|
|
|
|
ফেরা হল না |
টিভিতে জানা গেল খারাপ খবরটা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শ্যামপুর |
শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ কলকাতার এক বন্ধুর মোবাইল থেকে ফোন এসেছিল দেবু সেনের কাছে। তিনি বলেছিলেন, “টেলিভিশনটা একবার দেখ।” দেশে বড় কোনও অঘটন ঘটেছে ভেবে বিছানা ছেড়ে চটপট উঠে পড়েছিলেন দেবুবাবু। তাঁর কথায়, “টেলিভিশন খুলে দেখি আমরিতে আগুন লেগেছে। প্রাণ হারিয়েছেন বহু রোগী। আমার মাথায় হাত। কারণ, ওখানে ভর্তি রয়েছেন আমার দাদা শিশির সেন। আশঙ্কায় বুক কেঁপে উঠল আমার। সবাইকে ঘুম থেকে তুলে টেলিভিশনের সামনে বসে গেলাম।”
আশঙ্কা সত্যি হল দেবুবাবুর। হাওড়ার শ্যামপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক শিশির সেন (৭৬)-এর মৃত্যুসংবাদ তাঁরা পান সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ। শিশিরবাবুর বাড়ি শ্যামপুরেরই রামনগরে। তাঁর বাড়িতে এ দিন দুপুরে গিয়ে দেখা যায় দলমত নির্বিশেষে গ্রামবাসীরা ভিড় করেছেন। তাঁর স্ত্রী দেবশ্রীদেবী ভেঙে পড়েছেন কান্নায়।
টেলিভিশনে আমরিতে আগুন লাগার খবর পেয়েই শিশিরবাবু ছেলে অভিজিৎ কয়েকজন প্রতিবেশীকে নিয়ে রওনা দেন কলকাতার দিকে। পরে পরেই রওনা দেন এলাকার কংগ্রেস কর্মীরা। দেবুবাবু বলেন, “আমরা কয়েকজন বাড়িতেই ছিলাম। আমাদের এক জামাই কলকাতায় চাকরি করেন। তিনিও খবর পেয়ে সোজা হাসপাতালে চলে যান। তবে টেলিভিশনে আমরা কয়েকজন মৃতের ছবি দেখি। একজনকে দাদা বলে সন্দেহ হয়। কিছু ক্ষণ পরে ওই জামাই সরাসরি হাসপাতাল থেকে দেহ শনাক্ত করে আমাদের দাদার মৃত্যুর খবর দেন।” দেবশ্রীদেবী বলেন, “আমাকে টেলিভিশনের সামনে বসতে দেওয়া হয়নি। ছেলেকে মোবাইলে ফোন করলাম। সে বলল, ‘মনে হচ্ছে খবর ভাল হবে না।’ সেটাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হল!” |
|
ছবি: হিলটন ঘোষ। |
মাসখানেক আগে এসএসকেএম হাসপাতালে শিশিরবাবুর বুকে কৃত্রিম হৃদযন্ত্র বসানো হয়েছিল। বাড়িতেই ছিলেন তিনি। গত ২৬ নভেম্বর তাঁর ৩৮ বছরের ভাইপো কল্লোল মারা যান। সেই ঘটনার পরেই শোকে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয় এক চিকিৎসক তাঁকে বড় কোনও হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। ৩০ নভেম্বর তাঁকে আমরিতে ভর্তি করানো হয়। তিনি ছিলেন চারতলার ২৪৪২ নম্বর বেডে।
পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক শিশিরবাবু ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত বিধায়ক ছিলেন। কংগ্রেসের টিকিটে তিনি একাধিকবার শ্যামপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আর জিততে পারেননি। কিন্তু শ্যামপুর ব্লক কংগ্রেস একজন সভাপতি হিসাবে সর্বজনশ্রদ্ধেয় ছিলেন। প্রদেশে কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে তাঁর ছিল অবাধ যাতায়াত। শ্যামপুরের আপামর মানুষের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘শিশিরদা’ হিসাবে। শ্যামপুরে অধিকাংশ কংগ্রেস নেতা কর্মী তৃণমূলে চলে গেলেও শিশিরবাবু বরাবরই নিষ্ঠার সঙ্গে দলের পাশে থেকেছেন। কংগ্রেসের প্রতিটি কর্মসূচিতে তিনি যোগ দিতেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার একদিন আগেও তিনি বিডিও অফিসের স্মারকলিপি দেওয়ার দলীয় কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন।
এ দিন তাঁর মরদেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, বিধানসভার স্পিকার বিমান মুখোপাধ্যায়, বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র প্রমুখ। তাঁর আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ শনিবার এআইসিসি-র তরফে পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদের আসার কথা শিশিরবাবুর বাড়িতে। এ কথা জানিয়েছেন, মরদেহের সঙ্গে আসা আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র। শুক্রবারই বাড়ি ফেরার কথা ছিল শিশিরবাবুর। কিন্তু ভাইপোর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল এ দিনই। দেবুবাবু বলেন, “ভাইপোর মৃত্যুতে তিনি শোক পেয়েছেন। তার উপরে আবার এ দিন শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। দাদাকে শনিবার আনার সিদ্ধান্ত হয়।” তার আগেই অবশ্য তিনি ‘ফিরে’ এলেন শববাহী গাড়িতে। |
|
|
|
|
|