দুপুর ৩টে পর্যন্ত সৌমিতা দেবী জানতেনই না যে তাঁর স্বামী কলকাতায় নার্সিংহোমে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বিধ্বংসী আগুনে মারা গিয়েছেন। অথচ শুক্রবার সকালেই অমিতাভ দাসের মৃত্যু সংবাদ পৌঁছে গিয়েছিল মালদহ সেচ দফতরে। মৃত্যুর খবর জানার পরেও আত্মীয় কিংবা সেচ দফতরের কেউই সেই দুঃসংবাদ তাঁর স্ত্রী সৌমিতা দেবীকে জানানোর সাহস পাচ্ছিলেন না। পাছে ফের কোনও অঘটন ঘটে। পাড়ার কয়েকজন প্রতিবেশী গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন কলকাতার উদ্দেশ্যে। দুপুর থেকেই সেচ দফতরের সরকারি আবাসনে দেখা গেল সি-৮ কোয়ার্টার ঘিরে জটলা। শোকস্তব্ধ আত্মীয়, সহকর্মী, প্রতিবেশীরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। সকলের চোখেই জল। কোয়ার্টারের দিকে এগোতেই বাধা দিয়েছেন কয়েকজন সহকর্মী ও আত্মীয়। একটাই অনুরোধ, “ওই কোয়ার্টারে যাবেন না। এখনও আমরা ওঁর স্ত্রীকে কিছুই জানাইনি।” |
সহকর্মীরা জানালেন, দু’মাস আগে চিকিৎসার জন্য অমিতাভবাবুকে আমরিতে ভর্তি করা হয়। টানা দু’মাস আইসিইউতে থাকা পরে বুধবারই অপারেশন হয়েছিল। সফল অপারেশন হওয়ার পরই বৃহস্পতিবারই সকালে তাঁকে ২১২ নম্বর বেডে স্থানান্তরিত করা হয়। রাতে অগ্নিকান্ডে অমিতাভ দাসের মৃত্যু হয়। স্বামীকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় পাঠিয়ে দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে সেচ দফতরের কোয়ার্টারেই থাকতেন। শিশুদের একজনের বয়স আড়াই। অন্যজনের চার মাস। অপারেশনের পর সকালে স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সৌমিতা দেবী। সকাল থেকে বাড়ির সামনে জটলা দেখে মনের মধ্যে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল তাঁর। ভেবেছিলেন হয়তো বা স্বামীর কোনও অঘটন ঘটেছে। জানতেও চেয়েছিলেন প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের কাছে। কিন্তু কেউ তাঁকে কিছুই জানাতে চাননি। শেষ পর্যন্ত আত্মীয়ের কাছ থেকে শোনার পরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সৌমিতা দেবী। আগুনে পুড়ে স্বামী মারা গিয়েছেন সেটা বিশ্বাসই ভাবতেই পারছেন না। স্বামী মারা যাওয়ার খবর শোনার পরে তিনি একটাই কথা বলে চলেছেন, “কালকেই তো আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। ও তো সুস্থ হয়ে গিয়েছিল। ও মরতেই পারে না।” মৃত্যুর খবর জানানোর পরেই আত্মীয়, প্রতিবেশীরা আর দেরি না করে সৌমিতা ও তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে গাড়ি করে কলকাতা রওনা দেন। সৌমিতা জানলেও আড়াই বছরের অভিমিতা ও ৪ মাসের মিঠি জানেই যে তাঁদের বাবা আর বেঁচে নেই। অমিতাভবাবুর বাবা সুভাষ দাস সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। কর্মরত অবস্থায় তিনি মারা যাওয়ার পর প্রায় ১৯ বছর আগে সেচ দফতরেই করণিকের চাকরি পান অমিতাভবাবু। তিন মাস আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকেরা তাঁকে আমরিতে ভর্তি করেন। পরিবারটি আদতে মালদহের চাঁচলের ট্যান্ডেলপাড়ার বাসিন্দা। সেখানে অমিতাভবাবুদের বৃহৎ একটি মার্কেট কমপ্লেক্স রয়েছে। একমাত্র ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর চাঁচলের ট্যান্ডেলপাড়ার বাড়ি বেশ কিছুদিন ধরেই তালাবন্ধ। মা কল্যাণী দেবী ও বিবাহিত দিদি লোপামুদ্রা কিছুদিন ধরেই রয়েছেন কলকাতার সেলিমপুরের বাড়িতে। অমিতাভবাবুর খুড়তুতো দাদা তথা চাঁচল পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য পীযূষ দাস বলেন, “চিকিৎসার জন্য দেড় মাস ধরে কলকাতায় ছুটতে হচ্ছিল। ১৬ লক্ষ টাকা খরচ করেও ভাইকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারলাম না। এর দায় কার?” |