রোগজীবাণুর পোয়াবারো
শীতের মুখ ঢেকে দিল ঘূর্ণাবর্তের মেঘ
শীতপ্রেমীদের আশ্বস্ত করে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা একটু একটু করে নামছিল অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকেই। আগাম ইনিংস শুরু করে আশা জাগিয়েছিল শীত। কিন্তু হঠাৎ বাদ সাধল এক ঘূর্ণাবর্ত!
কোথা থেকে এসে হাজির হল এক রাশ মেঘ। সেজেগুজে শীত যখন আসরে নামতে চলেছে, ঠিক তখনই তার মুখে নেমে এল সেই মেঘের পর্দা। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এক ধাক্কায় বেড়ে গেল তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের আমেজের দফারফা। ওই মেঘের আবরণ না-সরলে উত্তুরে হাওয়ার পথ খুলবে না বলে সোমবার জানিয়ে দিয়েছেন আবহবিদেরা।
এতে শীতপ্রেমীরা হতাশ তো হবেনই। তার থেকেও ভয়ের কথা, বেড়ে যেতে পারে জ্বরজ্বালা। মেঘের দাপটে এসে রোদের তীব্রতা কমে যাওয়ায় মশা এবং বিভিন্ন রোগজীবাণুর সক্রিয়তা আবার বাড়বে বলে পরজীবী-বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকেরা আশঙ্কা করছেন। তাঁরা বলছেন, তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে মশার বংশবৃদ্ধির হার কমছিল। বিভিন্ন রোগজীবাণুর সক্রিয়তা কমে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল। শীতের আগাম দাক্ষিণ্যে রোগব্যাধি কিছুটা অন্তত কমে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হচ্ছিল। কিন্তু তাপমাত্রা ফের বাড়ায় সেই সম্ভাবনা আর থাকল না। সাধারণ ভাবে মেঘলা আবহাওয়ায় মশার বংশবৃদ্ধির হার বাড়তে থাকে। হাওয়া হঠাৎ মর্জি বদলানোয় মশা বাড়বে এবং তার জেরে মশাবাহিত বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমণ বাড়বে বলে জানাচ্ছেন পরজীবী-বিশেষজ্ঞেরা।
অথচ অক্টোবরের শেষ সপ্তাহেই শীত যে-ভাবে দৌড় শুরু করছিল, তাতে ঠিক উল্টোটাই হওয়ার কথা ছিল। দক্ষিণবঙ্গের কোথাও কোথাও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে গিয়েছিল। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে ঘনঘন পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আসতে থাকায় সেখানেও তাপমাত্রা নামছিল নির্দিষ্ট ছন্দেই। বঙ্গোপসাগরের উপরে বায়ুপ্রবাহে কোনও নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্তের আশঙ্কা ছিল না। আবহবিদেরা তাই এ বার শীতের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী ছিলেন।
কিন্তু আশা জাগিয়েও প্রকৃতি ‘কথা’ রাখতে চাইছে না কেন? আবহবিদদের বক্তব্য, বায়ুপ্রবাহের হঠাৎ পরিবর্তনে বাংলাদেশ ও সন্নিহিত পশ্চিমবঙ্গের উপরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকে দক্ষিণবঙ্গে জলীয় বাষ্প নিয়ে আসছে সেই ঘূর্ণাবর্তই। তৈরি হয়েছে জমাট মেঘ। মেঘের ঘনত্ব বেশি থাকায় সূর্য ঢাকা পড়ছে। কোথাও কোথাও টিপটিপ করে বৃষ্টিও হয়েছে।
সূর্য মুখ না-দেখানোয় দিনের বেলায় একটা শীত-শীত ভাব থাকলেও রাতে অস্বস্তি বাড়ছে। ওই ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে সোমবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়ে উঠে গিয়েছে ২২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা চলতি সময়ের স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থেকে তিন ডিগ্রি বেশি। গত ১৫ দিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। তাই শীত-শীত ভাব অনুভূত হচ্ছিল।
আশাভঙ্গের এই মেঘ কবে সরবে? ফের তাপমাত্রা নামবে কবে? আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, ঘূর্ণাবর্তটি ঠিক কত দিন থাকবে, এই মুহূর্তে সেটা পরিষ্কার নয়। ঘূর্ণাবর্ত বিদায় না-নেওয়া পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের সর্বত্রই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এই সময়ের স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকবে। তত দিন শীত-শীত ভাবটা আর অনুভূত হবে না।
উত্তরবঙ্গের জন্য আশার কথা শুনিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। তাদের পূর্বাভাস, দক্ষিণবঙ্গে শীতের আমেজ আপাতত কিছুটা কমলেও উত্তরবঙ্গে, বিশেষত হিমালয় সংলগ্ন দার্জিলিং ও সিকিমে তাপমাত্রা নেমে শীতের আমেজ তৈরি হবে। গোকুলবাবু বলেন, হিমালয় সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা আরও কমে যাবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.