পরীক্ষার উত্তরপত্র ‘রিভিউ’ করার অর্থ নিছক নম্বরের যোগ-বিয়োগ দেখা নয়। কিংবা কোনও প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রে নম্বর দেওয়া হয়েছে কি না, শুধু সেটা দেখাও নয়। ‘রিভিউ’ মানে ‘রিভ্যালুয়েশন’। অর্থাৎ পুনর্মূল্যায়ন। রিভিউ করতে হলে এ বার থেকে পুনরায় সেই খাতা দেখার কাজটাই করতে হবে বলে বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এত দিন যে-ভাবে রিভিউ করছিল, তা যে আর চলবে না, আদালত এ দিন সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছে। বিচারপতি তপন দত্ত ও বিচারপতি সোমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিয়েছে, রিভিউ বা আক্ষরিক অর্থেই পুনর্মূল্যায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে এ বার একটি ‘গাইডলাইন’ বা নির্দেশিকা তৈরি করতে হবে। কোনও পরীক্ষার্থী রিভিউয়ের আবেদন করলে তাঁর উত্তরপত্রের পুর্নমূল্যায়ন করতে হবে সেই নির্দেশিকা মেনেই।
রিভিউয়ের আবেদন এলে এত দিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সকলেই উত্তরপত্রটি পরীক্ষা করে দেখত, নম্বরের যোগে ভুল হয়েছে কি না। কোনও প্রশ্নের উত্তরে নম্বর না-দিলে সেটাও শুধরে নেওয়া হত। অনেক সময় এমনও দেখা গিয়েছে, উত্তরপত্রে যে-নম্বর রয়েছে, তা মার্কশিটে ওঠেনি। রিভিউ বলতে প্রধানত এটুকুই করা হত। পরীক্ষার্থীরা প্রাপ্ত নম্বরে খুশি না-হলে উত্তরপত্র দেখতে চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করতেন। অনেক ক্ষেত্রে হাইকোর্ট উত্তরপত্রটি আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিত। উত্তরপত্র হাজির করা হলে দেখা হত, যোগে ঠিক আছে কি না। প্রশ্নের উত্তরে নম্বর দেওয়া হয়েছে কি না। উত্তরপত্রের নম্বর মার্কশিটে যথাযথ ভাবে তোলা হয়েছে কি না।
এর আগে দু’-একটি মামলায় হাইকোর্ট পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশও দিয়েছে। তবে তা একেবারেই ব্যতিক্রম। এত দিন হাইকোর্টের বক্তব্য ছিল, বিচারপতিরা অবশ্যই বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ নন। তাই তাঁরা পুনর্মূল্যায়ন করতে পারেন না। কিন্তু এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, হাইকোর্ট পুনর্মূল্যায়ন করবে না। পরীক্ষা গ্রহণকারী সংস্থাকেই উত্তরপত্রের আদ্যন্ত পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।
লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের ইংরেজি অনার্সের ছাত্রী আবেরী মুখোপাধ্যায় পার্ট থ্রি পরীক্ষায় পাঁচ নম্বর কম পাওয়ায় প্রথম শ্রেণি থেকে বঞ্চিত হন। কোর্টে মামলা করেন তিনি। আবেদনকারিণীর আইনজীবী জয়দীপ আচার্য বলেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চকে জানায়, রিভিউ করে তাঁর মক্কেলের দু’নম্বর বেড়েছে। কিন্তু পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। আবেদনকারিণী ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেন। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, গাইডলাইন তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়কে রিভিউয়ের সময় উত্তরপত্র পুনঃপরীক্ষা করতে হবে। |