রাত ১২টা। ভি আই পি রোডের দু’পাশে পানশালাগুলির আলো একে একে নিভতে শুরু করল। মিনিট পনেরোর মধ্যেই নিয়ম মেনে বন্ধ হয়ে গেল সেগুলি। তেঘরিয়া এলাকার একটি পানশালা থেকে টলতে টলতে বেরিয়ে এলেন কিছু তরুণ-তরুণী। রাস্তার উপরেই শুরু হল আড্ডা, কথা-কাটাকাটিও। কয়েকটি গাড়ি, ট্যাক্সি, মোটরসাইকেল দাঁড় করানো রাস্তার উপরে। মাঝেমধ্যে বিমানবন্দরের দিক থেকে আসা কিছু গাড়ি থমকে কোনও মতে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। এলাকার একটি নার্সিংহোমের কয়েক জন কর্মী বাড়ি ফিরছিলেন। জায়গাটি পার হওয়ার সময়ে রীতিমতো সিঁটিয়ে গেলেন তাঁরা। অফিসের গাড়ি থেকে নেমে সেক্টর ফাইভের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত এক মহিলা দ্রুত গতিতে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন।
রাত ১টা ১০। পানশালার সামনে ‘ঠেক’ ভেঙে গেল। কয়েক জন তরুণ-তরুণী মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। মাথায় হেলমেট নেই কারও। একটি বাইকে তিন জন। পিছু নিয়ে দেখা গেল, তাঁদের গন্তব্য কিছুটা দূরেই, কৈখালির উল্টো দিকে ফুটপাথের একটি সিগারেটের স্টল। সেখানে হাজির আরও কয়েক জন বেসামাল যুবক-যুবতী।
ওই দোকানের পাশেই অন্ধকার গলি। সেখানে ‘কিছু একটা’ পাওয়া যাচ্ছে। নিঝুম রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে ওই গলিতেই মোটরসাইকেলের যাতায়াত শুরু হল। ভিতরে রাস্তার ধারে গজিয়ে ওঠা ঠেকে কোনও নেশার জিনিসই যে মিলছে, তা স্পষ্ট। রাস্তাতেই গোল করে দাঁড় করানো কয়েকটা মোটরবাইক, দুটো গাড়ি। প্রচণ্ড গতিতে হুশ করে ঢুকে পড়ল আরও একটি বাইক। পিছনের আসনে বসা তরুণীকে দেখে সোল্লাসে শুরু হল চিৎকার। টলতে-টলতে জনা কয়েক তরুণী হিন্দি-বাংলায় গালাগালি করছেন। চিৎকার করে কথা বলছেন। বোতলে চুমুক দিচ্ছেন আর এক জন। দোকানি বললেন, “প্রতি রাতেই এমন চলে।” |
নিশুত রাতে রাস্তার উপরেই মোটরবাইক থামিয়ে চলছে আড্ডা। |
প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ ভি আই পি রোডের দু’পাশে ১২টির মতো পানশালা। নিউ টাউন, লেকটাউন বা নাগেরবাজার এলাকায় প্রায় ২০টি। ‘কড়াকড়ি’র জন্য কৈখালি, তেঘরিয়া বা জোড়ামন্দিরের কাছে পানশালা সময়ে বন্ধ হলেও অস্থায়ী ঠেকের কোনও সময়সীমা নেই। বিমানবন্দরের এক নম্বর গেটের কাছেই দেখা মিলল পুলিশের একমাত্র টহলদার গাড়ির। গাড়ি দাঁড় করিয়ে পথে ঘুরছেন তিন পুলিশকর্মী। সুনসান পথে আর একটিও টহলদার গাড়ি দেখা যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পানশালাগুলি সময়ে বন্ধ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হচ্ছে না। রাস্তার উপরে নেশাগ্রস্তদের মারপিট, উদ্দাম মোটরবাইক সবই চলে। তেঘরিয়ার এক নার্সিংহোমের কর্মী জানান, কিছু দিন আগে তাঁদের এক নার্সের মোবাইল ছিনতাই হয় ভি আই পি রোডে। অভিযোগ, রাত বাড়লে ছিনতাই হয় মাঝেমধ্যেই। বাইকে চেপে মেয়েদের ওড়না ধরে টানার অভিযোগও রয়েছে। স্থানীয় নার্সিংহোমের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘বেশি রাতে রোগী এলে তাঁরাও এদের খপ্পরে পড়েন। সব অভিযোগ অবশ্য থানায় জমা পড়ে না।”
তেঘরিয়া, রঘুনাথপুর, কৈখালি এলাকায় তৈরি হয়েছে বেশ কিছু হোটেল, কল সেন্টার। এক কল সেন্টার কর্মী বলেন, ‘‘বন্দুক ঠেকিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। রাতে কাজে আসতে বেশ ভয় লাগে।’’ |
রাস্তার প্রায় মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে ট্যাক্সির সারি। ছবি: সুদীপ ঘোষ |
পুরো ভি আই পি রোড লেকটাউন, বাগুইআটি ও বিমানবন্দর থানার অধীনে। লেকটাউন থানার অধীনে বেশির ভাগ অংশই সুনসান। লেকটাউনের এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘ফুটব্রিজের উপরে সন্ধ্যার সময়েই মহিলাদের গলা থেকে হার ছিনতাই হয়। রাতে কোন ভরসায় ফুটব্রিজ দিয়ে হাঁটব বলুন তো?’’ বাগুইআটি থানার অংশে আবার চুরি-ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিয়ম ভাঙার সমস্যা।
উত্তর ২৪ পরগনার আবগারি দফতরের জেলা সুপার সমর স্বর্ণকার বলেন, “নির্দিষ্ট সময়ে পানশালা বন্ধ করতে মালিকদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। রাতে আমাদের নজরদারিও বেড়েছে। তবে বাইরে কিছু হলে তা তো পুলিশের ব্যাপার।” জেলার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “পুলিশের টহলদার গাড়ি তো ঘোরে। তবে রাস্তায় অভব্যতার অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ সব বরদাস্ত করা হবে না।”
|
নিরাপত্তার দাবিতে অবরোধ
নিজস্ব সংবাদদাতা |
রাতে পুলিশি টহলদারি বাড়ানোর দাবিতে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দমদম থানা এলাকার খলিশাকোটা মোড়ের কাছে প্রায় এক ঘণ্টা পথ অবরোধ করেন শ’দুয়েক মানুষ। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, ওই রাস্তায় রাতে কার্যত কোনও নিরাপত্তাই নেই। ফলে, একের পর এক সমাজবিরোধী কাজকর্ম ঘটে চলেছে। এমনকী, ওই রাস্তায় খুনের ঘটনাও ঘটছে মাঝেমধ্যেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এত কিছু সত্ত্বেও রাতে কোনও পুলিশি টহলদারি দেখা যায় না। তার উপরে এক্সপ্রেসওয়েতে আলো নেই, রাস্তার হালও খুব খারাপ। দমদম থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে রাতে টহলদারি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ ওঠে। |