|
|
|
|
|
মা ‘ফলেষু’ কদাচন
বাঙালি সত্যিই ফলের আশা করে না। ফল মানেই যেন অসুস্থ
অসুস্থ ব্যাপার। আদিমানবের ফাস্ট ফুড, খানদানি বাঙালির গর্ব।
ফলাহার স্পেশাল। অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় |
|
|
কে বলে বাঙালি ফলের আশা করে না? আম থেকে আতা, সিজন থেকে অফ সিজন, তার ফলাহারের রিজন অনেক। বোশেখ থেকে শুরু করে চৈত্র মাস পর্যন্ত ফলের ঝুড়ির লম্বা লাইন। কোনও ফলে ভিটামিন, কোনও ফলে মিনারেলস... গুণে তার নুন দিতে নেই (পেয়ারা বা কামরাঙাতে অবশ্য একটু নুন দিয়ে নেবেন, ভাল লাগবে!)
তবে বাস্তবে, ঠেলায় না পড়লে বাঙালি বিশুদ্ধ ফলাহার করে না। ফল মানেই, ‘শিগগির ভাল হয়ে ওঠো’ জাতীয় মেসেজ রাখে তার কাছে। আমার এক বন্ধু তো এক বার আর এক অসুস্থ বন্ধুকে দেখতে গেছিল এক ঝাড় আখ নিয়ে। অসুস্থ বন্ধুটি বিছানা ছেড়ে প্রায় উঠে পড়ে বলেছিল, এর চেয়ে চারটি কচি বাঁশ দিলেই পারতি! রসিকতা থাক। বি‘ফল’গামী বাঙালির কথায় ফিরে আসি। পুজোর প্রসাদে ফলের বারোয়ারি ব্যবহারও বাঙালিকে ফলবিমুখ করেছে। ফ্রুট স্যালাডের কৌলীন্যে উত্তরণ ঘটায়নি।
অলংকরণ: দেবাশীষ দেব |
বাঙালির ব্রেকফাস্টে লুচি,তরকারি আর ফ্রেশ ফ্রুট বাস্কেট পাশাপাশি রাখুন। দেখবেন, অবধারিত ভাবে সে লুচি তরকারির দিকে হাত বাড়াবে। অকাট্য যুক্তি তার, খামকা ফল খেতে যাব কেন, অসুস্থ নাকি? সেই যে ছোটবেলায় শিখেছিল, অ্যান অ্যাপল আ ডে, কিপস অল ডিজিজেস ফার অ্যাওয়ে, সারা জীবনের জন্য সেই বাণী মনে মনে গেঁথে গেছে তার। ভুলে যাওয়ার কোনও চান্স-ই নেই! অনেক অবাঙালি যখন ট্রেনে বা প্লেনে ফলাহার করেন, বাঙালি তখন মুচকি হাসে ও কষে ঝালমুড়ি বা সসেজ সাঁটায়। এ তো আমার নিজের চোখে দেখা!
কিন্তু, আপনিই বলুন, জন্মসূত্রে এমন প্যাকেজড ফুড আর কোথায়? কারও হাতের স্পর্শ ছাড়াই প্রকৃতির এই অবদান প্রকৃত-ই দুর্লভ। আজকের এই মোড়কসর্বস্ব পৃথিবীতে এ এক দারুণ ব্যাপার, তাই না? ভাবুন আদিমানবদের কথা। তাঁদের কাছে তো এটাই ছিল ফাস্ট ফুড, নিজেদের যার আবিষ্কর্তা ভেবে ফালতু শ্লাঘা বোধ করে থাকেন আমেরিকানরা। কলার কথাই ধরুন, এত নিখুঁত প্যাকেজিং অনেক পোড় খাওয়া প্রডাক্ট ডিজাইনারের মাথাতেও আসবে কি না সন্দেহ! অথবা নারকেল কিংবা কমলালেবু...ফিরিস্তি অনন্ত।
মালদা বা বারুইপুর কিন্তু এক দিনে বিখ্যাত হয়নি। যুগের পর যুগ, কাস্টমারের পর কাস্টমার মালদার ল্যাংড়া-হিমসাগর বা বারুইপুরের পেয়ারার কদর করে এসেছে। বাঙালি আগে বাড়িই করত না, উঠোনে একটি দামড়া নারকেল গাছ না থাকলে। আর বাগানবাড়ি হলে তো কথাই নেই, সে গৃহকর্তার ঘ্যামই আলাদা! তবে অভিজ্ঞতা বলে, সে ক্ষেত্রে মালিকের যতটা ফল পাহারায় নজর থাকে, আহারে তিনি ততটা আসক্ত নন। সে যাই হোক, মালদা-বারুইপুর নিয়ে কথা হচ্ছিল..... আমাদের হুগলি জেলাই বা কম কোন দিকে? সবুজে-সবুজ সব কলাবাগান। কোনও তুলনা নেই।
তবে, যত-ই রসিক হোক, বাঙালি তো নামেই লক্ষ্মীপুজো করে। তার আসল অনুরাগ একটু সরস্বতী পন্থায়। তাই মহারাষ্ট্র বা গোয়া আলফানসোকে যতটা ব্র্যান্ড ভ্যালু দিতে পেরেছে, আমরা বঙ্গসন্তানেরা কী করেছি রানিপসন্দ বা নবাবখাস আমের কল্যাণে? হুগলির কলাবাগানে আমাদের অযত্নেই তো গড়ে উঠেছে একের পর এক ইটভাটা! শুনছি, বারুইপুর বা মসলন্দপুরেরও একই দশা। তাই, শুরুর কথাটা বোধ হয় এ বার ফিরিয়ে নেওয়ার সময় এল, বাঙালি হয়তো সত্যিই আজ আর ফলের আশা করে না! |
|
|
|
|
|