ফেল রদ নিয়ে আপত্তি খোদ কমিটি-কর্তারই
রাজ্যের নতুন সরকারের গড়া কমিটিই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ধাপে ধাপে পাশ-ফেল তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
আর এই ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে ‘নোট’ দিলেন সেই সরকারি কমিটির চেয়ারম্যানই!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের গড়া ওই কমিটির চেয়ারম্যান সুনন্দ সান্যাল। শিক্ষার ব্যপারে রাজ্যে এ-পর্যন্ত যত কমিশন বা কমিটি হয়েছে, তাদের কোনওটির ক্ষেত্রেই চেয়ারম্যান নিজে এ ভাবে আপত্তি জানাননি।
বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ার পরেও তাদের সুপারিশের জন্য অপেক্ষা না-করে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল ব্যবস্থা রদ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিয়েছে। সোমবার কমিটি অন্তর্বর্তী সুপারিশ পেশ করেছে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে। তাতে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সময় নিয়ে ধাপে ধাপে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ গত ২৭ অক্টোবর রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২০১৩ সালেই থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল ব্যবস্থা রদের সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে!
রাজ্যে প্রাথমিক স্তরে পাশ-ফেল ব্যবস্থা উঠে গিয়েছে বামফ্রন্টের আমলেই। শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করেন, এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে গোটা স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থার উপরে। বর্তমান সরকার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল তুলে দেওয়ার যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার ধাক্কা স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে উচ্চশিক্ষাতেও লাগবে।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ার পরেই সুনন্দবাবু আপত্তি জানিয়েছিলেন। এ দিন কমিটির অন্তর্বর্তী রিপোর্ট জমা পড়ার পরে তিনি বলেন, “এটা কী করে মেনে নেওয়া যায়! আমি ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ দিয়েছি।” সুনন্দবাবুর মতে, এই ব্যবস্থা চালু করা মানে পড়ুয়াদের দুধের বদলে পিটুলি গোলা খাওয়ানো। গত শুক্রবার জাতীয় শিক্ষা দিবস উপলক্ষে মহাজাতি সদনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানেও সুনন্দবাবু বলেছিলেন, “অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল তুলে দিলে পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত করা যাবে না।”
পাঠ্যক্রম কমিটি অবশ্য পাশ-ফেল ব্যবস্থা রদ করার পূর্বশর্ত হিসেবে পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা বলে বলেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১:৩৫-এ নিয়ে যেতে হবে। তার জন্য আরও ৫০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে ২০১৩ সালের মধ্যে। সেই সঙ্গে পরিকাঠামোরও উন্নতি ঘটানো দরকার। কমিটি মনে করে, পর্যাপ্ত স্কুল ও শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা না-করা পর্যন্ত পাশ-ফেল তুলে দেওয়া উচিত হবে না।
পাশ-ফেল তুলে দেওয়ার ব্যাপারে কমিটির ভিতরেই যে মতপার্থক্য ছিল, শিক্ষামন্ত্রী নিজেই এ দিন তা জানান। সরকারি সূত্রের খবর, সুনন্দবাবু তাঁর নোটে বলেছেন, ২০১৬ সালের মধ্যে রাজ্য সরকার কাঙ্ক্ষিত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারবে বলে তিনি মনে করছেন না। অশোক মিত্র কমিশনের সুপারিশ মেনে বামফ্রন্ট সরকার প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি পড়ানো বন্ধ করেছিল। সুনন্দবাবু সেই কমিশনেরও সদস্য ছিলেন। কমিশনের মতের বিপক্ষে গিয়ে তিনি ইংরেজি তোলার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে ‘নোট’ দিয়েছিলেন।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল ব্যবস্থা রদ করে অতিদুর্বল পড়ুয়াদেরও পরের ক্লাসে উঠিয়ে দিলে আখেরে তাদের এবং গোটা শিক্ষা ব্যবস্থারই ক্ষতি হবে বলে মনে করেন সুনন্দবাবু। এই ব্যাপারে শিক্ষক ও শিক্ষক সংগঠনগুলির মতামত জানতে কিছু দিন আগে পাঠ্যক্রম কমিটিই একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছিল। রাজ্যের শিক্ষক সংগঠনগুলির অধিকাংশই পাশ-ফেল ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে মত দেন। কিন্তু তাদের অভিমতকে গুরুত্ব না-দিয়ে পাশ-ফেল রদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রাজ্য সরকার।
নানা স্তরে এত আপত্তি সত্ত্বেও রাজ্য সরকার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল না-রাখার সিদ্ধান্ত নিল কেন?
শিক্ষামন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত জবাব, “কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী এটি করা হয়েছে।” পাঠ্যক্রম কমিটি অন্য যে-সব সুপারিশ করেছে, মন্ত্রিসভায় আলোচনা করে সেগুলির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ব্রাত্যবাবু।
দশ সুপারিশ
• ধাপে ধাপে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল রদ
• প্রথম থেকে পঞ্চমে বইয়ের সংখ্যা কমানো
• পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাড়ির কাজ না দেওয়া
• ইউনিট টেস্ট নেওয়া যাবে না
• ধারাবাহিক মূল্যায়ন চালু করা
• দু’টি পার্বিক ও একটি সামগ্রিক পরীক্ষা
• প্রাইভেট টিউশন বন্ধে ব্যবস্থা
• মাধ্যমিক পর্যন্ত গ্রেডের বদলে নম্বর
• দশম শ্রেণি পর্যন্ত তৃতীয় ভাষার পাঠ
• প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি ছ’বছরে



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.