|
|
|
|
দমকল-বিধির তোয়াক্কা করে না হাসপাতালও |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন প্রান্তে অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি বেশ কিছু নার্সিংহোমের আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন রোগীদের আত্মীয়স্বজন ও স্বাস্থ্যকর্তারা। তবে শুধু নার্সিংহোমই নয়, সরকারি হাসপাতালগুলিরও একই অবস্থা। মুর্শিদাবাদ জেলার বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে অগ্নিনির্বাপক কোনও ব্যবস্থা নেই। আগুন থেকে বাঁচতে সরকারি হাসপাতালগুলিরও কোনও ব্যবস্থা নেই। এ ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য দফতরেরও বিশেষ হেলদোল রয়েছে, এমন নয়।
বছর খানেক আগে শর্ট-সার্কিট থেকে বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতালে আগুন ধরে যাওয়ায় কালো ধোঁয়ায় ভরে ওঠে হাসপাতাল চত্বর। হাসপাতাল জুড়ে রোগী ও রোগীর বাড়ির আত্মীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকায় দমকল দফতরের কর্মীদের উপরেই শেষ পর্যন্ত নির্ভর করে থাকতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। পরে ওই বিভাগের কর্মীরা এসে আগুন নেভায়। কিন্তু ওই ঘটনার পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও হুঁশ ফেরেনি।
বহরমপুর দমকল দফতরের ওসি কাজলকুমার নন্দী বলেন, “ডিভিশন্যাল অফিসার বা ডিডি পদমর্যাদার অফিসার এই ধরণের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে। দমকলের বহরমপুর দফতর থেকে তা দেওয়া হয় না। এমনকী ডিভিশন্যাল অফিস ব্যারাকপুর থেকেও যদি নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে দেওয়ার আগে আমাকে সরজমিনে তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠানোর কথা জানানো হত। কিন্তু এই ধরণের কোনও রিপোর্ট আমাকে পাঠানোর কথা জানানো হয়নি।” ফলে দমকল দফতরের ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের কাছে থাকা নিয়েই প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে।
তবে কলকাতার বেসরকারি নার্সিংহোমের অগ্নিকাণ্ডের পরে বেসরকারি সমস্ত হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিতে দমকল দফতরের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট আছে কিনা এবং প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট পাঠানোর জন্য ডিভিশন্যাল অফিস থেকে মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।জেলার সমস্ত বেসরকারি নার্সিংহোম ও হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও জেলাপ্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা বলেন জেলার দুই মন্ত্রী কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তী ও তৃণমূলে সুব্রত সাহা।
কৃষ্ণনগরে দমকলের ওসি হরলাল সরকার বলেন, “আমি শহরের বেশ কয়েকটি নার্সিংহোমে আগে গিয়েছি। কোথাও আগুন নেভানোর সামান্য বন্দোবস্তও কিছু নেই। কোনও শর্তই সেখানে মানা হয় না।” তাঁর কথায়, “নার্সিংহোমের লাইসেন্স এবং এনওসি আমাদের কলকাতার সদর দফতর থেকে দেয়। কিন্তু শহরের কোনও নার্সিংহোম সেখান থেকে তেমন কোনও লাইসেন্স বা এনওসি এনেছে বলে আমার অন্তত জানা নেই।”
তবে এএমআরআইয়ের ঘটনার পরে অস্বস্তিতে পড়েছেন অনেক নার্সিংহোমের মালিকেরাও। তাঁদের অবশ্য দাবি, প্রশাসনের তরফে কখনওই আগুন নেভানোর ব্যবস্থা রয়েছে কি না, তা জানার জন্য উদ্যোগ ছিল না। শহরের একটি নামি নার্সিংহোমের মালিক সব্যসাচী সাহা বলেন, “১৯ বছর ধরে নার্সিংহোম চালাচ্ছি। কেউ কোনওদিন দমকলের লাইসেন্স দেখতে চাননি। স্বাস্থ্য দফতর থেকেও এই ধরনের লাইসেন্স রয়েছে কি না, তা কোনওদিন জানতে চাওয়া হয়নি। তাই আমাদের বিষয়টি জানাই ছিল না।” তবে তাঁরা এখন সতর্ক। নার্সিংহোমের মালিক মহাদেব ঘোষ, রমেন সরকারেরা বলেন, “কেউ কোনওদিন এই ব্যাপারে কিছু বলেননি বলে আমরাও নিশ্চেষ্ট ছিলাম। কিন্তু এখন আমরা দেখছি, যাতে আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে।” তবে তাঁদের বক্তব্য, যে সব বাড়িতে নার্সিংহোম করা হয়েছে, সেগুলির কিছু ত্রুটি রয়েছে। যেমন কোনওটির সিঁড়ি সরু। কোনওটি খুব ঘিঞ্জি এলাকায়। শহরের স্থানীয় বাসিন্দা সুজয় সরকার বলেন, “বেশিরভাগ নার্সিংহোমেই আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। তার মধ্যেই রোগীদের রাখা হয়। যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।”
জেলাশাসক অভিনব চন্দ্রা বলেন, “এ বার আমরা প্রতিটি নার্সিংহোমে গিয়ে আলাদা আলাদা করে দেখব আগুন নেভানোর ব্যবস্থা কোথায় কী রয়েছে।”
শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের মতো বড় হাসপাতালে মাত্র ৭টি অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার রয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালে গড়ে দিনে তিনশো প্রসূতি ও দু’শো সদ্যোজাত থাকে। অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার রয়েছে ৪টি। প্রবেশ পথও মাত্র একটি। ফলে কোনও কারণে আগুন লেগে গেলে আগুন নেভানো তো দূরের কথা, রোগীদের বার করে নিয়ে যাওয়াটাই শক্ত হয়ে যাবে। জেলা হাসপাতালের সুপার কাজল মণ্ডল বলেন, “দমকল বিভাগের কোনও লাইসেন্স বা এনওসি নেওয়ার কোনও প্রয়োজন এতদিন আমাদের হয়নি। তাই তা নেওয়াও হয়নি।”
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা অমিত হালদারের কথায়, “এ বার থেকে জেলার সব হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্র যাতে নিয়ম মেনে চলে তার ব্যবস্থা করা হবে।” |
|
|
|
|
|