|
|
|
|
|
হ্যাট্স অফ ব্রাদার |
পাড়ার পিকনিক বা অভিজাত রোমান হলিডে, মানাত জম্পেশ।
ইকোয়েডর’এ জন্ম, নাম পানামা হ্যাট। ফ্যাশন ফ্ল্যাশব্যাক। অনুরাগ রশিদ |
স্ট্র ’দিয়ে বোনা চমৎকার সব টুপি, সারি সারি...মানেই পিকনিকের রোদ্দুর, শীতের ইডেন, অভিজাত রোমান হলিডে। সেই স্ট্র-এর ফাঁক দিয়ে মুখে-ঠোঁটে খেলে বেড়ায় আলোর খুচরোখাচরা, আর অন্তর ভাবে ‘দিব্যি তো যাচ্ছে জীবনটা, যাক না যে দিকে যেতে চায়...’ রোদ পড়ে গেলে, ঠিক আবার ঘরে ফিরে আসবে। তার পর তো গাড়িতে উঠতে গিয়ে মাথা নামাতেই হয়, আর তখনই হাত পড়ে টুপিতে। আলতো করে খুলে আসে সে, ভাঁজ হয়ে ফেরে বাড়ি, আর ঝুলে থাকে দেওয়ালের পেরেকে।
ওই, ওইটেই হল ঝঞ্ঝাট, ভাঁজ হয়েছ কী গেছ। রাস্তাঘাট যে বেধড়ক নির্মম, বলে দিতে হয়? এ বেচারির ক্রাইসিস, ওই রাস্তায় বেরনোর পর থেকেই। জন্ম ইকোয়েডর-এ। তা হলে নামে পানামা কেন? ওই যে বললাম, ভাঁজ হয়েছ কী গেছ! কোয়েঙ্কা, মন্টেক্রিস্টি বা হিপিহাপা-র মতো ছোট শহরগুলোয় যান, দেখবেন বাজারহাটে মহিলারা এমন সব স্ট্র-হ্যাট পরে চেরি বিক্রি করছেন। ওই একই স্ট্র হ্যাট আবার দেখগে যান, কোনও হলিউড তারকার মাথায়ও। যেখানে ইকোয়েডরকে মাথায় তুলে নাচা উচিত, সেখানে তারা কোনও পাত্তাই পেল না। একেবারে দেহাতি মুখচোরা ছেলের বাইরের জগতে পা দিয়েই গোল খাওয়ার গল্প।
পানামা খাল তৈরি চলছে তখন। বহু লোক জুটেছেন মহাযজ্ঞে, ইকোয়েডর থেকেও অনেকে। ওঁরা রোদ্দুর আড়াল করলেন, মা-মাসির হাতে তৈরি স্ট্র হ্যাট দিয়ে, যা অভ্যাস আর কী। সেই সময় ক্যালিফর্নিয়ায়-ও শুরু হয়েছে গোল্ড রাশ। তাই হাজার হাজার মানুষ সোনায় হাত ছোঁয়াতে পার হচ্ছে পানামা। আসতে যেতে, ও টুপি মনে ধরল অনেকের। আর সেখানেই হাতছাড়া হয়ে গেল ইকোয়েডর-এর যাবতীয় শৌর্য। বন্ধু বন্ধুকে প্রশ্ন করল, কী রে কোথায় পেলি টুপিটা? উত্তর, পানামা। মেড ইন ইকোয়েডর লেবেলটাই যা শাঁটা হয়নি, আক্ষেপ। খাল নির্মাণের ছবি এমনিতেই বেশ হইহই করে ছাপছিল বিদেশি মিডিয়া, এ বার তারা ভাবতে বসল, সবার মাথায় যে টুপি রয়েছে, তাকে কী নামে ডাকা যায়। আরে, পানামায় কাজ হচ্ছে যখন, পানামা হ্যাট বললেই হয়। এর পর নির্মাণকাজ দেখতে গিয়ে যে দিন প্রেসিডেন্ট থিয়োডর রুজভেল্ট এই হ্যাট পরলেন, আর দেখে কে! ইকোয়েডর-এর মানুষ তাকিয়েছিলেন নিশ্চয়ই, মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেননি। অতএব যাও পিছনের বেঞ্চে, যাও...
ও দেশের মানুষ যে এটিকে কখনওই পানামা হ্যাট বলবেন না, জানা। তাঁরা এটিকে বলেন সম্ব্রেরোস দে পাহা তোকিয়া। মানে তোকিয়া গাছের স্ট্র দিয়ে তৈরি টুপি। বলা হয়, যে টুপিতে যত বেশি বুনোন, সে টুপি তত দমদার। আর সুপারফিনো (উৎকৃষ্ট মানের টুপি) যদি কেনেন, তা হলে তো কথাই নেই। টুপি উল্টো করে জল ঢেলে দিন, এক ফোঁটা গলবে না, আর ভাঁজ করে নিলে বিয়ের আংটির মধ্যে দিয়েও গলে যাবে।
আসল পানামা হ্যাট এখন আর প্রায় পাবেনই না। যাঁরা এই সব বানাতেন, তাঁরা হয় গত হয়েছেন, নয় রোজগারের অন্য পন্থা বেছে নিয়েছেন। লর্ডস-এর মাঠে গুটি কয়েক ঐতিহ্য আঁকড়ে থাকা ‘জেন্টলম্যান’ আর কিছু পিরিয়ড পিস-এ ব্যবহারের জন্যে কে আর বসে বসে সুপারফিনো বানাবে? তবে এর রমরমা সময়ে ক্যালিফর্নিয়া টু কলকাতা, পানামা পরে ঘুরে বেরিয়েছে। আসলে এক রকম আলগা ইয়োরোপিয়ানা আনার সেরা ও চটজলদি উপায় ছিল এই পানামা হ্যাট। সবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যায়, অনায়াসেই। স্কার্ট, শাড়ি-স্লিভলেস, উচ্চবিত্ত গাউন, বুশ শার্ট, মধ্যবিত্ত খালি গা, এনিথিং এভরিথিং। শুধু সময়ের সঙ্গেই যা... |
|
|
|
|
|