সিআইডি হেফাজতে নন্দীগ্রামের সেই নব |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক ও হলদিয়া |
চার বছর আগে নন্দীগ্রামে ভূমি-কমিটির মিছিলে ‘হামলা’ এবং কমিটির কয়েক জনকে ‘গুমখুন’-এর মামলায় ধৃত সিপিএম নেতা নব সামন্ত ও সত্যরঞ্জন মাকুড় ওরফে লালুকে ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিল সিআইডি। বুধবার রাতে হলদিয়া থেকে তাঁদের ধরা হয়। বৃহস্পতিবার হাজির করা হয় হলদিয়া এসিজেএম আদালতে। ভারপ্রাপ্ত বিচারক পবিত্র সেনের এজলাসে ধৃতদের ১৪ দিন হেফাজতে চেয়ে আবেদন করে সিআইডি। আবেদন মঞ্জুর হয়। এই নিয়ে ওই গুমখুন মামলায় নন্দীগ্রাম-খেজুরি মিলিয়ে গ্রেফতার হলেন ৭ সিপিএম নেতা-কর্মী। ২০০৭-এর ১০ নভেম্বর সিপিএমের ‘নন্দীগ্রাম দখল’ পর্বে গোকুলনগরের করপল্লিতে আক্রান্ত হয়েছিল ভূমি-কমিটির মিছিল। তার পর থেকেই ‘নিখোঁজ’ কমিটির ৯ সমর্থক। তাঁদের খুন করে দেহ খেজুরিতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার পরে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে সিআইডি-র দাবি। |
|
আদালত চত্বরে নব সামন্ত। নিজস্ব চিত্র। |
বুধবার রাতে নব-লালুকে গ্রেফতারের সময়ে হলদিয়ার পূর্ব-রামনগরে কয়েক জন সিপিএম কর্মী সিআইডিকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত রাজীব দাস, সুরেশ দাস ও অচিন্ত্য দাসকে গ্রেফতার করে বৃহস্পতিবার হাজির করা হয় হলদিয়া আদালতে। তাঁদের ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়।
নন্দীগ্রামে জমি-রক্ষার আন্দোলন-পর্বে বারে বারেই সামনে এসেছে নব সামন্তের নাম। ভূমি-উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির চোখে ‘মূর্তিমান সন্ত্রাস’ আর সিপিএম-শিবিরে ‘লড়াকু নেতা’র ইমেজ নিয়েই সোনাচূড়ায় এক সময়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন নব। ২০০৭-এর গোড়ায় তাঁর দাদা, শঙ্কর সামন্ত নিহত হয়েছিলেন। তাঁকেও সিপিএম-শিবির ‘শহিদ’ মেনেছে আর কমিটি দেখেছে ‘সন্ত্রাসের নেতা’ হিসাবে। কমিটির ‘প্রতিরোধে’ মাঝেমধ্যে পিছু হটেছেন নব। খেজুরিতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন, আবার ফিরে এসেছেন সোনাচূড়ায়। একের পর এক মামলায় অভিযুক্ত হয়েও তদানীন্তন শাসকদলের ‘নেতা’ হওয়ায় গ্রেফতারি এড়িয়েছেন। নব সামন্তের সেই দাপট কমতে শুরু করে ২০০৭-এর নভেম্বরের শেষাশেষি নন্দীগ্রামে সিআরপি আসার পরে। তাতে অবশ্য ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রবল ‘পরিবর্তনের হাওয়া’র মধ্যেও সিপিএমের টিকিটে ভাঙাবেড়া বুথ থেকে সোনাচূড়া পঞ্চায়েতে তাঁর সদস্য নির্বাচিত হওয়া আটকায়নি। কিন্তু সদস্য হিসাবে শপথ আর নেওয়া হয়নি। নন্দীগ্রাম তথা পূর্ব মেদিনীপুরে ওই পঞ্চায়েত নির্বাচনেই কায়েম হয়ে যায় তৃণমূলের নিরঙ্কুশ আধিপত্য। তার পর থেকেই পালিয়ে বেড়ানো। কখনও শোনা গিয়েছে রয়েছেন তমলুকে সিপিএমের জেলা কার্যালয়ের নিরাপদ আশ্রয়ে, কখনও শোনা গিয়েছে রয়েছেন হলদিয়ার শ্রমিক ভবনে। অবশেষে সেই হলদিয়া থেকেই বৃহস্পতিবার রাতে সিআইডি-র হাতে ধরা পড়লেন নব। সঙ্গে গোকুলনগরের করপল্লির সত্যরঞ্জন ওরফে লালু মাকুড়যাঁর নামেও সন্ত্রাসের একগাদা অভিযোগ। এই দু’জন চার বছর আগের সেই ১০ নভেম্বরের হামলা ও লাশ লোপাটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন বলেই দাবি সিআইডি-র। নবদের গ্রেফতারের সূত্রে এই মামলায় অন্য অভিযুক্তবিশেষত হিমাংশু দাস-সহ খেজুরির সিপিএম নেতাদেরও এ বার পাকড়াও করা যাবে বলে আশায় তদন্তকারীরা। |
|