লোকপাল বিল নিয়ে যথা সম্ভব মতান্তর কমাতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আজ সংসদে রিপোর্ট পেশ করল ঠিকই। কিন্তু তাতেও যে এ ব্যাপারে শাসক-বিরোধী সংঘাতের বাতাবরণ কাটবে না, তা-ও আজ স্পষ্ট হয়ে গেল। একে তো স্থায়ী কমিটির রিপোর্টে সুপারিশের সঙ্গেই বিরোধী দলগুলির আপত্তিসূচক নোট রয়েছে। তার ওপর অণ্ণা হজারে এবং তাঁর সহযোগীরা সেই রিপোর্ট এক কথায় খারিজ করে দিয়েছেন। অণ্ণাদের সঙ্গে সুর মেলাতে শুরু করেছেন বিজেপি-বামেরাও।
সরকারের পূর্বতন লোকপাল বিলের সঙ্গে স্থায়ী
কমিটির সুপারিশের চরিত্রগত অনেক ফারাক রয়েছে। বিশেষ করে সরকারের বিলে প্রধানমন্ত্রীর পদকে লোকপালের আওতায় রাখার বিষয়টি ছিল না। কিন্তু স্থায়ী কমিটি এ ব্যাপারে তিনটি বিকল্প দিয়ে সংসদের ‘শুভবুদ্ধির’ ওপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ জানিয়েছে। সেগুলো হল, এক, প্রধানমন্ত্রীর পদকে লোকপালের আওতায় না রাখা। দুই, কিছু রক্ষাকবচ-সহ রাখা। তিন, প্রধানমন্ত্রীর পদ লোকপালের আওতায় থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হবে, সেই পদে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর। পাশাপাশি আমলাতন্ত্রের নিচু স্তরকে লোকপালের আওতায় না রাখলেও রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রুপ ‘সি’ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখবে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন। রাজ্যস্তরে লোকায়ুক্তের অধীনে গ্রুপ ‘সি’ কর্মচারীরা থাকবেন। সুপারিশে এ-ও বলা হয়েছে, দুর্নীতির তদন্তে সিবিআইয়ের মাথার ওপরেই থাকবে লোকপাল। তবে তদন্তের প্রতি পদক্ষেপে লোকপালকে জবাবদিহি করতে সিবিআই বাধ্য থাকবে না। সর্বোপরি লোকপাল ও রাজ্যস্তরে লোকায়ুক্ত নিয়োগের বিষয়টি অভিন্ন আইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করার সুপারিশ জানিয়ে কমিটির তরফে বলা হয়েছে, লোকপাল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত।
স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, ২৪টি বিষয়ের মধ্যে কমিটির সদস্যদের মধ্যে ১৩ টি বিষয় নিয়ে ১০০ শতাংশ সর্বসম্মতি হয়েছে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, স্থায়ী কমিটি যে লোকপাল নিয়ে মতান্তর কমানোর চেষ্টা করেছে, তাতে সংশয় নেই। সেই কারণে দলগত ভাবে বিজেপি এবং বামেদেরও সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে যুক্তি খুঁজতে হচ্ছে।
রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলির কথায়, “লোকপাল বিল নিয়ে সংসদে যে সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত সরকার তাকে মর্যাদা দিল না। দ্বিতীয়ত অহেতুক লোকপাল বিলকে জটিল করার চেষ্টা চলছে।” প্রধানমন্ত্রীর পদ ও আমলাতন্ত্রের নিচু স্তরকে লোকপালের আওতায় রাখার দাবি জানিয়েছেন বাম নেতারাও। এবং অণ্ণা হজারের কথায়, “রাহুল গাঁধীর কথামতো লোকপালকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার প্রস্তাব সময় কেনার কৌশল ছাড়া কিছু নয়। আর প্রধানমন্ত্রীর কথা তো কেউই শোনেন না। কারণ মন্ত্রিসভায় একাধিক প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন। এমন একজন দুর্বল প্রধানমন্ত্রী দেশের পক্ষে বিপজ্জনক।” লোকপাল বিল নিয়ে পরশু রবিবার দিল্লির যন্তরমন্তরে মহা বিতর্কের ডাক দিয়েছেন অণ্ণা। তাতে বিজেপি-র তরফে অরুণ জেটলি এবং সিপিএমের তরফে বৃন্দা কারাট সামিল হবেন বলে কথা দিয়েছেন। বিরোধী এই দুই দল অণ্ণার প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে যে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছে, তাতে সন্দেহ নেই।
তবে কংগ্রেস তথা সরকারও আজ অণ্ণাদের সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “অণ্ণা স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট খারিজ করছেন মানে সংসদীয় ব্যবস্থাকেই খারিজ করছেন। স্থায়ী কমিটিতে সব দলের সদস্যরা থাকায় এটা এক প্রকার মিনি সংসদ।” আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বলেন, “২০০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট অণ্ণার মতো গতিতে পড়ে উঠতে পারেনি। রিপোর্ট পড়ে সরকার প্রতিক্রিয়া জানাবে।” ওই রিপোর্ট নিয়ে আজ সন্ধ্যায় কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। স্থির হয়েছে, আগামী মঙ্গলবার নয়া লোকপাল বিল মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে।” |