চাকরির দাবি তুলে জমিদাতারা ধর্মস্থান সরাতে ও পাঁচিল তুলতে বাধা দেওয়ায় থমকে গিয়েছে ইস্কো স্টিল প্ল্যান্টের আধুনিকীকরণের কাজ। জট খুলতে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। শ্রমিক সংগঠনগুলিও জমিদাতাদের বিরুদ্ধে সবর হয়েছে।
আসানসোলের পুরুষোত্তমপুরে একফালি জমিতে বেড়া দিয়ে ঘেরা ওই পুরনো ধর্মস্থানকে ‘ঝোড়াবুড়ির মন্দির’ বলে চেনেন এলাকাবাসী। যদিও সেখানে কোনও ইমারত নেই। রয়েছে একটি গাছ ও কয়েকটি পাথর। জমি অধিগ্রহণের সময়ে গ্রামবাসীদের বলা হয়েছিল, সীমানা প্রাচীর তোলার সময় ইস্কো নিজের খরচায় মন্দির স্থানান্তর করে দেবে। তার পাশে খুঁড়ে দেবে একটি পুকুরও। গ্রামবাসীরা তখন রাজি হয়েও এখন বেঁকে বসেছেন বলে অভিযোগ।
ইস্কোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্কর কুমার বলেন, “গ্রামবাসীরা দাবি তুলেছেন, জমিদাতারা চাকরি না পেলে ঝোড়াবুড়ির মন্দির সরাতে দেওয়া হবে না। প্রায় ২ শতক জায়গায় পাঁচিল তুলতে দিচ্ছেন না। ফলে থমকে আছে সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া।” শনিবার একটি বেসরকারি নির্মাণ সংস্থার কর্মীরা পাঁচিল তোলার প্রাথমিক কাজ করতে গেলে কিছু গ্রামবাসী বাধা দেন। ভাস্করবাবু বলেন, “রাজ্যের শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।” |
প্রায় তিন দশক টানাপোড়েনের পরে ইস্কোর আধুনিকীকরণে হাত দিয়েছে স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সেল)। লগ্নি হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। ৮৫ শতাংশ কাজ শেষও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মাত্র ২ শতক জমিতে পাঁচিল তুলতে না পারায় সব থমকে গিয়েছে। অথচ জমি অধিগ্রহণের সময়ে ক্ষতিপূরণের শর্তে চাকরির বিষয়টি ছিল না। ভাস্কর কুমার জানান, প্রকল্পের জন্য পুরুষোত্তমপুর, নাকড়াসোতা, কুইলাপুর মৌজার প্রায় ৩৫৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে বর্তমান বাজারদরে জমির দাম বাবদ প্রায় ৪৮ কোটি টাকা রাজ্য সরকারকে দিয়েছেন ইস্কো কর্তৃপক্ষ। জমিদাতারা সেই টাকা পেয়েও গিয়েছেন।
কিন্তু জমিদাতারা অনড়। পুরুষোত্তমপুর গ্রামের জমিহারা কমিটির সম্পাদক চন্দ্রশেখর রায় সোমবার বলেন, “আমরা সম্প্রসারণের কাজে বাধা হতে চাই না। তবে প্রায় তিনশো জমিদাতা চাকরি না পেলে ঝোড়াবুড়ি স্থানান্তর করতে দেব না।” তাঁদের প্রশ্ন, সেল যে অন্যত্র তাদের অধীনস্থ ইস্পাত কারখানায় জমির বদলে চাকরি দিচ্ছে, ইস্কোয় তা দেওয়া হবে না কেন? তাঁদের সমর্থন জানিয়ে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর পবিত্র মাজিও বলেন, “চাকরি দিতেই হবে। ঝোড়াবুড়ি মন্দির কখন সরানো হবে তা গ্রামবাসীর ব্যাপার। সব জানিয়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন।”
এই বাধায় আসানসোলে শিল্পোন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় শ্রমিক সংগঠনগুলি কিন্তু ক্ষুব্ধ। তৃণমূল কাউন্সিলর সমর্থন জানালেও আইএনটিটিইউসি-র বর্ধমান জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা চাই না ইস্কোর আধুনিকীকরণ থমকে যাক। যে সমস্যা আছে তা আমরা মেটাতে চেষ্টা করব।” কংগ্রেস প্রভাবিত আইএনটিইউসি-র ইস্কো শাখার সভাপতি বাপি ধর সরাসরি বলেন, “এই ঘটনা মানা যায় না। এটা অন্যায়। আমরা এর বিরোধিতা করছি।” সিটু-র ইস্কো শাখার সম্পাদক বিমল দত্তের মতে, “ওরা অবিবেচক। নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারছে। আমাদের সমর্থন নেই।” |