এলাকার পাইকারি বাজার সুখে রাখেনি লঙ্কাচাষিকে
হাতের সামনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পেলে হলদিবাড়ি পাইকারি বাজারটাই উঠিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করবেন পয়ামারি গ্রামের লঙ্কাচাষি দীপেন বর্মন। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির প্রস্তাব আপাতত স্থগিত, কিন্তু স্বদেশের বাজারহাটও যে তাঁকে মোটেই সুখে রাখছে না। রক্ত জল করা যে ফসল সারা বছর ধরে তিনি ফলান, তার লাভের টাকা কী ভাবে দালাল আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা ‘লুঠ’ করে নেন, তা জেনেবুঝেও দীপেনবাবু কিছুই করতে পারেন না। লঙ্কা চাষ না-করলে সারা বছর খাবেন কী? লঙ্কা বিক্রি করতে হলে হলদিবাড়ি পাইকারি বাজার ছাড়া আর তো কোথায় যাওয়ার জায়গাও নেই তাঁর। অথচ পাইকারি বাজারে গিয়ে চোখের সামনে দেখতে পান, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মুম্বই থেকে ব্যবসায়ীরা তাঁদেরই ফসল অনেক বেশি দাম দিয়ে ওই পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ ওই ব্যবসায়ীদের কাছে সরাসরি তাঁরা ফসল বিক্রি করতে পারেন না। হলদিবাড়ি পাইকারি বাজারের এটাই দস্তুর। দীপেনবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে চাই, এমন একটা ব্যবস্থা করুন, যাতে আমরা সরাসরি ব্যবসায়ীদের কাছে নিজেদের ফসল বিক্রি করতে পারি। না-হলে কোনও দিনই চাষ করে দুটো পয়সার মুখ দেখব না।”
ভিন্ রাজ্যের ব্যবসায়ীদের কেজি প্রতি কত টাকায় লঙ্কা বিক্রি করেন পাইকাররা? দীপেনবাবু বলেন, “এটা আমাদের জানতে দেওয়া হয় না। তবে শুনেছি ভরা মরসুমে কেজি প্রতি ১৪-১৫ টাকা দামও উঠে যায়। অথচ ওই সময় আমরা দাম পাই খুব বেশি হলে ৬-৭ টাকা। বললে বিশ্বাস করবেন না, মাঝে মাঝে তা ১ টাকাতেও নেমে যায়।”
পয়ামারি গ্রামের লঙ্কাচাষি দীপেন বর্মন।-নিজস্ব চিত্র
কোচবিহারের হলদিবাড়ি থানার বড় হলদিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পয়ামারি গ্রামের বেশির ভাগই লোকই ছোট চাষি। দীপেনবাবুও তার ব্যতিক্রম নন। মেরেকেটে আড়াই বিঘা জমি। ওই সামান্য জমিতে ধান চাষ করে সারা বছরে প্রায় দেড় কুইন্ট্যাল ধান হয়। এতে তাঁর নিজের খোরাকিটা মোটামুটি চলে যায়। কিন্তু তার পরেও তো জমিতে কিছু করতে হবে! কৃষি দফতরের পরামর্শে তাই এলাকার চাষিদের সঙ্গে দীপেনবাবুও সব্জি চাষে নেমেছিলেন। দীপেনবাবুর নিজের কথায়, “ডাঙা জমিতে সব্জিই ভাল হয়। কৃষি দফতর থেকে প্রশিক্ষণও দিয়েছে। সার, বীজের ব্যবহারও শিখিয়েছে। অল্প জলে কী ভাবে সেচ দিতে হয় তা-ও শিখেছি। কিন্তু ফসলের দাম না-পেলে পরিশ্রমের কি আর কোনও মূল্য থাকে?”
প্রতি বছর অক্টোবরে লঙ্কার বীজতলা তৈরি করেন দীপেনবাবু। অন্য সময়ে ধান কিংবা পাট চাষ করেন। লঙ্কার বীজ কেনার খরচ নেই। আগের বারের ফসল থেকেই বীজ সংগ্রহ করে রাখেন। নভেম্বরে জমিতে চারা বোনেন। ডিসেম্বর মাস থেকে লঙ্কা বাজার নিয়ে যাওয়ার মতো বড় হয়। মোটামুটি ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত লঙ্কা বিক্রি করেন। ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ, গোবর সার, রাসায়নিক সার, সেচ, কীটনাশক, ফসল তোলার মজুরি মিলিয়ে লঙ্কার মরসুমে প্রতি বিঘায় ১৬ হাজার থেকে ১৯ হাজার টাকা খরচ হয় তাঁর। প্রতি বিঘায় প্রায় ৩২ কুইন্ট্যাল ফলন পান। এই হিসাবে প্রতি কিলো লঙ্কা উৎপাদনের খরচ পড়ে প্রায় ৫ থেকে ৬ টাকা। গ্রাম থেকে হলদিবাড়ি বাজারে ফসল নিয়ে যেতে কুইন্ট্যাল পিছু আরও ২০ টাকা করে খরচ করতে হয়।
মরসুমের প্রথমে দিন পনেরো কেজিতে ৮-১০ টাকা দাম মেলে। তবে যেই বাজারে লঙ্কার জোগান একটু বাড়ে, দাম নামতে শুরু করে। ভরা মরসুমে লঙ্কার দাম আরও নীচে নেমে যায়। কখনও ৭ টাকা, কখনও ৫ টাকা, এমনকী কেজি প্রতি দর নেমে যায় ১ টাকাতেও। সামান্য কারণে পাইকারি ব্যবসায়ীরা লঙ্কা কেনা বন্ধও করে দিতে পারেন। সে দিন ফের ভ্যান রিকশায় লঙ্কা নিয়ে বাড়িতে ফেরা মানে ভাড়ার টাকাও জলে যাবে। লাভ তো দূরের কথা, গত বারই দীপেনবাবুর হাজার দশেক টাকা লোকসান হয়েছিল। তিনি বলেন, “কত বার বলার পর আজ পর্যন্ত বাজারে সব্জি রাখার হিমঘর তৈরি হল না। দাম নেমে গেলে লঙ্কা রাস্তায় ফেলে দিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয়। অথচ আমাদের এলাকার লঙ্কার জাত ভাল বলে গোটা দেশ থেকে ট্রাক নিয়ে ব্যবসায়ীরা আসেন।”
ওয়ালমার্ট বা টেসকোর এজেন্টরা তো চড়াও হননি হলদিবাড়ির বাজারে। কিন্তু দেশীয় পাইকাররা কি সত্যি ভাল রেখেছে দীপেন বর্মনদের?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.