মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির দাবিতে বিচারাধীন বন্দিদের অনশন আন্দোলন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে কলকাতার জেলগুলিতে।
শুক্রবার এই অনশন শুরু করেছিলেন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের বন্দিরা। তাঁদের সমর্থনে রবিবার অনশনে বসেন প্রেসিডেন্সি জেলের ৩৫০ জন বিচারাধীন বন্দি। সোমবার সকাল থেকে আলিপুর মহিলা জেলের ৫০ জন বন্দিও অনশন শুরু করেছেন। জেল সূত্রের খবর, এঁদের কেউ বন্দি রয়েছেন দু’বছর ধরে। কেউ বা বন্দি ১০ বছর। দীর্ঘদিন কেটে যাওয়া সত্ত্বেও তাঁদের বিরুদ্ধে আনা মামলা শেষ হচ্ছে না বলে বন্দিদের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, হয় মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা হোক অথবা তাঁদের জামিন দেওয়া হোক।
টানা চার দিন অনশন চালিয়ে এর মধ্যেই আলিপুর জেলের ৩৫ জন বন্দি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩০ জনকে জেল হাসপাতাল, এক জনকে এম আর বাঙুর এবং চার বন্দিকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলে জানান জেলের সুপার চিত্তরঞ্জন ঘরাই। অনশনরত বন্দিদের সমর্থনে ওই জেলের সেলে আটক তেলুগু দীপক-সহ আট জন মাওবাদী বন্দি, এক জন কাশ্মীরি এবং এক জন পাকিস্তানি বন্দিও খাবার খাচ্ছেন না বলে চিত্তরঞ্জনবাবু জানিয়েছেন।
পরিস্থিতির সামাল দিতে আইজি (কারা) রণবীর কুমার এ দিন মহাকরণে আইন ও বিচার মন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। দুপুরে আলিপুরের জেলা ও দায়রা বিচারক এবং সরকারি আইনজীবী আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে গিয়ে অনশনরত বন্দিদের সঙ্গে কথাও বলেন। কিন্তু বন্দিরা অনশন তুলতে রাজি হননি। তাঁদের দাবি, আইন ও বিচার মন্ত্রীকে জেলে এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিতে হবে।
আইন ও বিচার মন্ত্রী মহাকরণে বলেন, “বন্দিদের দাবির বিষয়টি আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কিছুই করণীয় নেই।” তিনি জানান, কলকাতা হাইকোর্ট ছাড়া রাজ্যের প্রতিটি আদালতেই বিচারক নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁর দাবি, কোথাও বিচারকের পদ খালি রাখা হয়নি। বন্দিরা যখন চাইছেন, তখন জেলে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে তাঁর আপত্তি নেই বলে জানান মন্ত্রী। রাজ্যের কারা দফতর সূত্রের খবর, আজ, মঙ্গলবার আইন ও বিচার মন্ত্রী প্রথমে প্রেসিডেন্সি এবং পরে আলিপুর জেলে গিয়ে অনশনরত বন্দিদের সঙ্গে কথা বলে জট খোলার চেষ্টা করবেন। তাঁর সঙ্গে থাকবেন আইজি (কারা), অন্য কারাকর্তারাও।
এ দিকে, এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ প্রেসিডেন্সি
জেল থেকে দু’টি প্রিজন ভ্যানে ৩৭ জন বিচারাধীন বন্দিকে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা ভ্যান থেকে নামতে চাননি। পুলিশি সূত্রের খবর, জামিনের দাবিতে ওই বন্দিরা স্লোগান দিতে থাকেন। আদালতে ঢুকতে না-চাওয়ায় তাঁদের ফের জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। |