অস্ত্রোপচারের পরে বৃহস্পতিবারই প্রথম চোখ মেলেছিলেন। কথাও বলেছিলেন স্ত্রী’র সঙ্গে। দামি হাসপাতালে খরচের চাপ সামলাতে না পেরে বাড়ির কাছে কোনও হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করানোর কথা ভেবেছিলেন পরিবারের লোকেরা। কিন্তু শুক্রবারের ঘটনা সমস্ত কিছুই এলোমেলো করে দিয়েছে। নদিয়ার কল্যাণীর গ্রাম কাঁচরাপাড়া পঞ্চায়েতের বীরপাড়ার সরকার বাড়িতে এখন শুধুই শোকের আবহ।
দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছিলেন বীরপাড়ার কাশীনাথ সরকার (৪৮)। ছা-পোষা পরিবার। ধার-দেনা করে আমরিতে ভর্তি করিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা। অপারেশন হয়েছিল। জ্ঞানও ফেরে। চারতলার ৫৬ নম্বর শয্যায় আনা হয় বৃহস্পতিবারই। চোখ মেলে স্ত্রী’ শিপ্রাদেবীর সঙ্গে ইশারায় সামান্য কথাও হয়। এত বড় হাসপাতালের খরচখরচা নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন। ‘ও সব নিয়ে ভাবতে হবে না’ বলে তখন সান্ত্বনা দেন শিপ্রাদেবী। কিন্তু তার পর বাড়ির কাছাকাছি কোনও হাসপাতালে স্বামীকে নিয়ে আসা যায় কি না তা নিয়ে ভাবন-চিন্তা শুরু হয়। |
শুক্রবার সকালেও শিপ্রাদেবীরা বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন কাশীনাথবাবুর সঙ্গে দেখা করার জন্য। সঙ্গে ছিলেন দেওর রবীন সরকার। পথেই ফোন পান রবীনবাবু, হাসপাতালে আগুন লেগেছে। ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন বহু রোগী। বুকটা তখন দুরু দুরু করে উঠেছিল। রবীনবাবু বলেন, “ সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা থেকেই বাড়িতে ফোন করে বলি, টিভিতে খবর দেখতে। তারপর তো একের পর এক মৃত্যুর ঢল।”
এ দিন দুপুরেই হাসপাতালে গিয়ে স্বামীর দেহ শনাক্ত করেছেন শিপ্রাদেবী। তিনি বললেন, “অনেক টাকা বিল হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের আগেই টাকা দিতে হয়েছিল। ইতিমধ্যেই প্রায় তিন লক্ষ টাকা বিল মিটিয়েছি। আর পারছিলাম না। অপারেশনের পরেই ওই হাসপাতাল থেকে বাড়ির কাছে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে আসব ভেবেছিলাম। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।”
গত ২৫ নভেম্বর ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসায়ী কাশীনাথবাবু দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর চোট পান। তাঁকে প্রথমে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন এমআরআই করানোর। ‘ভাল চিকিৎসা’র কথা ভেবেই নামী বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাড়ির লোকেরা। ভর্তি করানো হয়েছিল ঢাকুরিয়ার আমরি’তে। এমআরআই করানো হয়। তারপরে মস্তিষ্কে জটিল অস্ত্রোপচারও হয়।
অন্যদিকে, ২০৭/৯৭ বিটি রোডের বাসিন্দা বিদ্যুৎ কর্মী ছন্দা পাড়িয়ারও (৫২) মৃত্যু হয়েছে আমরি হাসপাতালে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। পেসমেকারটি বদলের কথা ছিল তাঁর। কিন্তু আগুন তাঁর প্রাণও কেড়ে নিয়েছে। |