খুচরো-বিবৃতি কাল
কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত প্রণব জানালেন বিরোধীদের
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে বলে আজ সরকারি ভাবে বাম ও বিজেপি-সহ বিরোধী শিবিরকে জানিয়ে দিল কেন্দ্র। এ ব্যাপারে বুধবার সংসদে বিবৃতি দেবে সরকার। সে দিন সরকার কী বলে, তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ বিবৃতির মাধ্যমে যেমন এই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার কথা বলে সংসদ সচল করার দায় রয়েছে সরকারের, তেমনই সংস্কারপন্থীদের কাছে এই বার্তাও পৌঁছতে হবে যে, এই স্থগিত রাখা অনির্দিষ্ট কালের জন্য নয়। সংসদে বিবৃতি দেওয়ার আগে বুধবার সর্বদল বৈঠক ডাকার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বাম-বিজেপি। সূত্রের খবর, বিরোধীদের দাবি মেনে বুধবার সকালে সর্বদল বৈঠক ডাকবেন লোকসভার নেতা তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়।
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি স্থগিত রাখার বিষয়টি নিয়ে সরকারের অন্দরমহলে ময়নাতদন্ত অব্যাহত। মূলত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখতে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কংগ্রেস ও সরকারের শীর্ষ নেতারা এ-ও স্বীকার করে নিচ্ছেন, কেন্দ্রের এই নীতি নিয়ে দলের মধ্যেও ভিন্ন মত রয়েছে। রয়েছে নানা আশঙ্কাও। নীতিগত ভাবে আপত্তি না থাকলেও মন্ত্রিসভার কিছু কংগ্রেস সদস্য যেমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তেমনই প্রশ্ন উঠেছে গোটা পর্বে সরকারের রাজনৈতিক অব্যবস্থা নিয়েও। তাই এক দিকে যেমন শরিকি চাপ ও বিরোধীদের সামাল দিয়ে সংসদ চালানোর ব্যাপারে সরকার তৎপর, তেমনই দলের মধ্যেও সর্বসম্মতি গড়ে তুলতে মরিয়া। যাতে ভবিষ্যতে কেন্দ্রের এই নীতির সম্ভাব্য সুফল নিয়ে এক সুরে কথা বলে দল ও সরকার।
পাশাপাশি শিল্পমহল ও কৃষক সংগঠনগুলিকেও খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সমর্থনে সওয়াল করতে আরও সক্রিয় করছে সরকার। যাতে আর্থিক সংস্কারের লক্ষ্যে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ নিয়ে জনমত তৈরি হয়। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, চাপে পড়ে এক কদম পিছোলেও মনমোহন-প্রণব সার্বিক ভাবে লগ্নিকারীদের এই বার্তা দিতে চান যে, রাজনৈতিক চাপে ব্রেক কষলেও সরকার খুচরো প্রশ্নে সংস্কারের নীতি থেকে সরে আসছে না। আর সেই সঙ্গেই কৃষক ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে জনমত গড়ে বিরোধী দলগুলিকে পাল্টা চাপে ফেলতে চাইছে কংগ্রেস।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজই বণিকসভা সিআইআই-এর সভাপতি বি মুথুরামন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যখন বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) বৃদ্ধির হার কমে গিয়েছে, তখন খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি আসার সুযোগ করে দিয়ে সরকার আস্থা বাড়ানোর ব্যাপারে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে’। সিআইআই-এর আশা, এ নিয়ে দ্রুত রাজনৈতিক ঐকমত্য হবে।
খুচরো-বিতর্কে দীর্ঘ দিন ধরে সংসদে যে অচলাবস্থা চলছে, তা এ বার দ্রুত কাটিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে উদ্যোগী কেন্দ্র। খুচরো-সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার বিষয়টি আজই বিজেপির লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ ও সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিকে জানিয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। সিপিএম ও বিজেপি নেতাদের দাবি, বিরোধী দলগুলি ও সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলেই ভবিষ্যতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে প্রণব আশ্বাস দিয়েছেন। সূত্রের খবর, প্রণববাবু বিরোধী নেতাদের জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলে বৃহত্তর ঐকমত্য গড়ে ফের এ ব্যাপারে এগোবে কেন্দ্র। সীতারাম অবশ্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, সিপিএমের দাবি হল, কোনও শর্ত ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক।
বৃহস্পতিবারই কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি প্রশ্নে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নিয়েও সরকার কেন তা স্থগিত রাখল, তা ওই বৈঠকে ব্যাখ্যা করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। ওই বৈঠকে থাকবেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীও। এর আগেও প্রণববাবু এক বার খুচরো প্রসঙ্গে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের কার্যকারণ সংসদীয় দলের সামনে ব্যাখ্যা করেছেন। তখন এ-ও ঠিক ছিল যে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রী আনন্দ শর্মাও সংসদীয় দলকে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে সরকারের নীতি ব্যাখ্যা করবেন। কিন্তু রাজনৈতিক অব্যবস্থায় সেই বৈঠক তখন হতে পারেনি। তবে এ বার তা হবে। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির ব্যাপারে কংগ্রেসের সাংসদদের উদ্বেগের কারণ ওই বৈঠকে জানতে চাইবেন প্রণববাবু।
তবে কংগ্রেসের মধ্যে এই প্রশ্নও উঠছে যে, এটা অনেকটা ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’র মতো! দলকে বোঝানোর কাজটা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই করা উচিত ছিল। তা করলে এ ব্যাপারে অন্তত সরকার ও দলের মতান্তর এতটা প্রকট হত না। তা ছাড়া খুচরো সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার বিষয়টি কলকাতায় বসে মমতা যে ভাবে ঘোষণা করেছেন, তা নিয়েও দলের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
মন্ত্রিসভা তথা কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা আজ অবশ্য বলেন, “খুচরো বিতর্ক নিয়ে সরকার যে আগাম আলোচনা চালায়নি, তা নয়। কিন্তু এখনই এই পদক্ষেপ করার নেপথ্যে সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক কারণ ছিল। বিশ্বজোড়া আর্থিক সঙ্কটের প্রভাব যে ভাবে দেশের অর্থনীতিতে পড়ছে, তা কাটিয়ে ওঠার জন্যই সরকার এই পদক্ষেপ করেছিল।” ওই নেতা আরও জানান, মমতাকে দিয়ে খুচরো প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার ঘোষণা করানোও ছিল কৌশলগত পদক্ষেপ। কারণ তাতে এই বার্তাই গিয়েছে যে, শরিকি আপত্তিতেই আপাতত থমকে দাঁড়াল সরকার। কিন্তু শনিবার মমতা ওই ঘোষণা না করে যদি চুপ থাকতেন, তা হলে আজ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তটি বিরোধীদের জানানোর মুহূর্তেই তাঁরা রাজনৈতিক কৃতিত্ব নিতে নেমে পড়তেন।
বিজেপি-বামেরা অবশ্য হাত গুটিয়ে বসে নেই। সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্তটি আপাতত ঠান্ডাঘরে পাঠানোর পথেই হাঁটছে সরকার। কিন্তু তার পরেও তাঁরা কোনও ঝুঁকি নিচ্ছেন না। বুধবার সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে নিয়মমাফিক মুলতুবি প্রস্তাবের নোটিস দেবেন বামেরা। সংসদে সরকারের বিবৃতি মনমতো না হলে বিরোধীরা ফের মুলতুবি প্রস্তাবের জন্য চাপ দেবেন। আবার সরকার সংসদে দাঁড়িয়ে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করলে তাকেই কার্যত মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার বলে প্রচার করে নিজেদের ‘নৈতিক জয়’ হিসেবে দাবি করবে বাম-বিজেপি।
সংসদের অচলাবস্থা কাটলে কালো টাকা ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হবে। কালো টাকার বিষয়ে মুলতুবি প্রস্তাবে আগেই রাজি হয়ে গিয়েছে সরকার। বাম নেতৃত্বের বক্তব্য, সংসদ না চললে সরকারেরই সুবিধা হবে। কারণ লোকপাল বিল নিয়ে এখনও হাবুডুবু খাচ্ছে সরকার। এ দিকে অণ্ণাা রাস্তায় নেমে পড়েছেন। সংসদ না চললে সরকার বিরোধীদের ঘাড়েই দায় ঠেলে বলবে, বিরোধীরা সংসদ চালাতে দেয়নি বলেই লোকপাল বিল পাশ করানো গেল না। সেই সুযোগ না দিয়ে এ বার লোকপাল বিল নিয়ে সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলাটাই বিজেপি-বামেদের লক্ষ্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.