হেঁশেল এবং গেরস্থালি সামাল দেওয়ার পাশাপাশি এখন থেকে তাঁদের বাড়তি দায়, মানুষকে কিঞ্চিৎ সতর্ক করা। পাড়ায় দল বেঁধে ঘোরার পাশাপাশি পড়শি গাঁ-গঞ্জেও সাধারণ মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব বর্তেছে ওঁদের উপরে। সাপে-কাটা রোগী নিয়ে আগেই হাসপাতালে ছুটুন, জাতপাতের ভেদাভেদ রাখবেন না, এমনকী চোলাই মদ নৈব নৈব চ!
পাশাপাশি এলাকার হাল হকিকতও তারা সরাসরি প্রশাসনকে জানাবেন। মগরাহাটের চোলাই কাণ্ডের পর সীমান্তবর্তী তেহট্ট মহকুমাতে সচেতনতা বাড়াতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদেরও এ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে মহকুমা প্রশাসন। তেহট্টের মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল বলেন,‘‘ সীমান্তের গ্রামগুলোতে এর আগে বিক্ষিপ্তভাবে নাবালিকার বিয়ে বন্ধ বা পণপ্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মত বেশ কিছু ভাল কাজ করেছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। এখন আমরাই বেশ কিছু বিষয় ওদের ঠিক করে দিচ্ছি সংশ্লিষ্ট গ্রামে গিয়ে সে কতাই বলবেন ওঁরা। সঙ্গে প্রচার পুস্তিকাও দেওয়া হবে।” মহকুমার চারটি ব্লকেই ওই নির্দেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। |
তেহট্ট মহকুমায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। প্রায় পঞ্চাশ হাজার পরিবার ওই গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত। ফলে এই বিপুল সংখ্যক মহিলাকে একই সঙ্গে কোন কাজে লাগালে সে কাজে নিশ্চিতভাবে সাফল্য আসবে বলে দাবি প্রশাসনের। কি নিয়ে প্রচার করবেন মহিলারা? মগরাহাটের চোলাইকান্ডের পর স্বাভাবিকভাবেই ওই নির্দেশে বেআইনি মদের বিরুদ্ধে প্রচার বা সাধারণ মানুষকে সচেতনের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। এ ছাড়াও ১০০ দিনের কাজ, সীমান্তবর্তী এলাকায় নারী বা শিশু পাচার রোধ, জাতপাতের ভেদাভেদ মোছা এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি সুযোগ সুবিধার বিষয়েও প্রচার ও সচেতনতার কথা বলা হয়েছে ওই নির্দেশে।
মহকুমাশাসকের কথায়, “কোথাও নিজেদের উদ্যোগেই গোষ্ঠীর মহিলারা এরকম নানা সচেতনতামূলক কাজ করবেন তাঁরা। প্রতিটি ব্লকের বিডিওদের এ ব্যাপারে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সাহায্য করতে বলা হয়েছে। স্থানীয় ক্লাব, এনজিও ও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোকেও এগিয়ে আসতে বলা হয়েছে।”
করিমপুর ১ ব্লকের বিডিও সুমন্ত রায় বলেন, ‘‘মহকুমাশাসকের নির্দেশ পেয়ে আমরা ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছি। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। সত্যি কথা বলতে সীমান্তবর্তী এই এলাকায় স্বনির্ভরগোষ্ঠীর মহিলারা একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়ে থাকে বিগত কয়েক বছরে প্রত্যন্ত গ্রামের ওই মহিলারা নিজেরাও যেমন অনেক স্বনির্ভর হয়েছেন, তেমনি নিজেদের কাজের জন্য প্রতিনিয়ত পঞ্চায়েত, ব্যাঙ্ক কিংবা বিডিও অফিসে নানা কাজে আসার ফলে ওঁরা নিজেরাও অনেক বিষয়ে সচেতন হয়েছেন।”
বৃহস্পতিবার বিকেলে করিমপুরের অভয়পুর গ্রামে নিজেদের পাড়াতেই প্রচারে বেরিয়েছিলেন বেশ কয়েকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অন্তত ২০ জন মহিলা হাতে ছিল ‘চোলাই নেশা সর্বনাশা’র মত কিছু পোষ্টারও। ভানুয়ারা বিবি, জমেলা বিবি, ইলমা বিবি, রিক্তা বিশ্বাস কিংবা মুর্শিদা বিবিদের কথায়,‘‘ পঞ্চায়েত থেকে আমাদের এই ধরণের প্রচার করার কথা বলা হয়েছে। তাই নিজেদের ঘরকন্না সামলে সময় পেলেই বেরিয়ে পড়ছি। কিছু পোষ্টার পঞ্চায়েত থেকে নিয়ে এসেছি। গ্রামে ঘুরে তা সাঁটিয়ে দিচ্ছি দেওয়ালে। মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। গ্রামের মবিলারা তো সবাই এসে মন দিয়ে শুনছেন। পরামর্শও নিচ্ছেন।”
মা ফতেমা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সম্পাদিকা ভানুয়ারা বিবি বলেন,‘‘ লেখাপড়া বিশেষ জানি না ঠিকই কিন্তু গত কয়েক বছরে এই গোষ্ঠীর জন্য কাজ করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। বছরখানেক আগে এলাকারই এক নাবালিকার ‘বিহা’ ঠিক হয়ে গিয়েছিল কিন্তু খবর পেয়ে আমরাই গোষ্ঠীর কয়েক জন মহিলা রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। ওই মেয়ের বাড়ির লোকজনকে বুঝিয়ে সে বিয়ে বন্ধও করা গিয়েছিল।’’ |