমার কাছে আসেনি। তিনি এখনও আমাদের দলের ইন্দাস ব্লকের সভাপতিই রয়েছেন।”
বহিষ্কার নিয়ে পরস্পর বিরোধী দাবি, পাল্টা-দাবিতে তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীদের মধ্যেও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। দলের নিচুতলার কর্মীদের একটা বড় অংশ রবিউল হোসেনের অনুগত। স্বভাবতই ক্ষুব্ধ তাঁরা। এদিন ব্লকের ১০টি অঞ্চলের হাজার খানেক কর্মী তৃণমূল ব্লক কার্যালয়ে জড়ো হয়ে স্থানীয় বিধায়ক ও দলের নেতা গৌতম বেরার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁরা হুমকিও দিয়েছেন, দলের জন্মলগ্ন থেকে ব্লক সভাপতির দায়িত্বে থাকা রবিউল হোসেনকে বহিষ্কার করা হলে বিধায়ককে এবং ওই নেতাকে ‘দেখে নেওয়া’ হবে। ‘সিপিএমের দালাল’ দের এলাকা ছাড়া করার হুশিয়ারিও দিয়েছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে এটা পরিষ্কার, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যেমন বাড়ছে, নেতৃত্ব দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছে ইন্দাসে। ‘অশনি সংকেত’ দেখছেন রাজনৈতিক ‘সন্ত্রাসে দীর্ণ’ ইন্দাসের মানুষ। |