রাজ্য জুড়ে সমবায় সংস্থাগুলি লোকসানে ধুঁকলেও বাজারমুখী রকমারি প্রকল্পে সওয়ার হয়ে ময়নাগুড়ির ‘বার্নিশ সমবায় কৃষিজ বিপণন সমিতি’ বেনজির দৃষ্টান্ত তৈরির পথে। গত আর্থিক বছরে সংস্থার লাভের পরিমান ছিল প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। আগামী আর্থিক বছরে তা বেড়ে দ্বিগুণ হবে এমনটাই আশা কর্তাদের। ইতিমধ্যে চালু হয়েছে গাছের হাসপাতাল, এগ্রিল হাব, মার্কেট কমপ্লেক্স। নতুন বছরে খাদ্য শস্য মজুত ভাণ্ডার ও বাস টার্মিনাস তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা। সংস্থার চেয়ারম্যান অরুণ ঘোষ বলেন, “সমবায় সংস্থাকে শুধুমাত্র লাভজনক স্তরে পৌছে দেওয়া নয়। চাষি কল্যাণের পাশাপাশি ময়নাগুড়ির সার্বিক উন্নয়নের অংশীদার করার চেষ্টা চলছে।”
অর্ধশত বছরের পুরনো ওই সমবায় সংস্থার আদল পাল্টে যাওয়ায় খুশি প্রায় চারশো চাষি সদস্য এবং ৩১টি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি। কয়েক দশক আগেও এমটা আশা করেনি কেউ। রাজ্যে অন্য সমবায় সংস্থাগুলির মতো লোকসানে ধুঁকছিল সংস্থাটি। বন্ধ হয়েছে বিভিন্ন পরিষেবা। ২০০৩ সালের মধ্যে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌছে যায় যে কর্মীরা বেতন পাবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। কিন্তু বাজারমুখী বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণের পরে গত সাত বছরে ক্রমশ প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্য পাল্টাতে শুরু করে। সংস্থার কর্তাদের দাবি, সম্প্রতি বিপনন সমিতি চত্বরে যে গাছের হাসপাতাল ও মাটি পরীক্ষা কেন্দ্র চালু হয়েছে তা কোনও সমবায় সংস্থার উদ্যোগে রাজ্যে প্রথম। এখানে শুধু গাছের রোগ নির্ণয় হবে অথবা চাষিরা মাটি পরীক্ষার সুযোগ পাবেন এমনটা নয়। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়ে চাষিদের শিক্ষিত করার ব্যবস্থাও রয়েছে। সংস্থার চেয়ারম্যান বলেন, “গাছের রোগ সম্পর্কে সচেতনতা না-থাকায় চাষিরা সারের দোকানের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। ফলে দূষণ বাড়ছে। ওই বিপদ এড়াতে গাছের হাসপাতালে চাষি ও কৃষি কর্মীদের নিয়ে নিয়মিত সচেতনতা শিবির করা হবে।”
সম্প্রতি ‘এগ্রিহাবে’ ৮ লক্ষ টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। চাহিদা সামাল দিতে এ বার ট্রাক্টর কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে কৃষিজ বিপনন সমিতি। সংস্থার কর্তাদের দাবি, এলাকার চাষিদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য এখন আর বাইরে ছুটে বেড়াতে হবে না। হাবে পৌছলে সামান্য ভাড়ায় পেয়ে যাবেন অত্যাধুনিক রকমারি যন্ত্র। সংস্থার চেয়ারম্যান উৎসব দেবগুপ্ত বলেন, “রাজ্যে কোনও সমবায় সংস্থার কৃষিজ সামগ্রীর এমন সম্ভার আছে বলে জানা নেই। তবে শুধু কৃষি নয়। রোজগার বাড়াতে লাভজনক আরও অনেক প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।” প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য শস্য মজুতের ভাণ্ডার তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে সংস্থা। নতুন বছরে ওই কাজ শুরু হবে। দুর্গাবাড়িতে মার্কেট কমপ্লেক্স চালুর পথে। সংস্থাকে আরও লাভজনক করার জন্য বাস টার্মিনাস তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বার্নিশ সমবায় কৃষিজ বিপনন সমিতির সদস্য চুকানিপাড়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির হিসাবরক্ষক মনোজ রায় বলেন, “সমবায় সংস্থার উন্নতি চাষিদের কাছে ভাল খবর।” |