প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পুরো স্কুলশিক্ষা এখন পরিচালনা করে তিনটি সংস্থা। এ বার সেটাকে দু’টি সংস্থার হাতে দেওয়ার সুপারিশ করেছে কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম)। তারা বলছে: • মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে মিলিয়ে দিয়ে একটি সংস্থা গড়া হোক।
• অবলুপ্তি ঘটানো হোক প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন তদারকির দায়িত্ব ন্যস্ত করা হোক রাজ্য শিক্ষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ পরিষদ (এসসিইআরটি)-এর উপরে। ‘পশ্চিমবঙ্গে স্কুলশিক্ষার পুনর্বিন্যাস’ কেমন হওয়া উচিত, সেই ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার জন্য ২০১০ সালের অগস্টে আইআইএম-কে দায়িত্ব দিয়েছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। আইআইএমের ছ’জন শিক্ষক এই বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করে সম্প্রতি পেশ করেছেন রাজ্য সরকারের কাছে। তাতেই পুরো স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থাকে দু’টি সংস্থার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।
কেন্দ্রের শিক্ষার অধিকার আইন রূপায়ণের জন্য প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে একই সংস্থার অধীনে এনে সুসংহত চেহারা দেওয়া দরকার। কিন্তু ওই আটটি শ্রেণির মধ্যে এখন প্রথম থেকে পঞ্চমের দায়িত্ব রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের হাতে। আর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি রয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অধীনে। আইআইএম সুপারিশে বলেছে, এসসিইআরটি-কে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদটাই তুলে দেওয়া হোক।
ষষ্ঠ থেকে অষ্টম ছাড়াও এখন নবম-দশমের দায়িত্বে রয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। আইআইএমের সুপারিশ, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির ভার এসসিইআরটি-র হাতে দেওয়ার পরে শুধু নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা পরিচালনা ও পরীক্ষা নেওয়ার জন্য দু’টি পৃথক সংস্থার প্রয়োজন নেই। তাই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে মিলিয়ে দিয়ে একটি সংস্থা গড়া হোক। স্কুল পরিচালনার কাজও দেখবে তারা।
পরিকাঠামো বাড়ানোর সুপারিশ করার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান পরিকাঠামোকে আরও ভাল ভাবে ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছেন আইআইএমের শিক্ষকেরা। রাজ্যের শিক্ষা পর্ষদ ও সংসদগুলির পুনর্গঠনের ব্যাপারে তাঁদের যুক্তি, কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে সব শিশুকেই। সেই জন্য ওই পর্বের সব ক’টি শ্রেণিকে একই নিয়ন্ত্রক সংস্থার আওতায় আনা দরকার। সেই কারণেই এখন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ভাগাভাগি করে যে-দায়িত্ব পালন করে, তা একটি সংস্থার হাতে ন্যস্ত করা প্রয়োজন। এসসিইআরটি একক ভাবে ওই দায়িত্ব পালন করতে পারবে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। ওই রিপোর্ট তৈরির সঙ্গে যুক্ত আইআইএমের এক শিক্ষক বলেন, “এসসিইআরটি এখন কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে রয়েছে। রাজ্য সরকার আমাদের সুপারিশ মানলে ওই সংস্থাকে কাজে লাগানো যাবে।”
রাজ্য সরকার এই সুপারিশ মানলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দায়িত্ব অনেকটাই কমে যাবে। শুধু নবম-দশম শ্রেণি থাকে তাদের আওতায়। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদও শুধু একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্ব পালন করে। তাই চারটি শ্রেণির জন্য দু’টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা না-রেখে পর্ষদ ও সংসদ মিশিয়ে দেওয়াই ভাল বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
সমীক্ষকদের সুপারিশ, স্কুলে শিক্ষকদের অন্তত পাঁচ ঘণ্টা থাকতে হবে। রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়েছে, জনশুমারি, প্রতি বছর ২০ দিনের বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ, বেতন সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি-সহ নানা কাজে শিক্ষকদের ব্যবহারের জেরে পঠনপাঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আইআইএমের রিপোর্ট সম্পর্কে রাজ্য সরকারের মনোভাব কী?
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, এখনও এই নিয়ে ভাবনাচিন্তা হয়নি। আজ, শুক্রবার এক সভায় এই ব্যাপারে আলোচনা হবে।
|