সম্পাদকীয় ২...
পদ্ধতির গুরুত্ব
তৃণমূল কংগ্রেস সদ্য শাসনক্ষমতায় আসিয়াছে। সরকার পরিচালনার কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা এই দলের নাই। দলের কয়েক জন নেতার হয়তো ইতিপূর্বে কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়ার অভিজ্ঞতা রহিয়াছে। কিন্তু তাহা রাজ্য সরকার পরিচালনায় বিশেষ কাজে লাগিতেছে না। বিশেষত, কোনও রাজ্যে যখন পালাবদল ঘটে, তখন পুরাতন সব কিছুকেই বাতিল ও নাকচ করিয়া নিজের মতো চলার একটা প্রবণতা রাজনীতিকদের মধ্যে মাথাচাড়া দিতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে সম্ভবত তাহাই ঘটিয়াছে। বিশেষত জমি বিল লইয়া সরকারের কাজকর্মে যে রূপ বিভ্রান্তি ছড়াইয়াছে, শঙ্কা হয়, মুখ্যমন্ত্রীর সহিত মন্ত্রিসভার, মন্ত্রিসভার সহিত বিধানসভার কোনও সমন্বয় গড়িয়া উঠে নাই। ক্ষমতাসীন হওয়ার সাত মাস পরেও এই সমন্বয়হীনতা দুর্ভাগ্যজনক।
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের কৃষিজমি রক্ষা আন্দোলনের পালে ভর করিয়াই যেহেতু তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতাসীন হওয়া, তাই ১৮৯৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইন সংশোধনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে প্রথমাবধি উদ্গ্রীব হইবে, তাহা স্বাভাবিক। কিন্তু এ জন্য তড়িঘড়ি যে-অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়, পরিষদীয় রীতিপদ্ধতি না-মানার কারণে তাহা শেষাবধি প্রত্যাহার করিয়া লইতে হয়। পরিবর্তে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত যে-বিল বিধানসভায় পেশ হওয়ার কথা ছিল, দেখা গেল রাজ্যপালের অনুমতিসূচক স্বাক্ষর, এমনকী ভারপ্রাপ্ত ভূমিমন্ত্রীর স্বাক্ষর ছাড়াই তাহা বিধায়কদের মধ্যে বিতরণ হইয়া গিয়াছে। রাজ্যপাল রাজ্যের বাহিরে, তাই এই অবস্থায় বিলটি আনুষ্ঠানিক ভাবে পেশ ও পাশ করাও রীতিবিরুদ্ধ। এই ঘটনা দেখাইয়া দেয়, মন্ত্রীর সহিত মন্ত্রকের, সরকারের সহিত রাজ্যপালের, মন্ত্রণালয়ের সহিত আইনসভার ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে কোথাও বড় রকমের ব্যবধান থাকিয়া যাইতেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই রাজ্যের ভূমি মন্ত্রীও। সেই হিসাবে জমি বিলটি খোদ তাঁহারই মন্ত্রকের। অথচ জমি-মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মতো অর্থনৈতিক তাৎপর্যমণ্ডিত বিলটি আগাম রাজ্যপালকে দেখানো হয় নাই। দায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের এবং মন্ত্রীর। এ ক্ষেত্রে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর। ক্ষমতায় আসিয়াই তিনি দ্রুত জমি বিল পাশ করাইতে উদ্যত। একই ভাবে টাটার অধিগৃহীত সিঙ্গুরের জমি সরকারে ন্যস্ত করিতে গিয়া তাড়াহুড়া করিয়া অর্ডিন্যান্স জারি করিলেও আদালতের স্থগিতাদেশে অধিগৃহীত জমির প্রত্যর্পণ আটকাইয়া গিয়াছে। সিঙ্গুরের জমিহারাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা যাইতেছে না। বরাবর বিরোধী পক্ষের রাজনীতি এবং রাস্তার আন্দোলনে হাত-পাকানো তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব সম্ভবত ভাবিয়াছিলেন, একই কায়দায় সরকার পরিচালনা করাও যাইবে। দুইটি যে মৌলিক ভাবে ভিন্ন দুই কাজ, তাহা খেয়াল রাখেন নাই। এ জন্য বার বারই তাঁহাদের অস্বস্তিতে পড়িতে হইতেছে, এমনকী মাঝেমধ্যে বিব্রত ও হাস্যাস্পদও হইতে হইতেছে। পরিষদীয় রাজনীতির প্রথা-প্রকরণ রহিয়াছে, সুনির্দিষ্ট পন্থা-পদ্ধতিও। সেগুলির কোনওটিই অকারণ নয়, রাজনীতির প্রগল্ভ অত্যুৎসাহকে প্রশাসনের নিয়মনীতিতে আবদ্ধ করাই তাহার লক্ষ্য। তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বকে, দলের মন্ত্রী ও বিধায়কদের বুঝিতে হইবে, গণতান্ত্রিক রীতিপদ্ধতিকে অগ্রাহ্য করিয়া কিছু করা চলে না। তাহাতে প্রশাসনিক নিয়মানুবর্তিতারই উল্লঙ্ঘন হয়। তৃণমূল কংগ্রেস বরাবর সরকার চালাইবে না, কিন্তু সরকার চালাইবার রীতিনীতিগুলি থাকিয়া যাইবে। দল অপেক্ষা ব্যবস্থা গণতন্ত্রে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.