কমিউনিটি • হল • বাজার • হাসপাতাল • নার্সিংহোম
নজরদারি নেই,
অগ্নিবিধি না মানাই দস্তুর
মরি কাণ্ডের পরে রাজ্য সরকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম, বাজার ইত্যাদি জায়গায় অগ্নিনির্বাপণ বিধি কটোরভাবে বলবৎ করতে চেয়েছেন। কিন্তু তা নিয়ে যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে এখনও গয়ংগচ্ছ মনোভাব তার প্রমাণ পাওয়া গেল উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত শহর বনগাঁয়।
বনগাঁ শহরের ঘন জনবসতিপূর্ণ বাজারগুলির অন্যতম রাজীব গাঁধী মিউনিসিপ্যাল মার্কেট বা ট’বাজার, নিরঞ্জন সাবা মার্কেট, নিউমার্কেট। সারি সারি দোকান। বাড়তে বাড়তে যা মার্কেটের মূল রাস্তাটাই দখল করে ফেলেছে। আগুন লাগলে দমকলের ইঞ্জিন ভিতরে ঢুকতে পারবে কিনা, তা নিয়েই সংশয় আছে। ট’বাজারে চালপট্টি থেকে শুরু করে মার্কেটে ঢোকার যে মূলত তিনটি রাস্তা, সেগুলি যথেষ্ট সংকীর্ণ। দেখা গেল, বাজারের মধ্যেই মিষ্টির দোকানে আগুন জ্বালিয়ে মিষ্টি তৈরি হচ্ছে। ট’বাজারের পাশেই নিরঞ্জন সাহা মার্কেট। সেটির অবস্থা আরও ভয়াবহ। আগুন লাগলে দমকলের ইঞ্জিন মার্কেটের ভিতরে ঢুকতে পারবে না। মার্কেটের ধারেই রয়েছে ট্রান্সফর্মার। সেখানে মাঝে মধ্যেই ‘ফ্ল্যাশ’ হয়। যে কোনও মুহূর্তে আগুন ধরে যেতে পারে বলে ব্যবসায়ীদেরও আশঙ্কা। কিন্তু অগ্নি নির্বাপণের বন্দোবস্ত নেই। নেই ন্যূনতম সচেতনতাও। বনগাঁর অন্য বাজারগুলির হালও একই রকম।
এ বার নার্সিংহোমের দিকে চোখ ফেরানো যাক। ঘুরে দেখা গেল শহরের বহু নার্সিংহোমের ‘ফায়ার লাইসেন্স’ নেই। বিধি অনুযায়ী নার্সিংহোমে দু’টি সিঁড়ি, জলের ট্যাঙ্ক, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকার কথা। অথচ বেশিরভাগ নার্সিংহোমেই তা অনপস্থিত। বনগাঁর নার্সিংহোম সংগঠনের সভাপতি মলয় সাহা। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের কাছে তাঁর নিজেরও একটি নার্সিংহোম রয়েছে। এ ছাড়াও বনগাঁয় আরও ৬টি নার্সিংহোম রয়েছে। মলয়বাবু স্পষ্টই স্বকার করেন, “আমার নার্সিংহোমের ফায়ার লাইসেন্স নেই। তবে দু’টি সিঁড়ি রয়েছে। রয়েছে জলের ট্যাঙ্কও। অন্য নার্সিংহোমগুলিতেও ফায়ার লাইসেন্স নেই।” কিন্তু কেন এই অবস্থা? মলয়বাবুর কথায়, “বনগাঁর নার্সিংহোমগুলির আর্থিক পরিকাঠামো নেই। রোগী কম হয়। ফলে আর্থিক লাভও হয়। সরকারি নিয়মকানুন মানতে গেলে নার্সিংহোম তুলে দিতে হবে।”
আর এর প্রেক্ষিতে কী বলছেন বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্য। জো্যৎস্নাদেবীর কথায়, “শীঘ্রই সমস্ত নার্সিংহোমগুলিতে সরেজমিন তদন্তে যাওয়া হবে। দেখা গিয়েছে কয়েকটি নার্সিংহোমের নথিপত্র অবৈধ। সেই সময় নার্সিংহোমের বিরুদ্ধ্ েব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শুধু হাসপাতাল বা নার্সিংহোমই নয়। শহরে ছড়িয়ে থাকা কমিউনিটি হলগুলির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও খতিয়ে দেখা হবে বলে পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় কমিউনিটি হলে অনুষ্ঠানের সময় গ্যাস জ্বালিয়ে রান্না করা হয়। এ সব বন্ধ করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
শহরের অন্যতম বড় বাজার নিউ মার্কেট। রোজ সকালে হাজার হাজার মানুষ সেখানে বেচাকেনা করেন। অথচ বাজারে আগুন লাগলে তা নেভাতে কোনও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বিশ্বজিৎ বসু বলেন, “রোজ এখানে প্রচুর মানুষ আসেন কেনাবেচা করতে। আগুন লাগলে তা নেভানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। আমরির ঘটনার পরে সমিতির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে পুরসভাকে শীঘ্রই প্রস্তাব দেওয়া হবে। আগুন নেভানোর পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য। যেহেতু এই বাজার কমপ্লেক্সটি পুরসভা তৈরি করেছে।”
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের অবস্থাও এ সবের থেকে খুব একটা আলাদা নয়। মহকুমার প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ এই হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু হাসপাতালে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। গোটা চারেক কার্বনডাই অক্সাইডের সিলিন্ডার থাকলেও তা বহু পুরনো। অতীতে এই হাসপাতালে বেশ কয়েকবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালের সুপার গয়ারাম নস্কর বলেন, “আগুন নেভানোর পরিকাঠামো যা থাকা উচিত, এখানে তা নেই। দমকলের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পরিকাঠামো তৈরি করে দেওয়ার জন্য। এখানে আগুন নেভানোর জন্য পৃথক কোনও জলের ট্যাঙ্ক নেই।”
বাস্তবে গোটা বনগাঁ শহরটাই জতুগৃহে পরিণত হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে বহির্বাণিজ্যের পণ্যবোঝাই ট্রাক। কয়েকদিন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এই সব ট্রাকের তলায় আগুন জ্বেলে রান্নাবান্না করেন ট্রাকচালক, খালাসিরা। যা থেকে অতীতে বেশ কয়েকবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে কোথাও আগুন লাগলে সেখানে সময়ে দমকলবাহিনী পৌঁছতে পারে না। বনগাঁ মহকুমা দমকল বাহিনীর আধিকারিক দীপক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সম্প্রতি একদিন আগুন লাগার খবর পেয়ে দমকলবাহিনীর গাড়ি ট্রাকের জন্য মতিগঞ্জ এলাকায় প্রায় ২০ মিনিট আটকে ছিল। বিভিন্ন বহতলবাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং বাজারের ফায়ার লাইসেন্স আছে কি না, তা জানতে পঞ্চায়েত এবং পুরসভার কাছে তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তারপর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.