প্রশ্নের মুখে পর্ষদ
বসতি এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে কারখানা, দুর্ভোগ
বালিগঞ্জে জামির লেন এবং সংলগ্ন এলাকায় বাসিন্দাদের অন্তহীন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওয়াগন তৈরির একটি কারখানা।
বালিগঞ্জের মতো অভিজাত পাড়ায় দীর্ঘদিন দিব্যি চলছে বেসকো লিমিটেড নামে ওই কারখানা। আর সেই কারখানার বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের মধ্যে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কারখানা থেকে তৈরি সাংঘাতিক কম্পনও তাঁদের সর্বক্ষণের শঙ্কার কারণ। কিন্তু অভিযোগ, এলাকাবাসীদের ওই দুর্ভোগ দূর করতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, সব সময়েই রঙের তীব্র কটু গন্ধ নিঃশ্বাসের সঙ্গে তাঁদের শরীরে ঢোকে। আর ওয়াগনের বিভিন্ন অংশ লরিতে তোলা-নামানোর আওয়াজও মাঝেমধ্যেই অসহ্য হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের সংগঠন জামির লেন ডেভেলপমেন্ট কমিটি বিভিন্ন জায়গায় সমস্যার কথা জানিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক সঞ্জয় রায় বলেন, “সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওয়াগন তৈরির প্রচণ্ড আওয়াজ শুনতে হয়। লোহার মিহি গুঁড়ো বাতাসে উড়ে বাড়ির ভিতরে ঢোকে। তা ছাড়া রয়েছে রঙের তীব্র গন্ধ।” তাঁর অভিযোগ, ভারি যন্ত্রপাতি লরিতে ওঠানো-নামানোর সময়ে হওয়া প্রচণ্ড কম্পনে অনেক বাড়িতেই ছোটখাটো ফাটলের সৃষ্টি হয়।
জামির লেনের আর এক বাসিন্দা প্রদ্যোৎকুমার সেনগুপ্ত বলেন, “রঙের গন্ধে পাড়ার অনেকেই ভয়ানক শ্বাসকষ্টে ভোগেন। কয়েক বছর আগে ওয়াগন রং হত খোলা জায়গায়। এখন একটা ঢাকা জায়গায় রং করা হয়, তবে অবস্থার উন্নতি হয়নি।” প্রদ্যোৎবাবুর অভিযোগ, পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার ও পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্তের কাছে আবেদন করেও ফল হয়নি। ওই এলাকায় কিছু সরকারি কর্মচারী থাকেন। তাঁদের সংগঠন রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন করেছে।
বেসকো লিমিটেডের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার ব্রিগেডিয়ার কে আর শেষায়ি অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “অবস্থা এত খারাপ নয়। ওঁরা বাড়িয়ে বলছেন। ১৯৯৬-এ কারখানার ফাউন্ড্রি বারুইপুরে সরানোর পর থেকে তেমন দূষণ নেই। সেটা আমরা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকেও জানিয়েছি। তবে একটা কারখানা চললে তো একটু দূষণ হবেই। সেটুকুই হচ্ছে, তার বেশি নয়।” তিনি আরও জানান, রং থেকে যাতে কটু গন্ধ না বেরোয়, তার জন্য পর্ষদের সুপারিশ মেনে নতুন পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে। তা ছাড়া, সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। কাজেই রাতে কোনও আওয়াজ হওয়ার কথা নয়। কারখানার পক্ষ থেকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যানকেও তা জানানো হয়েছে।
পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত বলেন, “পরিদর্শনের জন্য পর্ষদের অফিসারদের কারখানায় পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু কারখানা বন্ধ ছিল। জামির লেনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। কারখানার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা হয়েছে।” ওই কারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণে পর্ষদের কাজ আপাতত এটুকুই। পুরসভা এলাকায় ওই ধরনের ভারি শিল্পের কারখানা থাকার কথা নয়। আগে কারখানাটি চালানোর জন্য পর্ষদের কোনও ছাড়পত্র না থাকায় ১৯৯৯-এ কারখানাটি বারুইপুরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় পর্ষদ। সেই নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে না কেন? বিনয়বাবুর জবাব, “ওঁরা নাকি বারুইপুরে অনেকটা কাজ সরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।”
পর্ষদের এই ভূমিকায় নিজেদের দুর্ভোগ কমাতে কার উপরে ভরসা করবেন, সেটাই এখন বালিগঞ্জের জামির লেন ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের একমাত্র প্রশ্ন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.