শিশুমৃত্যুর তদন্তে ওয়ালশ হাসপাতালে স্বাস্থ্য অধিকর্তা
চিকিৎসক এবং নার্সদের গাফিলতিতে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে প্রসূতি সুনীতা সাউয়ের সন্তানের মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে নড়েচড়ে বসল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সোমবার ওই ঘটনার তদন্তে এসে সুনীতা-সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলার পরে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা শ্যামাপদ বসাক বলেন, “অভিযোগ যথেষ্ট গুরুতর। দোষী প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড়া হবে না। উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।”
প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে রিষড়ার বাসিন্দা সুনীতা গত শুক্রবার ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। রাত সওয়া ১টা নাগাদ স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ স্বপনকুমার দাস তাঁকে পরীক্ষা করেন। ঘণ্টা খানেক পরে সুনীতার ব্যথা বাড়ে। অভিযোগ, নার্সদের ডেকেও তিনি সাড়া পাননি। কিছু ক্ষণের মধ্যে গর্ভ থেকে তাঁর সন্তানের মাথা-সহ শরীরের কিছুটা বেরিয়ে আসে। ওই অবস্থায় ‘লেবার-রুম’-এর সামনে গিয়ে ফের নার্সদের ডাকেন সুনীতা। অন্য রোগিণীরাও এগিয়ে আসেন। কিন্তু চিকিৎসার পরিবর্তে নার্সরা এসে সুনীতাকে ধৈর্য ধরার ‘পরামর্শ’ দেন। অন্তত দু’ঘণ্টা ওই অবস্থায় কাটানোর পরে শনিবার ভোরে তিনি নার্সদের ‘সহযোগিতা’ পান। কিন্তু শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। সুনীতা দাবি করেন, পরিচর্যা না পেয়ে প্রসবের আগেই মৃত্যু হয় তাঁর সন্তানের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, প্রসবের ঘণ্টা খানেক পরে শিশুটি মারা যায়। সুনীতার স্বামী বিশ্বনাথ হাসপাতালের এক চিকিৎসক এবং চার জন নার্সের বিরুদ্ধে থানা এবং হাসপাতালের সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। রবিবার ঘটনার তদন্তে আসেন হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক উন্মেষ বসু।
স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে ঘটনার কথা শোনাচ্ছেন সুনীতা। ছবি: প্রকাশ পাল।
সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ হাসপাতালে এসে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অভিযুক্ত প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলেন। শ্যামাপদবাবুর আসার কথা জানতে পেরে স্বামী এবং আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে হাসপাতালে চলে আসেন সুনীতা। তাঁর কাছ থেকে সে দিনের যাবতীয় ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ শোনেন শ্যামাপদবাবু। সব শুনে দুঃখ প্রকাশও করেন। সুনীতা তাঁকে বলেন, “সবাই এখন দুঃখ প্রকাশ করছেন। কিন্তু তাতে কী আমার সন্তানকে ফিরে পাব? সে দিন শেষ পর্যন্ত আমার কথা শোনা হল। কিন্তু তত ক্ষণে রাত কেটে গিয়েছে।” শ্যামাপদবাবু ফের তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, “দেখতে হবে, এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে। সেই কারণেই আমি নিজে তদন্তে এসেছি।” সুনীতার পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে তিনি একটি লিখিত অভিযোগও চেয়ে নেন। সুনীতাকে যাতে তখনই হাসপাতালের শল্য চিকিৎসককে দেখানো হয়, সে ব্যাপারেও সুপার জয়ন্ত সান্যালকে নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় খরচ রোগী কল্যাণ সমিতির তহবিল থেকে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
সুনীতা পরে সাংবাদিকদের বলেন, “দোষীদের চাকরি থেকে সরিয়ে দিয়ে শাস্তি দেওয়া হোক।” একই সুরে তাঁর স্বামী বিশ্বনাথও বলেন, “বুকে পাথর চেপে ওইটুকু বাচ্চার আমরা ময়না-তদন্ত করিয়েছি।”
এ দিন ‘লেবার-রুম’-সহ হাসপাতালের সার্বিক পরিকাঠামো ও পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। হাসপাতালের আরও তিন স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞের বিরুদ্ধেও অভিযোগ শুনতে হয় তাঁকে। সব শেষে তিনি বলেন, “শিশুমৃত্যুর ঘটনাটি স্বাস্থ্য দফতর গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত সকলের সঙ্গেই কথা বললাম। তদন্ত চলছে। তাই খুব বেশি কথা বলা যাবে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.