এ বার সংসদে দলের সদস্যসংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকখানি কমে যাওয়ায় রাজধানী দিল্লিতে ‘স্থানাভাবে’ ভুগছে সিপিএম। তার ধাক্কায় নিজেদের কাজ চালাতে শহরের কেন্দ্রস্থল ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে হচ্ছে দলের গণসংগঠনগুলিকে। এ বার লুটিয়েন দিল্লি থেকে সরে পশ্চিম দিল্লির নিউ রঞ্জিৎনগরে নিজেদের নতুন দফতরে চলে যাচ্ছে দলের মহিলা সংগঠন। খাস দিল্লিতে প্রচুর দাম, তাই শহরের প্রান্তে ওই এলাকায় ফ্ল্যাট কিনেছে তারা। কাল নতুন দফতরের উদ্বোধন। ওই ফ্ল্যাটেই সরে যাচ্ছে বামপন্থী বই প্রকাশনা সংস্থা লেফট ওয়ার্ড, জন নাট্য মঞ্চ এবং স্কুল শিক্ষক সংগঠনের অফিস। এর আগে দলের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই প্রায় দেড় কোটি টাকা দিয়ে করোল বাগে নিজস্ব অফিসের জায়গা কিনেছে।
২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বামেদের সাংসদ সংখ্যা ৬১ থেকে ২৪-এ নেমে যাওয়ায় ৩৬টি ফ্ল্যাট ও বাংলো ছেড়ে দিতে হয়েছিল। তার পরে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের ফলে রাজ্যসভাতেও সাংসদ সংখ্যা কমেছে। ফলে কমেছে বাংলো-ফ্ল্যাটের সংখ্যাও। বাধ্য হয়েই কাজ চালানোর জন্য নতুন জায়গা খুঁজতে হয়েছে গণসংগঠনগুলিকে।
লোকসভা বা রাজ্যসভার সাংসদদের ফ্ল্যাট বা বাংলোতেই মাথা গুঁজতে হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলের কাজে আসা সাধারণ কর্মীদের। কৃষক সভা, মহিলা সমিতি, এসএফআই-এর মতো গণসংগঠন বা লেফট ওয়ার্ড, পিপলস ডেমোক্র্যাসি, লোক লহরের প্রকাশনার কাজও চলত সাংসদদের বাংলো থেকেই। অনেক প্রাক্তন সাংসদকেও দলের কাজে দিল্লিতে থাকতে হয়। তাঁরাও বর্তমান সাংসদদের জন্য বরাদ্দ ভিপি হাউসের ফ্ল্যাটে ভাগাভাগি করে থাকেন।
লোকসভা নির্বাচনের পরেই স্থানাভাব দেখা দেওয়ায় সিপিএমের অনেক দলীয় কর্মীকে নিজের নিজের রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একই বাংলোয় একাধিক গণসংগঠনের অফিস খুলতে হয়। তখনই গণসংগঠনগুলি নিজেদের অফিসের ভাবনা শুরু করে। দলের সর্বক্ষণের সাধারণ কর্মীদের ‘কমিউন’ করে থাকার জন্য নতুন বাড়ি কেনার কথাও ভাবা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় নেত্রী সুধা সুন্দররামন বলেন, “নতুন অফিসের জন্য সব সদস্যকে এক টাকা করে দিতে বলা হয়। অন্য সংগঠনগুলিও ওখানে জায়গা নেওয়ায় সকলের চাপ কমেছে।” দলের এক পলিটব্যুরো সদস্য বলেন, “কোটি টাকায় অফিস কেনা হচ্ছে বলে এমন নয় যে, দলও কোটিপতি হয়ে গিয়েছে। চাঁদা তুলেই টাকা জোগাড় করতে হচ্ছে।”
কিছু দিন আগেই রাজ্যসভার মেয়াদ শেষ হওয়ায় নিজেদের জন্য বরাদ্দ করা ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে হয়েছে বৃন্দা কারাট ও মহম্মদ আমিনকে। বৃন্দার নামে ভিপি হাউসের তিনটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ ছিল। আমিনের নামে ছিল ফিরোজ শাহ রোডের বিরাট বাংলো। সবগুলোতেই দলের কর্মীরা ভাগাভাগি করে থাকতেন। আরএসপি-নেতা অবনী রায়ও রাজ্যসভা থেকে বিদায় নিয়েছেন। তিনিও বাংলো ছাড়ছেন। অবনীবাবুর আগে এই বাংলোতেই থাকতেন দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ত্রিদিব চৌধুরী। আরএসপি-র দলীয় ও গণসংগঠনগুলির কাজও চলত এই বাংলো থেকেই। অবনীবাবু বলেন, “গ্রামের বাড়িতে জিনিসপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। নির্দিষ্ট সময়েই বাংলো ছেড়ে দেব।” পুরনো দিল্লির চাঁদনি চকের বল্লিমারানে দলের একটি বহু পুরনো অফিস রয়েছে। এখন সেখান থেকেই দলীয় কাজকর্ম চলবে বলে জানিয়েছেন আরএসপি নেতৃত্ব। |