নিজস্ব সংবাদদাতা • রামপুরহাট |
প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কোনও চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না। এর ফলে পরিষেবা পাওয়া থেকে দীর্ঘক্ষণ বঞ্চিত হলেন রোগীরা। সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত এমন অব্যবস্থার চিত্র দেখা গেল খোদ রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে। ওই সময়ের মধ্যে ওই বিভাগের ৬ জন চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না তাই নয়, হাসপাতাল সুপারও উপস্থিত ছিলেন না। তা দেখে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা রামপুরহাট মহকুমাশাসক বৈভব শ্রীবাস্তব।
তিনি হাসপাতালে এসে দেখেন সুপার হিমাদ্রি হালদার নেই, সুপারের দায়িত্বেও কোনও চিকিৎসক নেই। দুপুরে জরুরি বিভাগে এক জন চিকিৎসককে দেখতে পেয়ে মহকুমাশাসক জিজ্ঞাসা করেন, “কেন এমন অবস্থা?” বর্তব্যরত চিকিৎসক তরুণ পাত্র বলেন, “আমি তো জরুরি বিভাগে কাজ করি। কোথায় কী হয়েছে সে ব্যাপারে সুপারই বলতে পারবেন।” এর পরেই মহকুমাশাসক জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তাঁর ক্ষোভ, “সুপার হাসপাতালে নেই। দুপুর পর্যন্ত পুরুষ ও মহিলা বিভাগে মেডিসিনের কোনও চিকিৎসক নেই। স্বভাবতই রোগীরা কোনও পরিষেবা পাননি।” শুধু তাই নয়, হাসপাতালের সহকারি সুপার সুদীপ্ত মণ্ডলের কাছে চিকিৎসকদের ডিউটি রোস্টার দেখতে চেয়েও তা পাননি। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, “হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমি বিস্মিত।” হাসপাতাল সুপার হিমাদ্রি হালদারের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টো পর্যন্ত ৯ জন মহিলা ও ১৪ জন পুরুষ মেডিসিন চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন। মোট ৬ জন চিকিৎসক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কাজ করেন। বেলা ১১টা নাগাদ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, আশিস রায় নামে এক চিকিৎসক রবিবার রাত ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডিউটি করে চলে গিয়েছেন। সকাল ৮টার পরে যে সব রোগী ভর্তি হয়েছেন তাদের দেখার জন্য কোনও মেডিসিন চিকিৎসক নেই। দুপুর ২টোর সময়ে আসেন চিকিৎসক মনোস্বী রায়। তাঁর দাবি, “সকালে সুপারকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে এক জন চিকিৎসককে দেওয়ার কথা বলি। পরে দু’জন চিকিৎসককে দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু তা না দেওয়ায় আড়াইশো রেগী ফেলে মেডিসিন বিভাগে যেতে পারিনি।” তাঁর অভিযোগ, “হাসপাতালে যুক্তি সঙ্গত কোনও ডিউটি রোস্টার নেই।”
এ দিকে দীর্ঘক্ষণ চিকিৎসক না থাকায় সমস্যায় পড়েন রোগীরা। রামপুরহাটের লম্বোদরপুরের বাসিন্দা কাউসার শেখকে হাসপাতালে ভর্তি করতে এসেছিলেন তাঁর পরিবার। অবস্থার অবনতি হওয়ায় প্রাইভেটে হাসপাতালেরই এক জন চিকিৎসকের কাছে দেখিয়ে তাঁকে ভর্তি করেন। ময়ূরেশ্বরের গৌরবাজার এলাকার বাসিন্দা আলি হোসেন বলেন, “ছেলেকে সকালে ভর্তি করানোর পরে চিকিৎসক দেখেননি।” বীরভূম জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিসকুমার মল্লিক বলেন, “কী হয়েছে না জেনে বলতে পারব না। সুপারও এ ব্যাপারে কিছু বলে গিয়েছেন কি না বলতে পারব না।” |