|
|
|
|
খবরের কাগজ কী করে লুকোব, দুশ্চিন্তা স্বামীর |
সুনন্দ ঘোষ • কলকাতা |
নিছকই কাকতালীয়!
২০১০ সালের ২৩ মার্চ। স্টিফেন কোর্টের আগুন কেড়ে নিয়েছিল শৈলেন এবং কবিতা বারিকের একমাত্র সন্তান, ২১ বছরের সৌরভকে। বারিক দম্পতি তাঁদের দত্তক সন্তানের অভিভাবকত্ব পেলেন ২০১১-র ৯ ডিসেম্বর, আমরি-অগ্নিকাণ্ডের দিন। দিনটা তাই আর আনন্দের রইল না শুধু। আমরির ঘটনা এক বছর ৮ মাস ১৬ দিন আগের দুঃসহ স্মৃতি খুঁচিয়ে তুলল ইছাপুরের মাঝেরপাড়া নারকেলবাগানের ছোট্ট দোতলা বাড়িটায়।
সকালে বাজারে গিয়ে আমরি-র খবরটা কানে এসেছিল বছর একান্নর শৈলেনবাবুর। তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরে এসে টিভি-র পিছন থেকে কেব্ল-এর তারটা খুলে দিয়েছেন। কবিতাদেবী ‘সুইচ অন’ করলেও টিভি যাতে না চলে। ইছাপুর ‘গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি’র কর্মী শৈলেনবাবু ফোনে বললেন, “খবরের কাগজের পাতায় অগ্নিকাণ্ডের ছবি দেখলে, আমি না হয় সহ্য করে নেব। কিন্তু কবিতা তো কেঁদে আকুল হয়ে যাবে। কী যে করব, শনিবার সকালের খবরের কাগজটা নিয়ে!” |
|
দত্তক সন্তানের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী। ছবি: সুদীপ ঘোষ |
শৈলেন-কবিতার ছেলে সৌরভ ছিলেন বেসরকারি সংস্থার অ্যাকাউন্টস বিভাগের কর্মী। স্টিফেন কোর্টে আগুন লাগার পরে চার তলার বারান্দা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মাটিতে। সৌরভের নিথর দেহ নিয়ে গিয়ে রাখা হয় পার্ক স্ট্রিটের এক নার্সিংহোমের মর্গে। সন্ধ্যায় পার্ক স্ট্রিটে পৌঁছে প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা ধরে পাগলের মতো ছেলের খোঁজ করেছিলেন বাবা-মা। শেষে পৌঁছন সেই নার্সিংহোমে। তার পরে জীবনটাই পাল্টে যায় তাঁদের।
ঘটনার আকস্মিকতার ধাক্কা খানিকটা কাটার পরেও স্বাভাবিক হতে পারেননি কবিতা দেবী। মানসিক অবসাদ বেড়েই চলছিল। আত্মীয়-বন্ধুরা পরামর্শ দিলেন একটি শিশু দত্তক নিতে। কল্লোল, বারিক দম্পতির দত্তক-সন্তান। ২০১১ সালের ২১ মে তাকে হাতে পেয়েছেন তাঁরা। কবিতাদেবী এখন আগের চেয়ে অনেকটা ভাল। ফোনে বললেন, “আমার এই ছেলে বেশি দুষ্টু।” ২৫ ডিসেম্বর চার বছরে পা দেবে কল্লোল। তার স্থায়ী অভিভাবকত্ব পাওয়ার জন্য এ দিনই বারাসত আদালতে গিয়েছিলেন বারিক-দম্পতি। তার আগেই সকালে শৈলেনবাবুর কানে এসেছে আমরি-তে অগ্নিকাণ্ডের খবর। শৈলেনবাবুর অনুরোধ, “অগ্নিকাণ্ড নিয়ে যা কথা বলার আমার সঙ্গে বলুন। কবিতার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বললে আচমকা আবার অবসাদ আসতে পারে।” সৌরভের স্মৃতিতে এখনও চোখ থেকে জল ঝরে কবিতা দেবীর। শৈলেনবাবু বলেন, “সৌরভের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এমন যা কিছু ছিল, সবই চিলেকোঠার ঘরে তালাবন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু কী জানেন, ছেলেটা আলু-পোস্ত খেতে বড্ড ভাল বাসত। রান্নাঘরের আলু-পোস্ত তো আর চিলেকোঠায় বন্ধ রাখতে পারি না!”
টিভির তার খুলে দিয়ে এ দিনের মতো কবিতার কাছ থেকে আমরির ঘটনা গোপন রেখেছেন শৈলেনবাবু। কিন্তু পরের দিন খবরের কাগজ কী ভাবে লুকোবেন, ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। কল্লোলের অভিভাবকত্ব পাওয়ার খুশির মধ্যে কাঁটা হয়ে বিঁধছে একটাই প্রশ্ন, “আজ আমাদের একটা খুশির দিন। কিন্তু আজই ফের কেন আগুন কেড়ে নিল এত নিরীহ প্রাণ? কোথাও কি কোনও অভিশাপ কাজ করছে?” |
|
|
|
|
|