জল থেকে বিদ্যুৎ, সব কিছু নিয়েই জেরবার কেন্দা গ্রাম ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। ভূগর্ভেও নাকাল খনিকর্মীরা। এমনই বেশ কিছু সমস্যা সমাধানের দাবিতে সোমবার নিউ কেন্দা কোলিয়ারির এজেন্টকে ঘিরে তৃণমূলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এজেন্ট অবিলম্বে সমস্যা মেটাতে কর্মসূচি নেওয়ার আশ্বাস দেন।
কেন্দা গ্রাম ও সংলগ্ন শালডাঙা, ঝাঁটিবন, মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দারা জানান, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ওয়েস্ট কেন্দা বেসরকারি প্যাচ চালু হয়েছে। তার পর থেকে ইতিমধ্যে এলাকার ৮৫টি বাড়িতে কয়লা কাটার জন্য ঘটানো বিস্ফোরণে ফাটল দেখা দিয়েছে। শালডাঙা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেওয়ালে কয়েক মাস আগে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। এলাকার বাসিন্দা তানিয়া চট্টোপাধ্যায়, নিমাই বার্নোয়াল, তামর মুর্মুরা জানান, বিস্ফোরণের সময়ে বাড়ির বাইরে আসতে হয়। কম্পনের জেরে ঘরে থাকা আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দা গ্রামে তৃণমূল কর্মী ছোটকা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ইসিএলের জল সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল পাওয়া যায় রাতের দিকে। তা-ও অনিয়মিত। দু’শো মিটার দূর থেকে পরিত্যক্ত খনির জল এনে ব্যবহার করতে হয়। বাসিন্দারা জানান, ইস্ট কেন্দা খনিকর্মী আবাসন চত্বরে মাস দুয়েক আগে একটি ট্রান্সফর্মার বিকল হয়। তার পর থেকে বিদ্যুৎ মেলে শুধু রাতে। সকাল ৭টার আগে বিদ্যুৎ চলে যায়। ফের বিদ্যুৎ মেলে বিকেল ৫টার পরে।
ইসিএলের সীতারামপুর ‘রেসকিউ স্টেশন’-এর কর্মী, কেন্দার বাসিন্দা অনুপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, নিউ কেন্দা ৪ নম্বর খনিতে ‘এসডিএল’ যন্ত্র বিভাগে মুক্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থাই নেই। ওই বিভাগে খননের সময়ে কয়লার গুঁড়ো উড়তে থাকে। কিন্তু জল না ছেটানোয় এলাকা তপ্ত হয়ে ওঠে। শ্বাসকষ্টে জেরবার হন শ্রমিকেরা। এ জন্য টানা আধ ঘণ্টার বেশি ওই বিভাগে কাজ করা যায় না। প্রভাব পড়ছে উৎপাদনেও। যে কোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে তাঁর দাবি।
১৯৯৪ সালের ২৫ জানুয়ারি কেন্দা দু’নম্বর পিটে গ্যাস লিক করে ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। অনুপবাবুর দাবি, তার পরে ওই খনির ১২ ও ২৩ নম্বর ‘ডিপ লেভেল’ জলে ভরে গিয়েছে। এখনও পাম্পের সাহায্যে সেই জল তোলার উদ্যোগ নেয়নি ইসিএল। অথচ সেখানে প্রচুর কয়লা মজুত রয়েছে। তৃণমূলের প্রদেশ সদস্য মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “ওয়েস্ট কেন্দায় ইসিএলের নিজস্ব একটি খোলামুখ খনি রয়েছে। সেখানে দু’টি যন্ত্র দীর্ঘ দিন ধরে অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। ১৩৫ জন কর্মীকে প্রায় কোনও কাজ ছাড়াই বেতন দেওয়া হচ্ছে। এ ভাবে কার্যত খনিটি বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।” তিনি জানান, এক দিকে খনিতে এমন সমস্যা। পাশাপাশি, জল-বিদ্যুৎ নিয়ে নাজেহাল এলাকাবাসী। ইসিএলের তরফে সমস্যা মেটানোর কোনও উদ্যোগ নেই। এ দিন তাঁরা এজেন্টকে জানিয়েছেন, চার দিনের মধ্যে আশ্বাস অনুযায়ী কাজ না হলে লাগাতার আন্দোলনে নামা হবে।
কোলিয়ারির এজেন্ট সোমনাথ সিংহ জানান, ৩৩ কেভি-র একটি ট্রান্সফর্মার সারানোর কাজ চলছে। শীঘ্র সেটি আনা হবে। তা হলেই বিদ্যুৎ সমস্যা মিটবে। জল-সহ অন্য সমস্যাগুলির ব্যাপারে ইসিএল খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি। |