সম্পাদকীয় ২...
বিপরীত ফল
ছাত্ররা যদি শিক্ষকদের মূল্যায়ন করে, তাহাতে কি শিক্ষা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে? উন্নত দুনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অভিজ্ঞতা বলিবে, অবশ্যই। শিক্ষকরা তাঁহাদের দায়িত্বে আরও বেশি মনোযোগী হন; ছাত্রদের কী প্রয়োজন, সে বিষয়ে সচেতন হন; ছাত্রদের নিকট নিজেদের উপযোগী করিয়া তোলার চেষ্টা করেন। অন্য দিকে, ছাত্ররাও নিজেদের দায়িত্ব উপলব্ধি করে। দুইয়ে মিলিয়া পঠনপাঠনের প্রক্রিয়াটি আরও বেশি কুশলী হইয়া উঠে। এই অভিজ্ঞতা হইতে কি বলিয়া দেওয়া চলে, ছাত্রদের দ্বারা শিক্ষকদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা করিলেই পঠনপাঠনের উন্নতি অনিবার্য? না। কারণ, এই মূল্যায়নের প্রক্রিয়াটিকে সৎ এবং অর্থপূর্ণ করিয়া তুলিবার কিছু আবশ্যিক শর্ত আছে। যেমন, দুই পক্ষের মধ্যে আদানপ্রদানের পরিসর থাকিতে হইবে। ক্ষমতার উচ্চাবচ সম্পর্ক থাকিলে এই আদানপ্রদান সম্ভব হয় না। দ্বিতীয়ত, অন্তত বেশির ভাগ ছাত্রের নিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কাম্য হইতে হইবে। উন্নত দুনিয়ার বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই উচ্চশিক্ষার খরচ বিপুল। ফলে, অকল্পনীয় ধনী না হইলে কেহ আর কিছু করিবার নাই বলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িতে আসে না। যাহারা আসে, তাহারা হয় কষ্টোপার্জিত অর্থ ব্যয় করিয়া পড়ে, নয় বৃত্তির উপর নির্ভরশীল। উভয় শ্রেণির নিকটই বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন গুরুত্বপূর্ণ। ফলে, তাহারা ক্লাসে মনোযোগী হয়। তাহাদের পক্ষেই বিচার করা সম্ভব, কোন শিক্ষক তাহাদের দাবি কতখানি মিটাইতে পারেন। তৃতীয়ত, শিক্ষকের মূল্যায়নের প্রশ্নে পঠনপাঠন ভিন্ন অন্য কোনও বিষয়ের অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ। কোন শিক্ষকের রাজনৈতিক রং কী, কাহার সহিত ব্যক্তিগত সম্পর্ক কেমন এই বিষয়গুলি মূল্যায়নে বিবেচ্য হইয়া উঠিলে প্রক্রিয়াটি তাহার যাথার্থ্য হারায়। কাজেই, শিক্ষকের মূল্যায়ন হইলেই পঠনপাঠনের মান গগনচুম্বী হইবে এমন সরলরৈখিক বিশ্বাস বিপজ্জনক।
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মূল্যায়নের যে ব্যবস্থা চালু হইতে চলিয়াছে, তাহাকে এই প্রেক্ষিতেই বিচার করিতে হইবে। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকরা ক্ষমতার উচ্চাবচ সম্পর্কের শীর্ষপ্রান্তে থাকিবেন, ইহাই দস্তুর। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাহার ব্যতিক্রম নহে। ক্লাসে কোনও ছাত্র একাধিক প্রশ্ন করিলে বিরক্তি প্রকাশ করা, তাহাকে চুপ করাইয়া দেওয়া সবই সাধারণ অভ্যাস। হয়তো কিছু শিক্ষক ব্যতিক্রম, কিন্তু তাঁহারা ব্যতিক্রমই। এই পরিস্থিতিতে ছাত্ররা কি শিক্ষকের নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করিতে পারিবে? ভীতি, ক্রোধ বা অন্য কোনও আবেগ প্রকৃত মূল্যায়নের পথ রোধ করিবে না তো? রাজনীতির প্রশ্নটিও বিবেচ্য। পশ্চিমবঙ্গের সমাজ রাজনীতির রঙে বিভক্ত। কোন শিক্ষক কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক, তাহার উপরও মূল্যায়নের চলন নির্ভর করিতে পারে। ছাত্রদের সংগঠন ছাত্রদের উপর চোরাগোপ্তা চাপ দিতে পারে। সম্ভাবনাগুলি উড়াইয়া দিবার নহে। অনেক ছাত্রই নিয়মিত ক্লাস কামাই করিয়া থাকে। তাহাদের যদি শিক্ষকের মূল্যায়ন করিবার ক্ষমতা থাকে, তবে তাহা বিপজ্জনক। কারণ, তাহাদের সেই যোগ্যতা নাই। আবার, মূল্যায়নের খাতায় ভাল ‘ফল’ করিতে কোনও কোনও শিক্ষক বাঁকা পথে ছাত্রদের প্রিয় হইয়া উঠিবার চেষ্টা করিতে পারেন। ক্লাসে ‘নোট’ দেওয়া, পরীক্ষার ‘সাজেশন’ বানাইয়া দেওয়া অযোগ্য ছাত্রদের নিকট প্রিয় শিক্ষক হইয়া উঠিবার এইগুলিই সহজ পথ। ফলে, শিক্ষকদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা চালু হইলে প্রত্যাশিত ফলের বিপরীত হওয়া আশ্চর্যের নহে। শিক্ষকদের মূল্যায়নের আদর্শটি অতি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু যতক্ষণ না উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হইতেছে, আদর্শটি সযত্নে তাকে তোলা থাকুক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.