জওহরলাল নেহরু ন্যাশানাল আরবান রিনিউয়াল মিশনের (জেএনএনইউআরএম) আর্থিক সহায়তায় চালু হওয়া বাসগুলি বন্ধ হয়ে পড়েছিল দীর্ঘ দিন। কিস্তি মেটাতে হিমসিম খেয়েছেন বাস মালিকেরা। চলতি বছরের জুন মাসে রাজ্যের পূর্ত ও পরিবহণ মন্ত্রী সুব্রত বক্সী দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। সোমবার দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার (এসবিএসটিসি) চেয়ারম্যান তমোনাশ ঘোষ বলেন, “আপাতত ২৫টি বাস এসবিএসটিসি চালাবে। ডিপিএল নেবে ৭টি বাস। তবে এর থেকে কিছু বাস নেওয়ার ব্যাপারে কথা চলছে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) সঙ্গে।”
২০১০ সালে জেএনএনইউআরএম-এর আর্থিক সহায়তায় চালু হওয়া বাসগুলি শহরের মধ্যেই চলার কথা ছিল। কিন্তু দুর্গাপুর শহরের ভিতরে এমনিতেই বহু মিনিবাস ও অটো চলে। নতুন করে এই বাসগুলি চালু করা হলে পর্যাপ্ত যাত্রী মিলবে না এই যুক্তিতে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার দুর্গাপুর থেকে বিভিন্ন দুরপাল্লার রুটে বাসগুলি চালানোর সিন্ধান্ত নেয়। দুর্গাপুর থেকে মেদিনীপুর, খড়গপুর, পুরুলিয়া, মানবাজার, বোলপুর, কীর্ণাহার, ফরাক্কা, ডোমকল প্রভৃতি রুটে বাসগুলি চলতে শুরু করে।
সমস্যা শুরু হয় এসবিএসটিসি-র নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এই পরিষেবা চালু হওয়ার পর থেকে। আগে থেকেই যে বাসগুলি ওই সমস্ত রুটে চলছিল তার মালিকেরা আপত্তি তোলেন। তাঁদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়মানুযায়ী এই প্রকল্পের বাস শুধুমাত্র শহরাঞ্চলে চলার কথা। কিন্তু তা না করে গ্রামাঞ্চলেও নতুন প্রকল্পের বাস চালানো হচ্ছে। এমনকী, দুর্গাপুর থেকে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম জেলার বিভিন্ন রুটেও ওই বাসগুলি চলছে। তাছাড়া নতুন চালু হওয়া এই বাসগুলির সময়সূচি তৈরি করা হয়েছে পুরনো বাসের সময়সূচির কথা না ভেবেই। সব মিলিয়ে বর্ধমান, বীরভূম ও বাঁকুড়া জেলার পুরনো বাস মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।
পুরনো বাসমালিকদের সঙ্গে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের বাসমালিক ও কর্মীদের বিবাদের জেরে মাঝেমধ্যেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল বিভিন্ন রুটে বাস পরিষেবা। এর জেরে বর্ধমান-আসানসোল রুটে বাস পরিষেবা বন্ধ ছিল দীর্ঘ দিন। দুর্গাপুর শহরেও এক দিন বাস বন্ধ রাখা হয়েছিল।
প্রশাসনের উদ্যোগে ২০১০-এর সেপ্টেম্বরে দুর্গাপুরে এ নিয়ে একটি বৈঠক হয়। যোগ দেন বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়ার জেলাশাসক, এসবিএসটিসি-র আধিকারিক, পুরনো বাসমালিক ও জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের বাসমালিকেরা। সাময়িকভাবে সমস্যা মিটলেও দিন কয়েকের মধ্যেই ফের গোলমাল শুরু হয়। বন্ধ হয়ে যায় নতুন বাসগুলি। জেএনএনইউআরএম বাস অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণকুমার সানিগ্রাহী জানান, বেকার যুবকেরা ঋ
ণ নিয়ে বাস কিনেছিলেন। সমস্যা দেখা দেওয়ায় আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করেও অনেকে বাস ফেরত দিয়ে দেন। বাকি বাসগুলি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, বিষয়টি তৎকালীন পরিবহণ মন্ত্রী রঞ্জিৎ কুণ্ডুুকে জানিয়েও কোনও ফল মেলেনি। পরে বর্তমান পরিবহণ মন্ত্রী সুব্রতবাবুকে সমস্যার কথা জানান তাঁরা। এই বছর জুন মাসে দুর্গাপুরে বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম ও পুরুলিয়ার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও পরিবহণ আধিকারিকদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে মন্ত্রী দ্রুত সমস্যাটি সমাধানের আশ্বাস দেন।
শেষ পর্যন্ত সোমবার এসবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান তমোনাশবাবুর ঘোষণায় স্বস্তি পেলেন ওই বাস মালিকদের অনেকেই। তমোনাশবাবু জানান, ২৫টি বাস তাদের নিজেদের রুটে চালাবে এসবিএসটিসি। রাজ্য সরকারের সংস্থা ডিপিএলের সঙ্গে ৭টি বাস নেওয়ার ব্যাপারে চুক্তি হচ্ছে। মাসে বাস পিছু ডিপিএল ৪২,৩০০ টাকা করে দেবে। চালক ও কর্মী দেবে এসবিএসটিসি। জ্বালানি দেবে ডিপিএল। একই ভাবে এর থেকে বেশি সংখ্যক বাস নেওয়ার ব্যাপারে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানান তমোনাশবাবু। তিনি বলেন, “শীঘ্র চুক্তি সেরে ফেলা হবে। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে বাসগুলি চলতে শুরু করবে।” |