ব্যক্তিগত জায়গা দখল করে রাস্তা চওড়া করায় আপত্তি জানিয়েছিলেন জমির মালিক। সেই ‘অপরাধে’ তাঁকে তৃণমূলের লোকজন হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। ভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন সোমনাথ মুখোপাধ্যায় নামে ওই সরকারি চাকুরে। তিনি লিখিত নালিশ জানিয়েছিলেন থানায়। ঘটনাটি গত ৩১ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও লিখে জানিয়েছেন। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করেছেন, গ্রামের লোক রাস্তা তৈরির দাবি জানিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু সোমনাথবাবুকে কোনও ভাবে হুমকি দেওয়া হয়নি। ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সোমনাথবাবুকে নির্ভয়ে বাড়ি ফিরতে বলা হয়েছে পুলিশের তরফে। যদিও সে সাহস পাচ্ছে না পরিবারটি।
ঘটনাটি গোঘাট ১ ব্লকের রাজগ্রামের। সোমনাথবাবুর জ্যাঠতুতো দাদা আরামবাগ মহকুমার প্রাক্তন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কেদারনাথ মুখোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, তাঁর ভাইয়ের কোনও রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তৃণমূলের গোঘাট ১ স্টিয়ারিং কমিটির নেতা জয়দেব চট্টোপাধ্যায়ের মদতে এক দল লোক হুমকি দিচ্ছে সোমনাথাবাবুকে। স্ত্রী ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে তিনি অন্যত্র থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। সোমনাথবাবু জানান, তাঁর পুকুর ও বাড়ির মাঝখান দিয়ে গ্রামের রাস্তাটি আগে জোর-জবরদস্তি করা হয়েছিল। সে সময়ে সোমনাথবাবুর প্রস্তাব ছিল, পুকুরের পশ্চিম পাড় দিয়ে রাস্তা যাক। ওই অংশের ৭৮ শতক জমিও ছেড়ে দিতে রাজি হন তিনি। সোমনাথের কথায়, “আগে সিপিএম এ ব্যাপারে কর্ণপাত করেনি। তৃণমূলের নেতৃত্বে রাস্তা এখন আরও চওড়া করে ইট পেতে পাকাপোক্ত করার কাজ চলছে। আমি বাধা দেওয়ায় গ্রামে সালিশি ডাকা হয়। কিন্তু সালিশি অসাংবিধানিক। সেপ্টেম্বর মাসে গ্রামে কয়েক বার সালিশি হয়েছিল। আমি তাতে যাইনি। এরপর আমার বাড়িতে কয়েক বার হামলা হয়। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে আমি অন্যত্র চলে আসতে বাধ্য হই।” সোমনাথবাবু এখন বাসা ভাড়া করেছেন গোঘাটেরই শ্রীপুর গ্রামে। গত ২৩ অক্টোবর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন বছর পঞ্চাশের সোমনাথ। কিন্তু অভিযুক্ত জয়দেব চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে তাঁর অভিযোগ।
অন্য দিকে, জয়দেববাবুর বক্তব্য, “রাস্তাটি প্রায় ৭০ বছরের পুরনো। তা বন্ধ করে পুকুর পাড় দিয়ে কেন করা হবে, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। তা ছাড়া, ওই জমি সোমনাথবাবুর পূর্বপুরুষেরা দিয়েছিলেন। রাস্তা ঘুরপথে হলে গ্রামের লোকের অসুবিধা। সে জন্য তাঁরা প্রতিবাদ করেছেন। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।” সোমনাথবাবুকে কোনও রকম হুমকি দেওয়া হয়নি বলেও তাঁর দাবি।
স্থানীয় রঘুবাটি পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের গুণধর মণ্ডল বলেন, “রাস্তাটি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে গোলমাল চলছে। গ্রামের মানুষের দাবি, রাস্তাটি জরুরি। আমরা কোনও ফয়সালা করতে পারিনি।” হুমকির অভিযোগ নিয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন। |