|
আপনারটা আসল না ‘নখ’ল?
নখ নিয়ে আমরা খুব একটা ভাবনা-চিন্তা করি না।
কারণ, আমাদের কাছে এটি খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় নয়। ভুল ভাঙলেন
ডা. সুব্রত মালাকার |
|
|
নখ কেন সামনের দিকে বাড়ে? ওপরের দিকে নয় কেন? নখ সম্পর্কে নানা প্রশ্ন তুলে রীতিমত শোরগোল ফেলেছিলেন বিজ্ঞানী ক্লিগম্যান। তিনি আরও দেখলেন, মৃত্যুর পরও দু’-তিন দিন নখ বাড়তে থাকে। গবেষণার পর বুঝলেন ব্যাপারটা। আসলে মৃত্যুর পর নখের চার পাশের নরম অংশটি সংকোচনের ফলে এমনটা দেখায়। নখ তৈরি শুরু হয় একেবারে মাতৃজঠরে। মনে রাখবেন, চুল ও নখ ত্বকেরই একটা অংশ। |
নখ তৈরির কথা |
নখ তৈরি হয় নেল ম্যাট্রিক্স থেকে। এই ম্যাট্রিক্সটি নখের পেছনের ত্বকের নীচে থাকে। তৈরি হওয়ার পর নখ বেরিয়ে আসে পেছনের ওই ত্বকের নীচ দিয়ে। সম্পূর্ণ একটি নখ আঙুলের দূরতম প্রান্তে যেখানে শেষ হয়েছে, তাকে বলে সি-মার্জিন অব নেল। এই সি-মার্জিনটি দিয়ে আমরা চুলকানির কাজটি করি।
আঙুলের ওপরে নখের যতখানি দেখা যায়, তাকে বলে নেল প্লেট। নখের পেছনের ত্বক এই নেলপ্লেটে যেখানে এসে যুক্ত হয়েছে, সেখানে ত্বকটি পাতলা। ত্বকের এই অংশের নাম কিউটিকল।
অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশ হলেও এটি আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কোনও কারণে কিউটিকল নষ্ট হলে নখ ও নখ সংলগ্ন ত্বকের ভিতরে ফাঁক দেখা দিতে পারে যা দিয়ে শরীরে ঢুকতে পারে সংক্রমণ। |
নখ নিয়ে কিছু কথা |
অনেকের ধারণা, শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব থেকেই নখের যত সমস্যা হয়। এ জন্য অনেকে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে শুরু করেন। কিন্তু ধারণাটি একদম ভুল। আসলে নখে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ থাকে সামান্য এবং তা থাকে নখের উপরিভাগে। নখের বিন্যাস ও বৃদ্ধিতে প্রোটিনের ভূমিকা থাকে। যাকে বলে কেরাটিন।
সব আঙুলের নখের বৃদ্ধি সমান হয় না। বুড়ো ও কড়ে আঙুলের নখের বৃদ্ধি অন্যান্য আঙুলের নখের তুলনায় কম। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ডান হাতের নখ বাম হাতের তুলনায় তাড়াতাড়ি বাড়ে। মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের নখ বাড়ে তাড়াতাড়ি। গ্রীষ্মকালে নখ তাড়াতাড়ি বাড়ে। নখে রক্ত সঞ্চালনের ঘাটতি হলে নখ ভঙ্গুর হয়ে যায়। লম্বালম্বি ফাটে বা পাতলা হয়ে যায়। |
নখের বিভিন্ন অসুখ |
|
ধরুন, কোনও এক দিন সকালে একটু পরিবর্তন লক্ষ করলেন। যেমন নখের রংটি ঈষৎ হলুদ হয়েছে বা ডগার দিকটা কিছুটা ভেঙে গেছে। অথবা আড়াআড়ি ভাবে নখটি বসে যাচ্ছে, বা নখটি অনেকটা চামচের মতো লাগছে। এটা কিন্তু শুধুই নখের অসুখ নয়। শরীরের অন্য কোনও অসুখের প্রতিফলন। আবার ত্বকের কোনও অসুখের লক্ষণও নখে ফুটে ওঠে। |
নখের দাগ |
আমাদের শরীরে বিভিন্ন কারণে দাগ হয়। সেটা নিয়ে আমরা যেমন বিচলিত হই, সেই তুলনায় নখের দাগ
কী, এই ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন আমাদের কমই হতে হয়। কিন্তু অনেক সময় নখের ডগাটি ভেঙে ক্রমশ পেছনে সরে আসে বা ছোট হয়ে যায়। তখন নখের দাগের কথা মনে হয়। এই রোগ হলে নখের রঙের পরিবর্তন হতে পারে। |
নখকুনি |
এক রকমের ছত্রাকের আক্রমণে নখকুনি হয়। যাঁরা অনেক ক্ষণ জল ঘাঁটেন, তাঁদের এই রোগ হওয়া খুব স্বাভাবিক। এতে নখের গায়ে লেগে থাকা ত্বক ফুলে উঠে লাল হয়ে যায় বা ব্যথা হয়। যদি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ হয়, তবে নখের গায়ে লেগে থাকা ত্বকে পুঁজ বেরিয়ে আসে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই রোগটি সেরে যায়। কিন্তু জল ঘাঁটার প্রবণতা থাকলে এই রোগটি বার বার হবে। এ ক্ষেত্রে গ্লাভস পরে কাজ করা ভাল। এর চিকিৎসা হল, অ্যান্টিফাংগাল ওষুধ। |
পায়ের নখে ব্যথা |
নখ বেড়ে আঙুলের মাংস কেটে নীচের দিকে বেড়ে যায়। সাধারণত এটি পায়ের বুড়ো আঙুলের নখে দেখা যায়। যাঁরা আঁটোসাঁটো জুতো পরেন, তাঁদের এই রোগটি দেখা যায়। এটি সারাতে হলে, নখ ঠিকমত কাটতে হবে। নখের ধার তীক্ষ্ন না করে গোল করে কাটতে হবে। জুতো পরতে হবে মাপ মতো। এর চিকিৎসা দু’রকম শল্য চিকিৎসা এবং কেমিক্যাল পদ্ধতির প্রয়োগ। |
হাত ও পায়ের নখ নরম |
জন্মগত কারণে কারও নখ নরম হয়। শরীরে প্রোটিনের অভাবেও নখ নরম হয়। এ ছাড়া পটাশিয়াম বা সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড-এর সংস্পর্শে এলে নখ নরম হয়ে যায়। এ ধরনের নখে অল্পতেই খুব বেশি আঘাত লাগার প্রবণতা থাকে। |
নখ দেখে ডায়গনোসিস |
এটি চিকিৎসকদের কাছে খুবই গুরুত্বর্পূণ একটি বিষয়। নখের বিভিন্ন আকৃতি বা পরিবর্তন দেখে চিকিৎসকরা রোগ সম্বন্ধে ধারণা করতে পারেন। যেমন, অ্যানিমিয়া বা কিছু হার্টের অসুখ, ফুসফুসের ক্যানসার, থাইরয়েডের অসুখ ইত্যাদি।
|
নেল আর্ট-এর পর |
• সব সময় নরম মেডিকেটেড হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোবেন। খেয়াল রাখবেন,
নখ যেন কখনওই কড়া সাবান বা গরম জলের সংস্পর্শে না আসে। |
• নখের দু’পাশে ভাল করে ময়শ্চারাইজার লাগাবেন। তা বলে বার বার নয়।
দিনে এক বার। কী ময়শ্চারাইজার লাগাবেন তা শিল্পীর থেকে অবশ্যই জেনে নেবেন। |
• নেল আর্ট করানোর পর, একটি জেল লাগিয়ে দেওয়া হয়। তার
ওপর নিজে থেকে কখনওই কিছু লাগাতে যাবেন না।
|
• চামচ দিয়ে খাওয়া অভ্যাস করুন। নখে তেল, হলুদ, রান্নার মশলা যেন না লাগে।
|
প্রীতিকণা হাইত, মেহেন্দি ও নেল আর্টিস্ট |
|
যোগাযোগ: ২৩৫৮৮০১০, ৯৪৩৩০২৩৮৭৯
সাক্ষাৎকার: কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা |
|