নিজস্ব সংবাদদাতা • করিমপুর |
করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ থেকে তিনি বেরোতেই প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়েছিলেন খাজুরা বিবি ‘‘সব ওষুধই যদি বাইরে থেকে কিনতে হয়, তাহলে হাসপাতালে এলাম কেন?’’
হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে প্রশ্নটা শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন অ্যাডিশনাল ডাইরেক্টর (ম্যাটারনাল অ্যাণ্ড চাইল্ড হেলথ) অমাবসু দাস। তার পর এগিয়ে গেলেন মেঝেতে শুয়ে থাকা ওই মহিলার দিকে। তাঁর কাছে মন দিয়ে শুনলেন হাসপাতাল নিয়ে বিস্তর অভিযোগের কথা। খাজুরা বিবিকে দেখে সাহস করে এক এক করে বেশ কয়েক জন এগিয়ে এসে জানালেন তাঁদের নানা সমস্যার কথা। স্পষ্টতই অস্বস্তিতে পড়া স্বাস্থ্যকর্তা হাসপাতাল সুপারকে ডেকে সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বিষয়গুলো বিশদে খোঁজ নিতে।
শনিবার জেলা হাসপাতাল-সহ তেহট্ট মহকুমা হাসপাতাল, করিমপুর ও বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন অমাবসুবাবু। জেলার হাসপাতালগুলিতে দিনের পর দিন পরিকাঠামো ও পরিষেবা নিয়ে যখন অভিযোগের পাহাড় জমছে, তখন ওই স্বাস্থ্য কর্তারা হাসপাতাল পরিদর্শন বেশ অর্থবহ মনে হয়েছিল চিকিৎসক ও হাসপাতাল কতৃপক্ষেরও। কিন্তু তিনি চলে যাবার পরেই ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। ক্ষুব্ধ এক কর্তার কথায়, ‘‘এটা নেই কেন, ওটা নেই কেন--এ সব প্রশ্ন তো আমাদেরই পাল্টা করার কথা ছিল। তা না, উনি আমাদের জিজ্ঞেস করছেন। স্বাস্থ্যভবন থেকে স্বাস্থ্য-কিট, ওষুধ না পাঠালে আমরা কী করব বলুন তো!” বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার জীবেশচন্দ্র বাইন মনে করেন, পরিকাঠামোই হাসপাতালগুলোতে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। পরিকাঠামোর উন্নতি না করতে পারলে পরিষেবা নিয়ে মানুষের এই অভিযোগ দূর হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের হাসপাতালে এসে সিজারের প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছিলেন। চিকিৎসক, নার্স, অ্যানেস্থেটিস্ট সকলের সঙ্গে কথাও বললেন। কিন্তু সিজারের জন্য শয্যা সংখ্যা মাত্র তিনটে শুনে তিনিও অবাক হয়ে গেলেন।’’
করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার বিধুভূষণ মাহাতো জানান, ‘‘উনি তো নিজের কানেই রোগীদের অভিযোগ শুনে গেলেন। এ বার যা করার করবেন। আমাদের হাসপাতালে গত প্রায় দুমাস ধরেই ওষুধের সঙ্কট চলছে। বাইরে থেকে রোগীদের ওষুধ কিনতে হচ্ছে। হাসপাতালে ওষুধ না এলে এই সমস্যার কোনও সমাধান হবে না।’’
অমাবসু বলেন, ‘‘হাসপাতালগুলো ঘুরে দেখলাম বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। কত লোকের ওষুধ লাগে, কোথায় আরও বেশি চিকিৎসক দরকার, কোথায় ঠিক কী ধরণের সমস্যা আছে। সেগুলো খুঁটিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সেগুলো জেনে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককেও বলেছি খোঁজ নিয়ে বিশদে আমাকে রিপোর্ট পাঠাতে।’’
সত্যিই তো, এর বেশি আর কীই বা করার আছে! |