মরিগাঁওয়ের পরে এ বার কাজিরাঙায়। ফের পুলিশের ছোড়া এ কে-৪৭-এর গুলিতে মারা পড়ল বাঘিনি। বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র তথা বাঘের জন্য সংরক্ষিত অরণ্যে এমন ঘটনা ঘটায় সমালোচনার মুখে পড়েছে কাজিরাঙা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ। জনতার অতি উৎসাহে আতঙ্কিত হয়ে পালানোর চেষ্টা করে বাঘিনিটি। তার সামনে পড়ে যান এক সাংবাদিক। পুলিশের দাবি, ওই সাংবাদিককে বাঁচাতে গিয়েই বনের পশুটিকে গুলি করেন গোবিন্দ দোলে নামে এক কনস্টেবল। বাঘের থাবায় জখম হন ওই কনস্টেবল ও সাংবাদিক। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গুলি খেয়েও বেঁচে ছিল বাঘটি। কিন্তু জখম কনস্টেবলের সঙ্গী রাস্তায় ধুঁকতে থাকা জখম বাঘিনিকে নিজের এ কে-৪৭ থেকে পরপর গুলি চালিয়ে ঝাঁঝরা করে দেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। বনকর্মীদের দাবি, পুলিশের রাইফেল থেকে ১৫ থেকে ২০ রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছিল। জখম সাংবাদিক ও পুলিশ কনস্টেবল আপাতত বোকাখাত হাসপাতালে ভর্তি।
ঘটনার সূত্রপাত আজ সকাল ৬টা নাগাদ। কোহরা রেঞ্জের কর্মীরা জানান, কাজিরাঙা থেকে একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘিনি পার্শ্ববর্তী বসাগাঁওতে ঢুকে পড়েছে খবর পেয়ে বনরক্ষীরা এলাকায় হাজির হন। কাজিরাঙা পশু উদ্ধার কেন্দ্রেও খবর পাঠানো হয়। কোহরা থানা থেকে এসআই জিতুমণি ডেকার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দলও এলাকায় চলে আসে। সে সময় একটি বাড়িতে শুয়োর মেরে খাচ্ছিল বাঘিনিটি। বনরক্ষীরা তাকে তাড়াতে গুলি চালাতেই বাঘিনিটি বের হয়ে আসে। ততক্ষণে এলাকা ঘিরে ফেলেছে উৎসাহী জনতা। হাজির কয়েকজন সাংবাদিকও। জনতার চিৎকার ও পাথর ছোড়ায় আতঙ্কিত বাঘিনিটি ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কে উঠে আসে। বাঘ দেখে পালাতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে জখম হন তিন সাংবাদিক-সহ কয়েকজন গ্রামবাসী। অত্যুৎসাহী এক সাংবাদিক বাঘিনির সামনে পড়ে গেলে তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন এক কনস্টেবল। বাঘিনি তাঁকেই আক্রমণ করলে প্রাণ বাঁচাতে এ কে-৪৭ থেকে গুলি চালিয়ে দেন তিনি।
বন দফতর সূত্রে খবর ততক্ষণে, ঘুম পাড়ানি গুলি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন পশু চিকিৎসক ও উদ্ধারকারীরা। তবু, ভয় পেয়ে জখম বাঘিনিকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় পুলিশ। কাজিরাঙার অধিকর্তা সুরজিৎ দত্তও জানান, পুলিশের গুলিতেই বাঘ মরেছে। তবে গা-বাঁচাতে পুলিশ এখন দাবি করছে, তাদের গুলিতে বাঘ মরেনি। এসপি আর এ লহকর বলেন, “এক সাংবাদিকের প্রাণ বাঁচাতে বাঘের মুখে ঝাঁপ দিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন দোলে। তবে, তিনি বা তার সঙ্গীই গুলি চালিয়েছেন কিনা পরিষ্কার নয়।”
ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে এনটিসিএ কর্তৃপক্ষ কাজিরাঙা রওনা হয়েছেন। তাই আজ ময়না তদন্ত হয়নি। বনবিভাগ এবং এনটিসিএ ঘটনাটি নিয়ে পৃথকভাবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এর আগে, গত বছর ২৩ নভেম্বর, মরিগাঁওয়ের হাবি বরঙ্গাবাড়ি এলাকায় বাঘ বেরিয়েছিল। সে বার
বাঘের থাবায় মারা যান দু’জন এবং জখম হন এক পুলিশকর্মী। পরে, পুলিশের এ কে-৪৭ রাইফেলের গুলিতে মারা পড়ে বাঘটি। |