|
|
|
|
|
|
|
মনোরঞ্জন... |
|
নিজের মুখোমুখি |
একমাত্র ‘বেডরুম’-এই। যেখানে সব আড়ালের শেষ। শহুরে শরীর নয়। শহুরে মনের কথা। ভন্ডামির আড়ালে যন্ত্রণার
কথা। কলাকুশলীদের সঙ্গে আড্ডা মেরে শোওয়ার ঘরের গল্প পত্রিকার পাতায়। তুলে আনলেন শমীককুমার ঘোষ |
‘বেডরুম’।
শব্দটা শুনলেই মনের কোণে উদ্দাম ইঙ্গিত। আদিম সুড়সুড়ি।
সেটা যদি আবার হয় হালফিলের বাংলা ছবির নাম?
তা হলে তো কথাই নেই!
আরও আছে।
মৈনাক ভৌমিক পরিচালিত এই ছবিতে এক ঝাঁক তারকা অভিনেতাদের নামের মধ্যে জ্বলজ্বল করছে পাওলি দামের নাম। ‘ছত্রাক’-এর যে দৃশ্যের পর তিনি আর উদ্দাম যৌনতা শব্দ দু’টো প্রায় এক করে ফেলেছে বাঙালি...
কিন্তু এ কী! উদ্দামতার সেই আগুনে তো জল ঢালছেন ছবির অন্যতম নায়ক আবির চট্টোপাধ্যায়। এ ছবিতে পাওলির বিপরীতে তো তিনিই। “‘বেডরুম’ নাম হলেও যৌনতার গন্ধ খুঁজবেন না একদম। এ ছবি আজকের যুগের তিনটি আধুনিক শহুরে কাপলের সম্পর্কের টানাপোড়েন।”
সে কী! ‘বেডরুম’-এর ভেতরে শুধুই সম্পর্কের জটিলতা? কাগজের পাতায় রুদ্রনীল ঘোষ-উষশীর গাঢ় চুম্বন-দৃশ্যর উপস্থিতি দশর্কের স্মৃতিতে এখনও ভীষণ সতেজ, প্রাণবন্ত যে। উষশী বলছেন, ‘হ্যাঁ সে দৃশ্য অবশ্যই আছে। কিন্তু যৌনতা নয়, এ ছবি আসলে চার নারীর জীবনযুদ্ধ জয়ের গল্প। আমি, পার্নো, পাওলি, তনুশ্রী। চার পাওয়ার উইমেন। যারা নিজেদের মতো বাঁচে, সম্পর্কও মেনটেন করে নিজেদের টার্মস-এ।”
“এক গুচ্ছ কপোত-কপোতি ছবি জুড়ে। তার মানেই কাঁচামিঠে নরম বাঙালি প্রেম ধরে নেবেন না প্লিজ। এ ছবি খুব স্পষ্ট বাস্তবের কথা বলে। সম্পর্কের বদলে যাওয়া, ভন্ডামি, হিপোক্রেসির সঙ্গে সত্যের আপস দেখায়। যার প্রকৃত উন্মোচন হয় বেডরুমের একান্তে।” বললেন পরিচালক মৈনাক। |
|
‘বেডরুম’-এ আবির আর পাওলি |
তাঁর আরও ব্যাখ্যা, “ধরে নিন, অফিসে বা বন্ধুমহলে এক জন নামী আঁতেল। বিদেশি উদারতায় বিশ্বাসী। গদার-ত্রুফোঁ-বার্গম্যান ছাড়া সিনেমা দেখেন না। লিভাইস-নাইকি ছাড়া পরেন না। বাড়ি ফিরে তিনিই আবার লুঙ্গি পরে ডাল-ভাত খান। বাংলা মদ খান। বেডরুমে ঢুকে টিভি চালিয়ে গোবান্দার ‘কুলি নাম্বার ওয়ান’ খুলে বসেন। আর বৌ পেটান। তার পর সকাল হলে বৌয়ের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে আঁতেল হয়ে সেজেগুজে বেরিয়ে যান।”
মৈনাকের বক্তব্য, মানুষের এই আসল নগ্ন চেহারাটা চেনার এক মাত্র জায়গা বেডরুমই। ‘বেডরুম’ সিনেমার গানও তাই বলছে ‘আসলে অন্তর আমার ঠুনকো ঠুনকো বেডরুম, ছায়া ফেলে অন্তঃস্থলে উস্কোখুস্কো বেডরুম।’ কিংবা, ‘আয়নার কাঠগোড়ায় রোজ যে অপরাধী দেখতে পাই।’ যে গান এক ঝটকায় রোজকার নিয়মমাফিক মধ্যবিত্ত ভড়ংকে ধাক্কা মেরে দাঁড় করায় প্রচন্ড বাস্তবের সামনে।
“এ ছবিতে গান দিয়ে দর্শককে ধাক্কাই দিতে চেয়েছে মৈনাক। আমিও কথা-সুরে সেই চেষ্টাটা করেছি। শ্রুতিমধুর, প্যানপ্যানে, নরম প্রেমের গান এই সিনেমার আঙ্গিকের সঙ্গে যায় না,” ব্যাখ্যা ছবির সুরকার জুটির অন্যতম রক-গায়ক রূপম ইসলামের। ‘মহানগর@কলকাতা’য় সুর করে জাতীয় পুরস্কার। তার পর এই ‘বেডরুম’। রূপমের সঙ্গে এ বার আছেন তাঁর ব্যান্ড ‘ফসিলস’-এর অ্যালেন-ও।
হালফিলের বাংলা ছবির গানের গ্রাফ একেবারে চড়চড়ে। শ্রোতারা হলে সিনেমা দেখার আগেই গান মুখস্ত করে ফেলেছেন। ‘বেডরুম’-এর গান মন কতটা ছোঁবে? আর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তো থাকছেই শান্তনু মৈত্র সুরারোপিত ‘অপরাজিতা তুমি’।
মৈনাক এবং রূপমের অবশ্য দাবি, “সিনেমা দেখলেই বুঝবেন গানগুলো এ ছবির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। অন্যরকম গান। লিরিক অন্যরকম। ছবির পরিপূরক।”
আবিরও বললেন, “এক মাত্র বেডরুমের মতো জায়গাতেই মানুষ নিজের কাছেও নিজের আড়াল রাখতে পারে না। অভিনয় করতে পারে না। অথচ সিনেমার চরিত্ররা সেটাই করতে চেয়েছে।
এবং তাই, তাদের জীবন থেকে মিষ্টত্ত, সুর চলে গেছে। সকলেই বিষণ্ণ, হতাশ এবং কর্কশ। ছবির মতো গানগুলোও তাই এ যুগের সাউন্ডটাকে ধরেছে।”
শ্রেয়া ঘোষালের গলায় ‘এক একটা দিন কেটে যায়
শুধু দিন কাটিয়ে দেওয়ায়’
তুলে ধরেছে হতাশ এক নারীর জীবনের একাকীত্ত্বের
বিষণ্ণ রং।
পৌলমী সেনগুপ্তের ‘পাতাল প্রবেশ’ কবিতার দু’টি লাইন
‘চিতার তবু আগুন ছিল
আমার আছে ছাই’,
রূপমের গলায় হয়েছে ‘হু অ্যাম আই’।
আবার বাবুল-সুপ্রিয়র গলায় সম্পর্কের ‘বদলে যায়’-এর মতো ধীর লয়ের গানে বাঁশির অদ্ভুত ব্যবহার করেছেন রূপমরা। তাঁদের দাবি, শ্রোতার মনে হবে, বন্ধ খাঁচায় বাঁধা সম্পর্কের শ্বাস-প্রশ্বাস পড়ছে। ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’র ‘জাগরণে যায় বিভাবরী’-র পরে এ ছবিতে সোমলতা আচার্য চৌধুরী গেয়েছেন ‘মায়াবন বিহারিণী।’ রবীন্দ্র সঙ্গীতের সুরে পরীক্ষা আছে। ভাল লাগবে বাঙালি শ্রোতার? ‘রঞ্জনা...’-র পরে এ বার পার্নোও একদম অন্যরকম চরিত্রে ‘বেডরুম’এ। তিনি বলছেন, ‘প্রথম ছবি তো অনেকেই ভাল বলেন। এই ছবিটা নিয়ে তাই একটু চাপে আছি।” তাঁরও বক্তব্য, “আমাদের মধ্যে এই যে নানা দ্বিচারিতা, তার জন্য আমাদের জীবনে কী কী ক্রাইসিস তৈরি হতে পারে, ‘বেডরুম’ দর্শককে সেই দিকগুলোই দেখাবে।” শোনা যাচ্ছে এই ছবির অন্যতম সম্পদ পার্নোর অভিনয়।
কিন্তু কর্কশ আর রুক্ষ হতে গিয়ে ব্যতিক্রমী হতে চাওয়াটা বাঙালির কি ভাল লাগবে? নাকি আজও তারা গানে গল্পে কিছু রোম্যান্টিসিজম চান?
ব্যতিক্রমী মানেই তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, তার গ্যারান্টি কোথায়? ‘বেডরুম’-এর দরজা খুললে এই গোপন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। |
|
|
|
|
|