চিকিৎসক বাড়িয়ে, যন্ত্রপাতি বসিয়ে, নবজাতকদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড খুলে, ওয়ার্ডের ভিতরে বহিরাগতদের আনাগোনার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তার পরেও মালদহ সদর হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় সদর হাসপাতালে আরও ১১টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার শিশু দিবসের দিনেই সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৮টি শিশুর মৃত্যু হয়। ৮ নভেন্বর থেকে সাত দিনে সদর হাসপাতালে ২৪ টি শিশু মারা যাওয়ার ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চিকিৎসাধীন শিশুদের অভিভাবকেরা। আতঙ্কিত বেশ কয়েকটি পরিবার তাঁদের শিশুদের সদর হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গিয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। সদর হাসপাতালের সুপার হিমাদ্রি আড়ি বলেন, “হাসপাতালে এখন পর্যন্ত যতগুলি শিশুর মৃত্যু হয়েছে তার একটিও কারও গাফিলতিতে মারা যায়নি। বেশির ভাগই কম ওজনের কারণে মারা গিয়েছে। বাকি শিশু মারা গিয়েছে শ্বাসকষ্টজনিত অসুখে। যে অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাতে ওই শিশুগুলিকে বাঁচানো চিকিৎসকদের সম্ভব ছিল না। শিশু মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি পরিবার বন্ড দিয়ে নিজেদের শিশুদের হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে।” |
মালদহ সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগ। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়। |
এদিকে একের পর এক শিশু মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা শ্যামাপদ বসাক। জেলার নিচু তলার স্বাস্থ্য কর্মীদের দোষারোপ করে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি গত ৭ দিনে সমস্ত শিশু মৃত্যুর কাগজ তলব করেছেন। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, “মালদহ সদর হাসপাতালে এত শিশুর কেন মৃত্যু হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে মৃত শিশুদের চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র চেয়ে পাঠানো হচ্ছে। শিশু মৃত্যুর পিছনে হয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্য কর্মীদের গাফিলতি ছিল, না হলে মৃত শিশুর মা, বাবা কিংবা পরিবারের লোকেরা প্রসূতি মাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না গিয়ে হাতুড়েদের কাছে চিকিৎসা করিয়েছেন।” রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানান, কোনও মহিলা গর্ভবতী হওয়ার পরেই টানা ৪০ সপ্তাহ হেলথ সেন্টারে স্বাস্থ্য কর্মীরা ট্রাকিং রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে তাঁর চেকআপ করবেন। যে ভাবে সদর হাসপাতালে কম ওজনের কারণে এতগুলি শিশু মারা গিয়েছে তাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা গর্ভবতী মায়েদের সঠিক চিকিৎসা করাননি বলেই তাঁদের মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, “যে সমস্ত শিশু মারা গিয়েছে তাদের মায়েদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দেওয়া হেলথ কার্ড খতিয়ে দেখা হবে। সেই হেলথ কার্ডে যে সমস্ত গর্ভবতী মায়েদের পরিচর্যায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীদের গাফিলতি ধরা পড়বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অতিরিক্ত জেলাশাসক নুরুল ইসলাম বলেন, “অপুষ্টি, গর্ভবতী মায়েদের সচেতনতার অভাব ও কম বয়সে বিয়ের জন্য কম ওজনের বাচ্চা হচ্ছে। আর সেই কম ওজনের বাচ্চা বাঁচানো কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। সচেতনতা না বাড়ালে শিশু মৃত্যু কোনও দিন রোখা যাবে না।” একই কথা বলেছেন জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন কুমার ঝরিয়াত। তিনি বলেন, “অল্প বয়সে বিয়ে, একাধিক সন্তান, অপুষ্টির কারণের কম ওজনের বাচ্চা প্রসব হচ্ছে। আর সেই বাচ্চা বাঁচানো যাচ্ছে না। রবিবার রাতে সদর হাসপাতালে মারা যায় হবিবপুরের অনন্তপুরের ললিত ঘোষের ৬ দিনের বাচ্চা। মারা গিয়েছে কালিয়াচকের অমৃতটোলার উনজারি বিবির একদিনের বাচ্চা ও কালিয়াচকের যদুপুরের দু’দিন বয়সী একটি শিশু। এদিন সকালে একের পর এক শিশু মারা যাওয়ার খবর আসতেই সদর হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ কাযর্ত দিশেহারা হয়ে পড়েন। কালিয়াচকের দিলজারা বিবি, যদুপুরের রেশমা বিবি, বৈষ্ণবনগরের আজিনুর বিবি রবিবার রাতে সন্তান প্রসব করেন। সোমবার সকালে তিনজনেরই সদ্যোজাত শিশু সন্তান মারা যায়। সোমবার সকালে কালিয়াচকের লক্ষীপুরের জাহানারা যমজ সন্তান প্রসব করার দু’ঘন্টার মধ্যে তাঁর দুটি সন্তানই মারা যায়। এদিন সকালে কালিয়াচকের শ্রীপুর কলোনীর বাপন মন্ডলের এক বছরের পুত্র সন্তান মারা যাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে কালিয়াচকের সাকুল্লাপুরের নবিরন বিবি, বাঙিটোলার লালমন বিবি, মহদিপুরের আজরিনা বিবির সদ্যোজাত সন্তান মারা যায়। |